একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে এখন পর্যন্ত বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের দেড়শ জন প্রার্থীর ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুজন প্রার্থীকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হামলাগুলো সংঘটিত হয়। সকল আসনেই বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার লাগাতে বাধা ও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। প্রায় সকল প্রচারণার মাইক ভাংচুর করা হয়েছে, ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে আইনী জটিলতা সৃষ্টি করে প্রার্থী হওয়া অনিশ্চিত করে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক প্রার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামালসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা হয়েছে। হামলা করার পর গতকাল বর্ষিয়ান জননেতা ড. কামাল হোসেনের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা দায়েরের মাধ্যমে সরকার যে বার্তাটি দিলো তা নিম্নরুচির। সরকারের কাছে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ছাড়া আর কারো কানাকড়ি মূল্য নেই। এই খ্যাতিমান আইনজীবী ও দেশের সংবিধান প্রণেতাকে মামলার মাধ্যমে যে অপমান করা হলো সেটি সারা জাতিরই অপমান। এই ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো-সরকার পরিচালিত হচ্ছে দুষ্কৃতিকারিদের দ্বারা।
রিজভী আরো বলেন, ড. কামাল হোসেনের যদি খামোশ বলা অন্যায় হয়ে থাকে তবে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই-এইচ টি ইমাম যখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিকদেরকে ধমকিয়ে বলেন-‘তুমি কি বিএনপি যে বিএনপি’র মতো প্রশ্ন করো? তুমি কি মওদুদ?’ কই আপনি তো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। কারণ আপনি একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক, আপনার বিরুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য নিজেদের ক্যাডারদেরকে লেলিয়ে দিয়েছেন। পুলিশকে সন্ত্রাসীদের উৎসাহদাতা হিসেবে আপনি মদদ দিয়েছেন। আপনার আমলে যারা মামলা-মোকদ্দমার শিকার, গ্রেফতারের শিকার তারা ন্যায়ের পক্ষে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে। আজকের চলমান ন্যায় ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের তারা মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পরে পুলিশের কর্মকান্ডের জন্য দায়ী নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশন একই ঝাঁকের কৈ। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য ও কার্যকলাপ পুলিশের ভয়ঙ্কর দমনের প্রবণতাকে আরো উস্কিয়ে দিচ্ছে। দেশব্যাপী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ঘুম কেড়ে নেয়া হয়েছে পুলিশের চিরুনী তল্লাশী। দেশব্যাপী অকল্পনীয় সহিংসতা, রক্তপাত ও পুলিশী আক্রমণের বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ দিলেও ইপ্সিত ফল মেলেনি। নির্বাচন কমিশন, দেশের কিছু আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, আত্মা বিক্রি করা কিছু সাংবাদিক ক্ষমতার বিষাক্ত প্রতিক্রিয়ায় যেন মনে হয় মূমুর্ষ রোগী, যেন মারণরোগে তারা আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তারা ড. কামাল হোসেন সাহেবের গাড়ীতে আক্রমণের সাফাই গাইছেন, তার মতো বরেণ্য ব্যক্তিকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলছেন। এই সাফাইকারি ক্রীতদাসদের কারণেই বাংলাদেশ এখন দুর প্রস্তর যুগে ফিরে যাচ্ছে। তবে আমি অবৈধ শাসকগোষ্ঠী, নির্বাচন কমিশন এবং তাদের দুস্কর্মের সঙ্গীদের জানিয়ে রাখতে চাই-জনগণের কান সর্বক্ষণ প্রস্তুত আছে। কে কি বলছেন কিছুই এড়িয়ে যাচ্ছে না। আমি গণফোরামের সভাপতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনকে অসম্মানজনক মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, ভোটারমুক্ত ও সংঘাতময় নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সিইসির যৌথ প্রযোজনায় প্রতিটি অনাচারের হিসাব রাখছে জনগণ-গণমাধ্যম-বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-দেশী ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাসহ নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো। এতো অনাচার ও নিষ্ঠুর আচরণ করে পার পাবে না সরকার। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়ণ চালানো হচ্ছে তার দায় সিইসি এবং আওয়ামী লীগকে নিতেই হবে। ইতোমধ্যে এসব অনাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সহিংসতার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ সংগঠিত হচ্ছে। যেখানেই গ্রেফতার ও হামলা সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আজকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সকল নেতাকর্মীরা জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট/ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট-রক্ত জমাট/শিকলপুজার পাষাণ বেদী’ এই গানটি সম্মিলিত কন্ঠে গাইতে গাইতে সকল বাধার বিন্ধ্যাচল অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। সরকারের জুলুম-অবরোধের কাছে জনগণ আত্মসমর্পণ করবে না। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সকল শৃঙ্খল ভেঙ্গে জনগণ ভোট দিতে এগিয়ে যাবে। পরাজিত হবে অগণতান্ত্রিক শক্তি। ধ্বংস হবে একদলীয় দু:শাসনের কারাগার।
সারাদেশে গ্রেফতার বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা ও বিএনপির অফিসের হামলা-ভাঙচুর, বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, নেত্রকোনা-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল হকের বাসায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও বাড়ির লোকজনকে অত্যাচার করে আহত করে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাবিলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। পরে পুলিশ এসে ২০/২৫ জনকে গ্রেফতার করে এবং প্রার্থীকে লাঞ্ছিত করে। বাগেরহাটের মোল্লারহাট বাজারে জুমার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে নামার পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদ এবং যুবলীগের সভাপতির নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর পৈশাচিক সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় ১০ জনের বেশি নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে।
এছাড়া টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, যশোর, নেত্রকোনা, ঢাকা মহানগর, সাতক্ষীরা, নাটোর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, ঢাকা জেলা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, নরসিংদী, বরিশাল,
ঝালকাঠি, রংপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কুষ্টিয়া, নড়াইল, খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় ধানের শীষের প্রার্থী, বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বিএনপি ও অঙ্গ/সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির দাবি করছি। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন রিজভী।