চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই হিসেবে আর আছে মাত্র ৪৩ দিন। কিন্তু এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলছে সৌদি আরবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন হজ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে বিবেচনা করছে সৌদি সরকার। তবে এখনও তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি বাংলাদেশকে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের হজযাত্রী এবার যেতে পারবে কিনা তা সৌদি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। গেলেও কত শতাংশ যেতে পারবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। এদিকে হাতে সময়ও কম। ১৫ জুনের পরে সৌদি সরকার থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার কথা। কিন্তু এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে বাংলাদেশ সরকারও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তারাও আছে বেকায়দায়। নিবন্ধিত হজযাত্রীদেরও তারা চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় বাংলাদেশের ৬৫ হাজার ৫১২ হজযাত্রী এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এরইমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকে শেখ মো. আব্দুল্লাহ। তার মৃত্যুতে হজের বিষয়টি নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
রয়টার্সের সূত্র মতে সৌদি আরবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতিতে হজ বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করছে সৌদি সরকার। যদি কোন কারণে বাতিল নাও হয়, তাহলে এই পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হবে। সীমিত হজের অনুমতি দেওয়া হলেও একেবারে শেষ সময়ে এসে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে হজাযাত্রী পাঠানো কঠিন হবে। করোনা পরিস্থিতিতে শুধু হজের অনুমতি পেলেই হবে না, বাংলাদেশের প্রস্তুতিরও একটা ব্যাপার আছে। তারা যদি অনুমতিও দেয়, এক্ষেত্রে হজ ফ্লাইট, শর্ত মেনে সৌদি আরবে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
এ বিষয়ে বুধবার রাতে ধর্মসচিব মো. নূরুল ইসলাম জানান, আমরা সৌদি সরকারের কাছ থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। তাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি।
সৌদি সরকার হজ বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করছে- আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সের এমন সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, সৌদি সরকার কী সিদ্ধান্ত দেয়, তা দেখে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। অনেক দেশ ইতিমধ্যে হজযাত্রা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনই আগেভাগে সেটা করছি না।
‘‘বাতিল না করে সীমিত পরিসরে হজের সিদ্ধান্ত হলে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে-জানিয়ে ধর্মসচিব বলেন, আমাদেরও প্রস্তুতির বিষয় আছে। করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে হজযাত্রার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। হজযাত্রী পরিবহনে বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি দরকার। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা রয়েছে। তারপরেই হজের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
এদিকে হজ অনুষ্ঠানে সৌদি সিদ্ধান্ত না আসায় চূড়ান্ত নিবন্ধন করা ৬৫ হাজার ৫১২ হজযাত্রী হজযাত্রী রয়েছেন গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়। হজের বাকীও বেশি দিন নেই। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে তাদের মধ্যে শঙ্কা। এসময়ে হজের অনুমতি হলে তড়িঘড়ি করে আদৌ তারা হজে যেতে পারবেন কিনা সংশয়ে রয়েছেন। টেনশনে আছেন হজ এজেন্সি মালিকরাও। হজ বাতিল হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
এবিষয়ে বাংলাদেশ হজযাত্রী কল্যান পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, হজযাত্রী কেন আমরা এজেন্সি মালিকরাও তো উদ্বিগ্ন আছি। হাতে আমাদের সময়ও খুব কম। অথচ আমরা এখনও কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। ভাল-মন্দ যে কোন একটা সিদ্ধান্ত আসা তো দরকার। হজ বাতিল হলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও জানান তিনি।
হজের সর্বশেষ প্রস্তুতি জানতে চাইলে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন, আমরা প্রস্তুত থাকলে কী হবে, হজের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
তবে করোনা সংক্রমণের কারণে শেষ পর্যন্ত হজ বাতিল হতে পারে এমন আশঙ্কা হাব নেতাদের।
তারা বলেন, যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত হজ বাতিল করা হতে পারে। আর সীমিত পরিসরে যদি অনুমতিও পায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার হজযাত্রী পাঠাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে হজ বাতিল হলে কিংবা বাংলাদেশ সরকার হজযাত্রী পাঠাতে না পারলে হজযাত্রীদের টাকা ফেরত দেবে ধর্মমন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আগ থেকেই হজযাত্রীদের শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। টাকা ফেরতের ব্যাপারে প্রতারিত হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। শুধু তাই নয় হজযাত্রীদের কেউ পরের বছর যেতে চাইলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেই সুযোগও রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্মসচিব মো. নূরুল ইসলাম জানান, যেতে না পারলে হজযাত্রীরা টাকা ফেরত পাবেন। যদি কেউ পরের বছর যেতে চান, তাও করতে পারবেন। টাকা নিয়ে হয়রানি কিংবা প্রতারণার কোন সুযোগ নেই। এ কারণে হজযাত্রীদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার হজ বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করছে সৌদি আরব। এরই মধ্যে হজযাত্রা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রুনাই।
এবারের হজ নিয়ে যে দুটি পদক্ষেপ বিবেচনা করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে একটি হলো– কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে সীমিত সংখ্যায় স্থানীয়দের হজ পালনের অনুমতি দেওয়া। আরেকটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ হলো– এই বছরের হজ একেবারেই বাতিল করা। সৌদি কর্মকর্তা বলেন, সব প্রস্তাবই বিবেচনায় রয়েছে। তবে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে বুধবার রাতে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের কাউন্সিলর হজ (অতিরিক্ত সচিব) মাকসুদুর রহমান জানান, হজের বিষয়ে সৌদি সরকার এখনও আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। হজ বাতিলের বিবেচনা সংক্রান্ত রয়টার্সের সংবাদের বিষয়েও সৌদি হজ মন্ত্রণালয় কিছু বলেনি। সবাই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সরকারি-বেসরকারি কোটা মিলিয়ে হজযাত্রী এক লাখ ৩৭ হাজার। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার হজযাত্রীর হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।