আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী (২০১৯) শিক্ষাবর্ষের জন্য সরকারি মাধ্যমিক স্কুল এবং সংযুক্ত প্রাথমিক শাখায় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামীকাল থেকে। এবার সারা দেশে একযোগে সরকারি হাইস্কুলে ও সংযুক্ত প্রাথমিক শাখায় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ১৭ ডিসেম্বর। শেষ হবে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে। লিখিত পরীক্ষা হবে ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর। প্রথম শ্রেণীতে লটারি হবে ২০ ডিসেম্বর। ওই দিন বিকেলেই লটারির ফল প্রকাশ হবে স্ব স্ব স্কুলের ওয়েবসাইট ও নোটিশ বোর্ডে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান গতকাল নয়া দিগন্তকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় রেখেই পরীক্ষা ও লটারিতে শিক্ষার্থী বাছাই শেষে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান জানান, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় একটি মাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছেÑ দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে কলম বা বল পয়েন্ট নিয়ে উত্তরপত্রে লিখতে হবে। কোনো ধরনের পেন্সিল নেয়া যাবে না। পেন্সিল ব্যবহার করা হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তিনি জানান, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর পর এবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পরিচালক মাধ্যমিক অধ্যাপক মান্নান আরো জানান, সারা দেশের চার শতাধিক সরকারি হাই স্কুলে আবেদন জমা পড়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪২টি। রাজধানীর ৪১টি সরকারি হাই স্কুলে ৮৫ হাজার ৭৮৫ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। এসব স্কুলে মোট আসন হচ্ছে ১২ হাজার ৩৬৬টি। রাজধানীর ৪১টি হাই স্কুলের মধ্যে ১৭টিতে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখায় প্রথম শ্রেণীতে শিশু ভর্তি করা হবে। এ স্কুলে ১ হাজার ৯৬০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছে ২২ হাজার ১৭৯ জন শিশু শিক্ষার্থী।
ভর্তি আবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর ৪১টি মাধ্যমিক স্কুলে আসন সংখ্যা হচ্ছে ১২ হাজার ৩৬৬টি। আবেদন করেছে ৮৫ হাজার ৭৮৫ শিক্ষার্থী। এতে আসনপ্রতি সাতজন ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ওই ৪১টি মাধমিক স্কুলের ১৭টিতে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখা রয়েছে। এ ১৭টির প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির যোগ্য আসন হচ্ছে ১ হাজার ৯৬০টি। আবেদন করেছে ২২ হাজার ১৭৯ জন। প্রতি আসনের বিপরীতে ১২ ুদে শিক্ষার্থী লটারিতে লড়বে। উল্লেখ্য, ১-১৩ ডিসেম্বর এসব প্রতিষ্ঠানে অন-লাইনে আবেদন কার্যক্রম শেষ হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে অন্যান্য বছরের মতোই তিন গ্রæপে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রæপে ১৪টি করে এবং ‘গ’ গ্রæপে ১৩টি হাই স্কুল আছে। পর্যায়ক্রমে তিন গ্রæপের পরীক্ষা হবে যথাক্রমে ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর। এর মধ্যে ৩৮টি হাই স্কুলে ১২ হাজার ৩৬৬টি আসন আছে। এর মধ্যে ১৭ হাই স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ১ হাজার ৯৬০টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৮৪৯টি, তৃতীয় শ্রেণীতে ২ হাজার ১২৬টি, চতুর্থ শ্রেণীতে ৮২২টি, পঞ্চম শ্রেণীতে ৮৪৯টি, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ৩ হাজার ৫৫৭টি, সপ্তম শ্রেণীতে ৭৩৮টি, অষ্টম শ্রেণীতে ৯৯৭টি।
রাজধানীতে নতুন তিনটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম এবার থেকে শুরু হলেও এগুলোর আসন সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। স্কুল তিনটি হচ্ছেÑ হাজী এম এ গফুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সবুজবাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং শহীদ মনু মিঞা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর সরকারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে পাশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা সংরক্ষণ করার নির্দেশনাসহ এবার স্কুলগুলোতে ১০৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ৬০ শতাংশ উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় মেধা তালিকা অনুসারে ভর্তি করাতে হবে। প্রথম শ্রেণীর ভর্তিতে শিক্ষার্থীর বয়স জানুয়ারি ’১৯-এ ছয় বছরের বেশি হতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করার পাশাপাশি শূন্য আসনের সমানসংখ্যক অপেক্ষমাণ তালিকাও প্রস্তুত রাখতে হবে। ভর্তি কমিটি নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তি করতে হবে। দ্বিতীয়-অষ্টম শ্রেণীর শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে। নবম শ্রেণীতে ভর্তি করতে হবে জেএসসিজেডিসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। এতে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তৃক প্রস্তুত করা মেধাক্রম অনুসারে নিজ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পর অবশিষ্ট শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে।
ভর্তি পরীক্ষার মান বণ্টন দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণমান-৫০, এর মধ্যে বাংলা-১৫, ইংরেজি-১৫, গণিত-২০ নম্বর। ভর্তি পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা। চতুর্থ-অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণমান-১০০। এতে বাংলা-৩০, ইংরেজি-৩০, গণিত-৪০ নম্বর থাকবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ২ ঘণ্টা।