খাশোগি-ইয়েমেন ইস্যুতে মার্কিন সিনেটে সৌদির নিন্দা প্রস্তাব

ইয়েমেন যুদ্ধ ও খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি আরবের ওপর একটি নিন্দা প্রস্তাব বিষয়ে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এক ভোটাভুটির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ভোটাভুটি হওয়ার কথা। ডেমোক্র্যাটরা আসা করছেন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানরা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন।
সাউথ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান লিন্ডসে গ্রাহাম ও নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাট সিনেটর বব মেনেন্দজ বুধবার জানিয়েছেন, তাদের পরিকল্পনা জানুয়ারিতে নতুন কংগ্রেস শুরু হওয়ার পর তারা সৌদি আরবের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র বিক্রি বন্ধের বিষয়ে আইন করবেন।
আবার বেশ কয়েকজন সিনেটর এমন আভাস দিয়েছেন যে, সৌদি আরব ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে পদ থেকে সরিয়ে দেবে এমনটাই চান তারা। ক্যাপিটাল হিলে এক সংবাদ সম্মেলনে লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, ‘আমাদের বন্ধু সৌদি আরবের উদ্দেশে বলতে চাই, এই পরিবর্তন না আনলে আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে পারবেন না।’ এই সিনেটর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক মহলে।
ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবকে সামরিক সহযোগিত বন্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চাপ প্রয়োগবিষয়ক বিতর্ক আরো চলবে কি না সে বিষয়ে একটি ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বুধবার সিনেটে। প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৬০টি আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৩৯টি। আর বৃহস্পতিবার যে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে, সেটি মূলত এই প্রস্তাবের ওপর চূড়ান্ত ভোটাভুটি। এই প্রস্তাবটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে সৌদি আরব ও ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর একটি কঠোর বার্তা হিসেবে। প্রস্তাবটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন মার্কিন সিনেটররা।
ইয়েমেনে ১০ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষের নিহতসহ দুর্ভিক্ষের কারণে দারিদ্রতা ও পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে বহু ইয়েমেনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভুক্তভোগী ইয়েমেনিদের মানবিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মার্কিন সিনেট সৌদি আরবের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়ার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেছে। আসছে জানুয়ারির নতুন কংগ্রেসেও সৌদি আরবের ওপর মানবাধিকার নিষেধাজ্ঞা ও অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতাসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে মার্কিন প্রশাসনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হবে বলে আইনপ্রণেতারা জানান।
উল্লেখ্য, সৌদি ভিন্নমতালম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে তুরস্কে সৌদি কনসুলেটে হত্যার পর থেকে রিয়াদের নেতাদের ওপর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর তদন্ত রিপোর্টে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে যুবরাজ সালমানের নাম আসায় তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
খাশোগি হত্যায় পার পেতে পারে না সৌদি আরব
আনাদোলু জানায়, জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বিদায়ী মার্কিন দূত নিকি হ্যালি বলেছেন, খাশোগি হত্যায় পার পেতে পারে না সৌদি আরব। তারা ছাড় পেতে পারে না; না কোনো ব্যক্তি, না সরকার। তাদের ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকারে নিকি হ্যালি বলেন, ‘আমার মনে হয় সৌদিদের সাথে তাদের কঠিনভাবে কথা বলা দরকার, যাতে তাদের জানাতে পারি আমরা এ ঘটনা (খাশোগি হত্যাকাণ্ড) উপেক্ষা করব না। এ বিষয়ে আমরা তোমাদের কোনো ছাড় দেবো না। এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি করবেন না।’
জাতিসে ঙ্ঘ নিযুক্ত এই মার্কিন দূত খাশোগি হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সংবাদমাধ্যমে নাম আসা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দেশটির সরকারপ্রধান হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি সরকার ও দেশটির সরকারপ্রধান এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) সবাই দায়ী। তারা ছাড় পেতে পারে না; না কোনো ব্যক্তি, না সরকার। তাদের ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর আগে মার্কিন সাময়িকী দ্য আটলান্টিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিকি হ্যালি বলেন, খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেয়া উচিত নয়। এভাবে সমর্থন দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নয়।
দ্বিতীয় বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে গিয়ে হত্যার শিকার হন খাশোগি। ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক খাশোগি সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এই সাংবাদিক সৌদি আরবে ফেরার বিষয়ে রিয়াদের চাপ অগ্রাহ্য করে আসছিলেন। প্রথমে রিয়াদের পক্ষ থেকে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করা হলেও তুরস্কের সংবাদমাধ্যমগুলো সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করতে থাকে। এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ওঠে। একপর্যায়ে খাশোগি কনসুলেট ভবনে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে এ হত্যার সাথে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে সৌদি যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নাকচ করে আসছেন। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার জেরে সৌদি আরবের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠলেও তাতে সায় দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করে আসছেন, দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আরো অনেক উপায় রয়েছে। অস্ত্র বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী হবে বলেও মনে করেন তিনি। তবে ট্রাম্পের এ অবস্থানকে সমর্থন দিতে পারছেন না হ্যালি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top