পর্যটন-শহর কক্সবাজারে নাগরিক জীবনে করোনা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও প্রকৃতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েনি। বরং পর্যটকের আনাগোনা না-থাকায় প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বর্জ্য বা দূষণ কমে যাওয়ায় পরিবর্তন এসেছে সৈকতের জীব বৈচিত্র্যে। এ অবস্থা করোনার দুর্যোগ কাটিয়ে নতুন করে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে উৎসাহ যোগাচ্ছে স্থানীয়দের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়ার আনাগোনা আগের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে। আগে মানুষ দেখলেই কাঁকড়া লুকোনোর পথ খুঁজত। গর্তে ঢুকে পড়ত। কিন্তু এখন সে ভয় নেই। দু’মাসেরও বেশি সময় সৈকত পর্যটকশূন্য থাকায় সৈকতে এখন তাদেরই রাজত্ব। শুধু কাঁকড়া নয়, ছোট ছোট কাঁকড়ার দলও বাসা বানিয়েছে সৈকতে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, প্রকৃতি তার নিজস্ব সৃজনশীলতায় চমৎকার আল্পনা এঁকেছে।
পাশাপাশি সৈকতের জীববৈচিত্র্য যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কক্সবাজারের ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দু’পাশের প্রকৃতি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। প্রকৃতি যেন মুক্তপ্রাণে হাসছে। ব্যক্তি, সমাজ জীবনে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রকৃতির এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ইনানী হ্যাচারি জোনের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার আগে সৈকতে যেভাবে মানুষের সমাগম ছিল, সে কারণে পশুপাখি, জলজ প্রাণী, উদ্ভিদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়েছে। এখন পরিবেশ সুন্দর এবং নির্জন। যে কারণে প্রকৃতি আপন মনে ডালপালা মেলে ধরেছে।
হিমছড়ি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মাবুদের ভাষ্য, পাস্টিক বর্জ্য ও মানুষের সমাগম না থাকায় সাগরের পানিও দূষিত হচ্ছে না। ফলে সাগর ও উপকূলের জলজ প্রাণীগুলো স্বাধীনভাবে বিচরণ করছে। এখন মাঝেমধ্যে ডলফিনও দেখতে পাই।
করোনায় ভিন্ন এক কক্সবাজার দেখছি। গত ৩০ বছরেও এমন দেখিনি দাবি করে মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, সাগরের পানি স্বচ্ছ নীল। চারপাশে সবুজের সমারোহ! কক্সবাজারকে নতুন করে উপভোগ করছি।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন। পরিবেশবিদরা বলছেন, এই প্রকৃতি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। পরিবেশের প্রতি হতে হবে আরো যতœবান। ব্যবসায়ীরাও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে প্রকৃতি বাঁচিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করছেন। এ প্রসঙ্গে পর্যটন ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, করোনা বুঝিয়ে দিলো কক্সবাজারের প্রকৃতি ও পরিবেশ কত বৈচিত্র্যময়! এই বৈচিত্র্য ব্যবসার স্বার্থেই ধরে রাখতে হবে। শুধু লাভের মানসিকতা নয়, কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে। প্রকৃতি আর পর্যটন একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়।
পর্যটকের বর্জ্যে দূষিত হয় সৈকতের পরিবেশ। এমন অভিযোগ কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপুর। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রশাসনকে রাখতে হবে আরো জোরালো ভূমিকা।