কবিতা থেকে শুরু করে গল্প, নাটক কিংবা সিনেমা – সব জায়গায় নারীর কেশ বা চুলের গুরুত্ব সব সময়ই লক্ষণীয়। নানান ঢঙে, নানান কাটিঙে নারী চুলের বাহার দিয়ে জয় করে নিয়েছে সারা বিশ্ব সে বহুকাল আগে থেকে। আর তাই চুলের সব কথা নিয়েই আজ আমাদের এই ফিচার।
কেমন হয় চুলের কাটিং? চুলের কাটিঙের কেমন ধরন ই বা ছিলো আজ থেকে ৩০/৪০ বছর আগে? কোথায় কি ভাবে চুল বাঁধা উচিৎ? এমন সব প্রশ্নের উত্তর আর অল্প কিছু টিপস নিয়েই সাজানো আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন তবে ভ্রমন করা যাক কেশ বিন্যাসের রাজ্যে।
কেমন ছিলো চুলের ধরন সেকালে:
ষাট-সত্তরের দশকে নারীদের চুলের ধরনে জনপ্রিয় ছিলো গোল করে ঘাড় অবদি কাটা আর বেশ খানিকটা ফোলানো। চুলে খানিকতা ঢেউ ঢেউ ভাব আনা ছিলোত খনকার স্টাইল।
ষাট-সত্তরের দশকে নারীদের চুলের ধরনে জনপ্রিয় ছিলো গোল করে ঘাড় অবদি কাটা আর বেশ খানিকটা ফোলানো। চুলে খানিকতা ঢেউ ঢেউ ভাব আনা ছিলোত খনকার স্টাইল।
আশির দশকে কপালের দিকে ছড়িয়ে দেয়া চুল মানে বব কাট টা বেশ ভালোই জমেছিলো।
নব্বইয়ের দশকের চুলের দৈর্ঘ্য বেড়ে পিঠ অবদি নেমেছিলো মানে মাঝারো চুল তখন সবার নজর কাড়তো।
বাঙালি নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্য সবসময়ই লম্বা চুলের আকর্ষণ বহাল আছে। ষাট থেকে নব্বইয়ের মাঝে তো তা আরো বেশিই ছিলো বলা চলে। তখন বিয়ের সময়ও লম্বা চুলের মেয়েদের চাহিদা ছিলো বেশ। দীঘল কালো চুল যে কোন পুরুষের মন জয় করে নিত সহজে।
চুলের সাজে সেকাল:
তখন চুলের সাজ বলতে ছিলো সাধারন বেনী আর উঁচু করে করা ফোলানো খোঁপা। খোঁপাকে ঘিরেই তাই ছিলো চুলের সাজসজ্জা। খোঁপায় রুপার কাঁটা, বা সুন্দর নকশা করা খোপা সজ্জা ছিলো নারীর পছন্দের তালিকার শীর্ষে। কানের পাশে বুনো ফুল গুজে দেওয়া সাজে এনে দিত অন্য রকম মাত্রা।
কিশোরী মেয়েরা দুই বেনী করে করে তাতে রঙ্গিন ফিতে জড়াতে ভালোবাসতো বেশ। ছোট চুলের জন্য চিকন ববি পিন ই ছিলো যথেষ্ট।
যেমন চলছে একালে চুলের ধরন:
সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দ, চাহিদা সব কিছুই বদলে গেছে। কালো চুলের যায়গা এখন দখল করে নিয়েছে কালোর পাশাপাশি সোনালী, লালচে, লালচে বেগুনি, কফি রঙের চুল। মেকি রঙে চুল রাঙানো এখন চুলের ধরনের ট্রেন্ডই বলা চলে।
সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দ, চাহিদা সব কিছুই বদলে গেছে। কালো চুলের যায়গা এখন দখল করে নিয়েছে কালোর পাশাপাশি সোনালী, লালচে, লালচে বেগুনি, কফি রঙের চুল। মেকি রঙে চুল রাঙানো এখন চুলের ধরনের ট্রেন্ডই বলা চলে।
সোজাসাপ্টা কাটার ধরন এখন আর নেই। ভলিউম লেয়ার, স্লাইস লেয়ার, ইমো কাট, ব্যাংস কাট এমন আরো অনেক বাহারী কাটের ধরন চলছে একালের চুলের কাটে। কেউবা আবার দুই তিন ধরন মিলিয়ে সাজাচ্ছেন নিজের কেশগুচ্ছকে।
কোকড়া চুল এখন পুরপুরি সোজা হয়ে যাচ্ছে রিবন্ডিং এর বদৌলতে আবার সোজা চুলে অধিকারীরা শখ করে চুল বাকিয়ে নিচ্ছেন কার্লার মেশিন দিয়ে।
মূল কথা, যার যেমন টা ইচ্ছে তেমনটা ই চলছে এখনকার চুলের ধরনে।
চুলের সাজে একাল:
ধরনে যেমন ভিন্নতা এসেছি ঠিক তেমনি সাজেও এসেছে ভিন্নতা। কেউ বা চুলকে পুরোপুরি এলোমেলো করে খোলা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন আবার কেউবা সেকালের মতই খোঁপায় আটকে আছেন। নানা ধরনের পুতি বা পাথরের কাজ করা ববিপিন, কাটা, ক্লিপ ইত্যাদি দিয়ে চুল সাজাতে ভালোবাসে এখন সবাই। বেনীতে এসেছে ভিন্নতা। নানা ঢঙে বেনী করে চুল সাজান এ যুগের তরুণীরা। উঁচু খোপা ছাড়াও এখন নীচু খোপা, ঘাড়ের এক পাশে চুল এনে খোপা করা এসবও এখন চলছে বেশ। পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে ক্লিপ বা ব্যান্ড ব্যাবহার করতে পছন্দ করে প্রায় সবাই।
কখন, কোথায়, কেমন চুলের সাজ?
নিজের ইচ্ছেমত চুল বাঁধা বা সাজানো যদিও এখনকার চল তবুও কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হয়। নতুবা সামান্য এই চুলের সাজের জন্যই আপনাকে পড়তে হতে পারে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
- অফিস বা ফরমাল কোন কাজে যাচ্ছেন? চুলগুলোকে আঁটসাঁট ভাবে বেধে রাখতে চেষ্টা করুন। কপালে চুল না ছড়িয়ে ছোট ববি পিন দিয়ে কানের পাশে আটকে রাখুন।
- চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে হয়ত। যেন চুলের ঘনত্বটা বেশ কমে গেছে। মাঝে সিঁতি না করে পাশে সিঁতি করুন।
- বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরুলে ইচ্ছেমত চুল বাঁধতে পারেন বা ইচ্ছে হলে ছেড়েও রাখতে পারেন।
- বিয়ে, ঈদ বা অন্য কোন উৎসবে চুলের সাজে খানিকটা ভিন্নতা আনুন। খোঁপা করলে এক পাশে পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে ফুল গুঁজে দিন। ভালো লাগবে।
- দূরের কোথাও ভ্রমনে যাচ্ছেন? চুল খোলা না রেখে বেঁধে রাখুন। দূষণ থেকে মুক্তি পাবেন।
- গরমের সময় চুল যতটা সম্ভব বেঁধে রাখতে চেষ্টা করবেন। শীতের সময় রুক্ষতা বেশি থাকে। সেদিকটায়ও খেয়াল রাখা চাই।
সব সময়ে আবেদনের শীর্ষে ঘন কালো লম্বা চুল:
ধরনে বা রঙে যতই ভিন্নতা আসুক না কেন একগুচ্ছ লম্বা কালো চুল সব সময়ই আবেদনের শীর্ষে অবস্থান করে আছে। আর তাইতো সব নারীই চায় একগুচ্ছ লম্বা কালো কেশের অধিকারিণী হতে। পুরুষও চায় সমধর্মিনীর থাকুক দীঘল কেশ।
কি করে পেতে পারেন এক গুচ্ছ কালো লম্বা চুল?
- সমপরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল মেশান। এই মিশ্রন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন চুলের ত্বক থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত ভালো করে দিন।
- দুইদিন পর পর ভালো করে চুলে শ্যম্পু করুন। ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর চুলে টক দই দিতে পারেন। আস্তে আস্তে চুলের ঘনত্ব ও দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাবে।
চুল যেমনই হোক আর যতটুকুই হোক, চুলের যত্নে সচেতন হওয়া উচিত সবার। ধন্যবাদ কেশ রাজ্যে ভ্রমনের জন্য। এবার তবে শুরু করুন চুলের যত্ন আর সবার কাছে হয়ে উঠুন আকর্ষণীয়।