করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ডা. কে এম তানজির আলম ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া চৌরঙ্গি মোড়ের নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার। গত ১১ মে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেই নমুনায় ১৪ মে ২০২০ তারিখে করোনার ফলাফল পজিটিভ আসে। এর পর আবারো নমুনা পাঠানো হলে গত ২৩ মে রাতে নমুমার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
করোনা থেকে মুক্ত কে এম তানজির আলম (২৭) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এনেসথেসিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ডাক্তার এম এ এম শাখাওয়াত হোসেন খানের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ৩৯তম বিসিএস এ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করে। এটাই তাঁর সরকারি চাকরি জীবনে প্রথম কর্মস্থল।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরু হলে গত ২৮ জানুয়ারি হতে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের স্কিনিং কার্যক্রমের মেডিক্যাল টিমের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তাঁকে উপজেলার “কভিড-১৯ এর ফোকাল পারসন” এন অতিরিক্ত দায়িত্বও প্রদান করে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর দায়িত্ব পালন ছাড়াও করোনাভাইরাস বিষয়ে অন্যান্য কাজও করেন। উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত স্থানে করোনা সন্দেহজনক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করার কাজে নেতৃত্ব প্রদান করেন। নিজে প্রায় ৫০টি নমুনা সংগ্রহ তদারকি করেন।
নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)দের ট্রেনিং প্রদান করেন। বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা হতে পাটগ্রামে আগত মানুষদের হোম কোয়ারেন্টিনের তদারকির কাজ করতেন।
তানজির আলম বলেন, ‘গত ০৪ মে পাটগ্রাম উপজেলায় প্রথম শাহিন নামের এক করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সেই রোগী ৬ মে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আমার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটি শুরু হয়। দায়িত্ব শুরুর পর থেকে নিজেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে চলে যাই।
তানজির বলেন, ‘আমার গায়ে জ্বর ছিল না। তবে হালকা গলা ব্যথা ও কাশি ছিল। শরীরটা অস্বাভাবকি লাগছিল। তারপরও দায়ত্বি পালন করে যাচ্ছিলাম। গত ১১ মে আমার নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১৪ মে ওই নমুনায় করোনার ফলাফল পজিটিভ আসে।’
তিনি বলেন, ‘ওই যুবকরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই করোনা পজিটিভ হয়েছি। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, দেড় বছররে শিশু সন্তান রয়েছে তাদের কী হবে? আমি খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যাই। কিন্তু একবারের জন্য মনোবল হারাইনি। আমার করোনাপজিটিভ হওয়ার খবর শুনে আমার সহকর্মীরাসহ শুভাকাঙ্খীরা অনেকে আমাকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাহস দেয়। সবার সহযোগিতায় মনোবল ফিরে পাই। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠি।’
নতুন করোনা রোগীদের উদ্দেশে এই ডাক্তার বলনে, ‘একেবারে ভেঙে পড়লে চলবে না, নিজের মনের জোর বাড়াতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নিজেকে সচেতন হতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তবেই করোনা জয় করা সম্ভব।’
উল্লেখ্য, তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কোয়ার্টারে থাকতেন। সেখানে তাঁর ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশু সন্তান রয়েছে। তাঁর স্ত্রী ডাক্তার কানিজ ফাতেমা ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার। তাঁর বড় ভাই ডাক্তার কে এম যোবায়ের আলম। তিনি ৩৫তম বিসিএস উত্তীর্ণ হন। তিনি বর্তমানে ঢাকার বিএসএমএমউ (সাবেক পিজি হাসপাতাল) তে নিউরোসার্জারিতে এমএস কোর্সে আছেন।
ডা. কে এম তানজির আলম বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমি করোনামুক্ত হয়েছি। আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমার হোম কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হবে ৬ জুন। এর পর আমি কাজে যোগ দিয়ে করোনাকালীন দুর্যোগে আবারও মানুষের সেবা করতে চাই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার অরুপ পাল বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুভার্বের সময় একজন যোদ্ধা হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন ডাক্তার তানজির আলম। এমনকি করোনা পজিটিভ হওয়া রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন।’