বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার নির্বাচনী প্রচারণায় মুখর গোটা নড়াইল জেলা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
মাশরাফির জন্য নড়াইলে চলছে ব্যতিক্রম নির্বাচনী প্রচারণা। ব্যক্তি কিংবা সংগঠন স্ব-উদ্যোগে নিজ খরচে প্রচারণার জন্য মাঠে নেমেছেন। মাশরাফিকে দলমত নির্বিশেষে সবাই অতি আপন মনে করে তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
দলীয় উদ্যোগ বাদে বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনও মাশরাফিকে জয়ী করতে একাট্টা হয়েছে। মাশরাফি নির্বাচন করছেন বলে সব শ্রেণীপেশার মানুষ নিজ খরচে নির্বাচনী সামগ্রী তৈরিসহ প্রচারণার জন্য অর্থ ব্যয় করে চলেছেন।
নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনস্থ ৬৮টি স্পোর্টস ক্লাবের কর্মকর্তারা নিজ খরচে বিভিন্ন এলাকায় মাশরাফির পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাশরাফিকে নৌকা মার্কার মনোনয়ন দিয়ে যেমনি নড়াইলকে সম্মান দিয়েছেন তেমনি ক্রীড়াঙ্গনকেও সম্মানিত করেছেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে যতগুলো স্পোর্টস ক্লাব আছে সব ক্লাবকে দলমত নির্বিশেষে মাশরাফিকে বিজয়ী করার জন্য সবধরনের সহযোগিতা করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সকল ক্লাবের সদস্যরা নিজ খরচে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
ক্রীড়াঙ্গনের পাশাপাশি অন্য পেশার লোকজনও মাশরাফির নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নড়াইল শহর কাঁচা বাজারের ছোট্ট পরিসরের হোটেল খান জাহান আলীর স্বত্বাাধকারী ইসহাক হোসেন বলেন, সকালে হোটেলের বেচা-কেনা শেষে মাশরাফির প্রচারণার জন্য নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন। দোকানের তিনজন কর্মচারী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মাশরাফির নির্বাচনী প্রচারণায়। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নৌকার কাঠামো বানিয়ে তাতে সেলাই করে লাল-সবুজ কাপড় বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। মাশরাফির ভক্ত এ ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী জানান, আমাদের গর্ব মাশরাফি নৌকা মার্কা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এমন সুযোগ আর পাবো না, ব্যবসা-টাকা এগুলো বেঁচে থাকলে পরেও পাওয়া যাবে।
ইসহাকের মতো সবজি বিক্রেতা মোবারক, মুদি দোকানি সাঈদ, কসমেটিক বিক্রেতা মিশন ব্যবসা কমিয়ে এখন শুধুই মাশরাফির জন্য ভোটের মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান।
শহরের মহিষখোলা কাঁচাবাজারের আরেক ফল বিক্রেতা মন্নু মোল্যা জানান, তিনি ব্যবসার কাজে সময় কম দিয়ে সারদিন মাশরাফির লিফলেট বিলি করছেন পাড়ায়-মহল্লায় আর বাসস্ট্যান্ডে। মাশরাফি মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে বাইরের কাউকে দেখলেই ভোট চেয়ে একটি করে ফল খাওয়াচ্ছেন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
জেলা ইজিবাইক শ্রমিক সমিতির সভাপতি লায়েব আলী একটি মোটর সাইকেলে নিজ খরচে নৌকা মার্কা স্থাপন করে তাতে লাইট জ্বালিয়ে সারাদিন সংসদীয় এলাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে এই আসনে মাশরাফি ছাড়াও ২০ দলীয় জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ জেড এম ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির (এরশাদ) জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ (লাঙ্গল), এনপিপির (ছালু) জেলা সভাপতি মনিরুল ইসলাম (আম), ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম নাসির উদ্দীন (হাতপাখা), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান (মিনার) এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (রব) প্রার্থী ফকির শওকত আলী তারা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার রাজু আহমেদ জানান, নড়াইল-২ আসন নড়াইল পৌরসভা, সদর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া পৌরসভা ও লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৭ হাজার ৭৮২ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৭ হাজার ১০৫ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৬৭৭ জন।