মে মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহে। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় ১২টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গেল মে মাস পুরোটাই দেশে ছিল অঘোষিত লকডাউন। সাধারণ ছুটিতে বন্ধ ছিল গণপরিবহন। কিন্তু এর মধ্যেও সড়কে থামেনি মৃত্যুর মিছিল। সারাদেশে ২১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৬১ জন। এরমধ্যে ৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৮৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, গত মাসে দেশের সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত সংবাদের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি, দ্রুতগতি, অদক্ষ চালক, চালকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ নয়টি কারণ তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে দক্ষ চালক বাড়ানো, সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের কাজের সময় নির্ধারণ ও নির্ধারিত বেতনসহ বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১৩টি। নিহত ২৯২ জন এবং আহত ২৬১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৩৯, শিশু ২৪।
দুর্ঘটনায় ৫৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৯.১৭ শতাংশ। পরিবহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ২১ জন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ১৯৬ জন, অর্থাৎ ৬৭.১২ শতাংশ। এই সময়ে নয়টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ১৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৮৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৩.৪৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৫.৫৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় ট্রাকযাত্রী ১৯, পিকআপ যাত্রী ১২, প্রাইভেটকার যাত্রী ৮, সিএনজি যাত্রী ১১, কাভার্ডভ্যান যাত্রী ৪, মাইক্রোবাস যাত্রী ৩, ট্রলিযাত্রী ৫, অটোরিকশা যাত্রী ২১, নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র ইত্যাদি স্থানীয় যানবাহনের ৬৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। মহাসড়কে ৮৯টি (৪১.৭৮%), আঞ্চলিক সড়কে ৮৩টি (৩৮.৯৬%) এবং গ্রামীণ সড়কে ৪১টি (১৯.২৪%) দুর্ঘটনা ঘটেছে। সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্যে ৫২টি মুখোমুখি সংঘর্ষ (২৪.৪১%), ৬১টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে (২৮.৬৩%), ৮৪টি চাপা দেয়া ও ধাক্কা দেয়ার ঘটনা (৩৯.৪৩%), এবং অন্যান্য কারণে ১৬টি (৭.৫১%) ঘটেছে। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোরে ৭.৫১ শতাংশ, সকালে ২৯.১০ শতাংশ, দুপুরে ২৩.০০ শতাংশ, বিকালে ১৮.৩০ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৯.৩৮ শতাংশ এবং রাতে ১২.৬৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যে সব যানবাহনে দুর্ঘটনা ঘটেছে
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ট্রাক ৩৫.৬৮ শতাংশ, মোটর সাইকেল ৪৫.৫৩ শতাংশ, পিকআপ ১০.৭৯ শতাংশ, কাভার্ডভ্যান-ট্রলি-ট্রাক্টর ১০.৩২ শতাংশ, কার-মাইক্রোবাস-জিপ ৬.১০ শতাংশ, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা ১৬.৪৩ শতাংশ, নসিমন-করিমন-ভটভটি ১১.২৬ শতাংশ এবং অন্যান্য যানবাহন ৯.৮৫ শতাংশ দায়ী।
এসব দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩১১টি। (ট্রাক ৭৬, কাভার্ডভ্যান ৭, পিকআপ ২৩, ট্রলি ৮, ট্রাক্টর ৭, তেলবাহী ট্যাংকার ১, সড়ক মেরামত কাজে ব্যবহৃত ট্রাক ১, পোশাক শ্রমিক বহনকারী বাস ২, মাইক্রোবাস ৫, প্রাইভেট কার ৭, জীপ ১, পাওয়ারটিলার ১, ধান মাড়াইয়ের মেশিনগাড়ি ৪, মোটর সাইকেল ৯৭, বাই-সাইকেল ৩, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা ৩৫, নসিমন-করিমন-ভটভটি ২৪, টমটম ৩, আলমসাধু ৩, মাহেন্দ্র ২, চান্দের গাড়ি ১টি। দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে ১৯.২৪%, রাজশাহী বিভাগে ২১.৫৯%, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১.৭৩%, খুলনা বিভাগে ১২.৬৭%, বরিশাল বিভাগে ৭.৯৮%, সিলেট বিভাগে ৯.৩৮, রংপুর বিভাগে ৭.০৪% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১০.৩২% দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে রাজশাহী বিভাগে। ৪৬টি দুর্ঘটনায় ৬৮ জন নিহত। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ১৭টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৪ জন। একক জেলা হিসেবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১২টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত। সবচেয়ে কম কুষ্টিয়ায়। একটি দুর্ঘটনায় নিহত একজন। উল্লেখ্য, গেল এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। এপ্রিল মাসে ১১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৮ জন নিহত ও ১১২ জন আহত হয়েছিল।