ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সাইদ ওরফে সাহেদ আলী মেম্বার ও তার ছেলে একই ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার স্বপন মিয়ার হামলায় এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছে।
নিহত বোকাইনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তাকীম মিয়া (৩৫)।
জানা যায় যে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় মোস্তাকীম মিয়া নিহত হয়েছেন।
বৃহষ্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। তিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে দফায় দফায় বালুচড়া, মানিকদি, বাসাবড়ি ও স্বল্পপশ্চিমপাড়া ৪টি গ্রামের প্রায় অর্ধশত বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে নিহতের স্বজনরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর সকাল পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নে বাসাবাড়ি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় পুর্বে থেকে উৎপেতে থাকা একদল সন্ত্রাসী মোস্তাকীম মিয়ার উপর অর্তকিত হামালা চালিয়ে লোহার রড দিয়ে প্রকাশ্যে বেধড়ক পিঠিয়ে তার কোমড়, দু’পা ও ডান হাত ভেঙ্গে দেয়।
হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আবু সাইদ ওরফে সাহেদ আলী মেম্বার ও তার ছেলে একই ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার স্বপন মিয়া। তাদের দু’জনের মাঝে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ও পূর্ব শত্রুতার জেরে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে মোস্তকীম মিয়ার ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ইউপি সদস্য মোস্তাকীমকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অবস্থায় অবনতি দেখে ডাক্তার তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসাপাতালে রেফার করেন। কিন্তু ওখানে অবস্থার অবনতি হলে গত তিনদিন ধরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে ৮দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বৃহষ্পতিবার রাতে তিনি মারা যান।
তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বজনরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সংঘাত ও হামলার এড়াতে বৃহষ্পতিবার রাত থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। কিন্তু ভোর থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে দফায় দফায় বিভিন্ন বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায়। তাদের মধ্যে বালুচরা গ্রামের আবু সাইদ ওরফে সাহেদ আলী মেম্বার গংদের ৭টি ঘর, দুলাল মিয়ার ৪টি ঘর, সাইকুলের ২টি ঘর, বিপ্লবের ২টি ঘর, মিলনের ১টি ঘর, রফিকের ১টি ঘর, সাবেদ আলীর ৩টি ঘর, সাইদুলের ২টি ঘর, হাসিমের ২টি ঘর, মোয়াজ্জেমের ৩টি ঘর, রুবেলের ৩টি ঘর, রুকনের ২টি ঘর স্বল্পপশ্চিমপাড়া গ্রামের খোর্শেদের ২টি ঘর, আবু হেনা মোস্তফা কামাল গংদের ৪টি ঘর, নিজামাবাদ গ্রামের মোন্নাফের ১টি ঘর, হারুনের ৪টি ঘর ও মানিকদি গ্রামের ইউসুব আলীর ৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসময় তাদের ঘরের আসবাবপত্রও লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
হামলায় ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, তাদের ঘরে ধান-চাল ও রান্নার পাতিলগুলোও নাই। বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে পানির টিউবওয়েলগুলো ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। আবার অনেকের গরু ছাগলও লুট হয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে দমকল বাহিনী সহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। জেলা পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মোস্তাকমী মেম্বারের উপর হামলার অভিযোগে আবু সাইদ ওরফে সাহেদ আলী মেম্বারকে ঘটনার পরে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর ইউপি মেম্বারের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।