ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ ঊমা রানী দাস। ৭ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান তাঁর স্বামী ড. দেবাশীষ দাস। তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাকশিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মারা যাওয়ার পর করোনা পজিটিভের সনদ হাতে পান ঊমা রানী দাস। মৃত্যুর পর স্বামীর লাশ গোসলসহ দাহ করার কাজটি তিনি নিজেই করেছেন। তাকে দাহ করারা কাজে শুধু সহযোগীতা করেছেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু লাশ দাহ করার ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ছবি ভাইরাল ও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে তা তিনি কখনই চাননি। এনিয়ে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন ঊমা রানী দাস।
তিনি জানান, স্বামী দেবাশীষ দাসের বাড়ি সাভারে। পড়াশোনা করেন ময়মনসিংহে। দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। পৈতৃক বাড়িতে তেমন যাতায়াত ছিল না। ঊমা রানী দাস বলেন, ‘করোনা উপসর্গ ছিল স্বামীর। পরে মারা গেলেন। তাই আমি নিজেই পরিবারের অন্যরা যাতে সংক্রমিত না হন, সে ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় আমি নিজেই আমার স্বামীর লাশ দাহ করি। তবে আমার কর্মক্ষেত্র বা স্বামীর কর্মক্ষেত্র থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি—এ ক্ষোভ থাকবে সব সময়।’
ঊমা রানী দাস স্বামীর লাশ দাহ করছেন এবং হাতে চিকন একটি কাঠি নিয়ে হেঁটে একা বাড়ি ফিরছেন এ ধরনের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ফেসবুকে আলোচনায় এলেও ঊমা রানী দাস বলেন, ‘ফেসবুকে আমি আমার পরিবারের কথা বা ছবি তেমন শেয়ার করি না। আমি চাইও না আমার পরিবার বা আমার ছবি আলোচনায় থাকুক। স্বামীর লাশ নিজে দাহ করার যে কষ্ট, তা তো সারা জীবন বহন করতে হবে। আর এই ধরনের ছবিও আমাকে কষ্ট দেবে।’
তবে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড. দেবাশীষ দাসকে দাহ করার যে ছবি ও বর্ণনা প্রকাশ পেয়েছে তাতেকরে ময়মনসিংহসহ সারাদেশে বিব্রতকর সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের কাজই অসহায় মানুষের পাশে থাকা, কিন্তু অসহায় মানুষের ব্যর্থতা প্রকাশ করা নয়। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের যেসব স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন তাদের জন্য এব্যাপারে একটি নীতিমালা প্রকাশও জরুরি বলে মনে করছেন ময়মনসিংহের সচেতন মহল। অন্যতায় ভুক্তভোগী পরিবারেরা এই ঘটনার মতো সামাজিকভাবে আলোচনা ও সমালোচনায় পড়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। যা কখনই কাম্য নয়।