কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে এখনো পর্যন্ত ভ্যাকসিন বা কার্যকরী ওষুধ উদ্ভাবন করা যায়নি। তাই সচেতন মানুষেরা যতটা সম্ভব সতর্ক থাকছেন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন।
এখন করোনা টেস্টের সংখ্যা ও মাস্কের ব্যবহার উভয় বেড়ে চলেছে। এর সঙ্গে বাড়ছে একটি ছোট ডায়াগনস্টিক যন্ত্রের ব্যবহারও। আপনি সম্ভবত অনুমান করতে পেরেছেন কোন যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা পালস অক্সিমিটারের কথা বলছি। এ যন্ত্রটিতে ব্যথা ছাড়াই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা চেক করা যায়। কোভিড-১৯ ও ফুসফুসের অন্যান্য রোগে অক্সিজেনের মাত্রায় প্রভাব পড়তে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারি যে কারণে পালস অক্সিমিটারের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে তা হলো সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া বা টিস্যুতে অক্সিজেনের ঘাটতি শনাক্ত করতে যন্ত্রটির ব্যবহার। ঘরে পালস অক্সিমিটারের ব্যবহার নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও বিতর্ক ওঠেছে। অনেকেই কোভিড-১৯ শনাক্ত করতে যন্ত্রটি ব্যবহার করছেন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে, আরো কিছু রোগেও শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই এ যন্ত্রে অক্সিজেনের কম মাত্রা দেখে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারবেন না যে করোনা সংক্রমণই হয়েছে। কেনার সময় নিশ্চিত হোন যে অরিজিনাল পালস অক্সিমিটারই কিনছেন, অন্যথায় রিডিংয়ে ভুল আসতে পারে।
পালস অক্সিমিটার কি?
পালস অক্সিমিটার হলো একটি ছোট মেডিক্যাল যন্ত্র যেটা দিয়ে হৃদস্পন্দনের হার ও রক্তে অক্সিজেনের সম্পৃক্ততা (স্যাচুরেশন) পরিমাপ করা হয়। সাধারণত যন্ত্রটিতে আঙুল লাগিয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপা হয়; কিন্তু কান, নাক, পায়ের আঙুল ও কপালেও সংযুক্ত করা যায়। ব্যাটারি চালিত পালস অক্সিমিটারের ছোট এলইডি ডিসপ্লে তৎক্ষণাৎ ফলাফল জানিয়ে দেয়। কিছু পালস অক্সিমিটারে একটি তার দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ শনাক্তের মনিটর সংযুক্ত করা হয়- শরীরে অন্যান্য সেন্সর স্থাপন করে হৃদস্পন্দন, শারীরিক তাপমাত্রা ও রক্তচাপ সম্পর্কে আরো নির্ভুল তথ্য পেতে এগুলো ব্যবহৃত হয়।
পালস অক্সিমিটার কিভাবে হৃদস্পন্দন ও অক্সিজেন পরিমাপ করে?
রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও হৃদস্পন্দনের হার পরিমাপ করতে পালস অক্সিমিটারে একটি লাইট থাকে, যা ত্বকের মধ্য দিয়ে রক্তকণিকার রঙ ও গতিবিধি শনাক্তে সহায়তা করে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তকণিকা উজ্জ্বল লাল ও অক্সিজেন ঘাটতিতে থাকা রক্তকণিকা কালচে লাল।
পালস অক্সিমিটার শতকরা হিসেবে অক্সিজেন স্যাচুরেশন নির্ণয় করতে উজ্জ্বল লাল রক্তকণিকা ও কালচে লাল রক্তকণিকার মধ্যে তুলনা করে। উদাহরণস্বরূপ, ৯৯% রিডিংয়ের মানে হচ্ছে- রক্তপ্রবাহে মাত্র ১ শতাংশ রক্তকণিকা অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত।
অক্সিজেনের মাত্রা ও হৃদস্পন্দন হার কত হলে স্বাভাবিক?
মায়ো ক্লিনিকের মতে, পালস অক্সিমিটারের রিডিংয়ে অক্সিজনের মাত্রা ৯৫% থেকে ১০০% আসলে স্বাভাবিক এবং ৯০ শতাংশের নিচে দেখালে বিপজ্জনক নিম্ন মাত্রা (হাইপোক্সিক) হিসেবে বিবেচিত হবে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অনেক কোভিড-১৯ রোগী ৫০% বা আরো কম অক্সিজেন মাত্রা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রতিমিনিটে হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিক হার হলো ৬০ থেকে ১০০। সাধারণত কমটাই তুলনামূলক ভালো, কারণ ধীর হৃদস্পন্দন হার শক্তিশালী কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকে (হার্ট ও রক্তনালী) নির্দেশ করে।
পালস অক্সিমিটার কোভিড-১৯ শনাক্ত করতে পারে?
শনাক্ত করতে পারে- একথা বলা যাবে না। অনেক চিকিৎসকে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে অক্সিজেনের বিপজ্জনক নিম্ন মাত্রা দেখলেও এটা উল্লেখ্য যে, করোনা সংক্রমণই একমাত্র রোগ নয় যেকারণে এমন সমস্যা হয়। সিওপিডি, অ্যাজমা ও কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কহীন ফুসফুসীয় সংক্রমণের মতো দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগেও হাইপোক্সিয়া হতে পারে।
রিডিংয়ে অক্সিজেনের নিম্ন মাত্রা নিজেই করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করতে যথেষ্ট নয়, কিন্তু সময়ের আবর্তনে মাত্রা আরো কমতে থাকলে আপনার চিকিৎসক কোভিড-১৯ টেস্ট করেছেন কিনা জানতে চাইবেন। তাই উপসর্গ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করে নিন। আপনার কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে চিকিৎসক পরিস্থিতি খারাপ নাকি ভালো হচ্ছে নির্ধারণ করতে অক্সিজেনের মাত্রা মনিটর করতে পারেন।