ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অর্থ আত্মসাতসহ নানা কেলেঙ্কারিতে সঙ্গে জড়িত ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীসহ তিনজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ)। অন্য দুইজন হলো: ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম এবং ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান ও ইভিপি মো. শাহ আজম। রবিবার বিএফআইইউ থেকে তাদের তিন জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাবুল চিশতী তথ্য বিবরনীতে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে পলামতলা, নতুনবাজার বকশীগঞ্জ জামালপুর ২১৪০। এছাড়া অন্যান্য তথ্যের মধ্যে মাহবুবুল হক চিশতীর স্ত্রী রুজী চিশতী, ছেলে মো. রাশেদুল হক চিশতী, মেয়ে রিমি চিশতী ও তাই ভাই মো. মাজেদুল হক চিশতীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দি ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) উদ্যোক্তা পরিচালক হয়ে মাহবুবুল হক চিশতী কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণে অনিয়ম করেছেন। নিয়মবর্হিভুতভাবে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও ভাইকে ঋণ দিয়েছেন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে। এসব ঋণের অর্থের সুবিধাভোগী তিনি নিজেই। ঋণের অর্থে ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন নিজ নামে। ব্যাংকের সাধারণ আমানতকারীর অর্থে লুট করে এভাবে হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এদিকে ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত নয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরিবারের সদস্যসহ মোট মামলা ১২টি। এসব ঋণ কেলেঙ্কারির অর্থ ফেরত পেতে বাবুল চিশতীর স্থাবার-অস্থাবর ও ব্যাংক হিসাবে থাকা এফডিআরের অর্থ জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালাত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাবুল চিশতীর ভাই মাজেদুল হক চিশতীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ওয়েল টেক্স। মাজেদুল হক এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার নামে ওয়েল টেক্সের ঋণ রয়েছে। ওয়েল টেক্সের কর্মচারি আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে কামরুলকে কৃত্রিমভাবে মালিক দেখানো হয় মেসার্স সাবাবা এ্যাপারেলসের। সাবাবা অ্যাপারেলসের নামে ব্যাক টু ব্যাক এলসি, ডিমান্ড লোন দেয়া হয় ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। যদিও নাম সর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানের ঋণসীমা ছিল এক কোটি ৫০ লাখ টাকা।
কিন্তু পরবর্তীতে আরও ঋণ দেয়া হয় শাখা ব্যবস্থাপক জিয়া উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে এম শামীম ও বাবুল চিশতীর তত্বাব্ধানে। সর্বশেষ সাবাবা এ্যাপারেলসের নামে মোট ঋণ যায় ৩৯ কোটি ৯ লাখ টাকার। বর্তমানে এই ঋণের দায় ঠেকেছে ৪৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকায়। এই ঋণের বিপরীতে মাত্র তিন কোটি ৫২ লাখ টাকার জমি বন্ধক রাখা হয়। যার বাজার মূল্য প্রদর্শিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
একইভাবে ওয়েল টেক্সের আরেক কর্মচারী মো. রাশেদ আলীকে মালিক দেখানো হয় এডিএম ডাইং অ্যান্ড ওয়াশিং নামে এক প্রতিষ্ঠানের। এই প্রতিষ্ঠানকেও ঋণ দেয়া হয় ৫৫ কোটি টাকার। এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামেই ৮৮ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে যার দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।