থানায় ধরে এনে স্থানীয় যুবলীগ নেতাকে মারধরের অভিযোগে কেন্দুয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। নির্যাতিত ওই নেতার স্ত্রী রত্না আক্তারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ ও ময়মনসিংহ ডিআইজি অফিস থেকে অভিযোগের তদন্ত করছেন দু’জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। নেত্রকোনা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৩ জুন) নেত্রকোনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ ফখরুজ্জামান জুয়েলের কাছে রত্না আক্তারের অভিযোগের ৯ জন সাক্ষীর ৮ জন স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত আকারে তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া সার্বিক বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ওসির স্বপক্ষের বিভিন্ন সাক্ষীদের সাক্ষ্যও গ্রহণ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা নেত্রকোনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েল জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে তাই তদন্তের স্বার্থে আপাতত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি হারুণ অর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে নির্যাতিত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী ও অভিযোগকারী রত্না আক্তার বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত চলছে, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল স্যার কথা বলেছেন। আমি স্যারের কাছে সব বিষয় তুলে ধরেছি। স্যার বলেছেন ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই বিচার হবে।’
ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে রত্না আরও বলেন, ‘আমি চাই এমন শাস্তি হোক যাতে এমন ঘটনা আর কেউ করতে সাহস না পায়। থানায় ধরে নেওয়া হলো ৯ জনকে ৮ জনকে কিছুই করেনি, কিন্তু আমার স্বামীকে কেন মারধর করলো? কারণ একটাই, আমার স্বামী এই ওসি স্যারের বিরুদ্ধে আইজিপি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিল। তাই পূর্বের ঘটনার জের ধরে তিনি মারধর করেছেন।’
নির্যাতিত যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার শরীরে ব্যথা, আমি বসতে পারি না। বুধবার হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসেছি। আমি হাঁটতে পারি না, শুয়ে থাকতে পারি না। আমার শরীর খুব খারাপ, ব্যথার জন্য রাতে ঘুমাতেও পারি না। আমি এডিশনাল এসপি জুয়েল স্যারের কাছে সব ঘটনা বলেছি। জানিয়েছি আমি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, কিছু দিন আগে ওসির বিরুদ্ধে আইজিপি স্যারের কাছে একটি অভিযোগ করায় উনি আমার প্রতি ক্ষুব্ধ। তাই আমার ওপর তিনি নির্যাতন চালিয়েছেন। আমি তদন্তপূর্বক এই ঘটনার সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন কেন্দুয়া থানার পুলিশ সদস্যরা পৌর এলাকার সাউদপাড়া এলাকা থেকে দু’জন পৌর কাউন্সিলর, একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, স্থানীয় যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফাসহ ৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে জুয়া আইনে সবাইকে ৫ জুন নেত্রকোনা আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ৫ জুন সবাইকে জামিনে মুক্তি দিলে গ্রেফতার হওয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা অসুস্থ অবস্থায় ওই সময়েই নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে অসুস্থ গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রত্না আক্তার ৮ জুন কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারের পর গোলাম মোস্তফাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ এনে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। বর্তমানে অভিযোগের তদন্ত চলছে।