নেত্রকোনার মদনে প্রতিবেশীর ধর্ষণের শিকার এক অসহায় হতদরিদ্র কিশোরী (১৪) সন্তান প্রসবের এক মাস অতিবাহিত হলেও ধর্ষকসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এভাবে সময় অতিবাহিত হওয়ায় কিশোরীসহ তার পরিবারের লোকজন নানা সংশয়ে ভুগছেন। কি হবে কিশোরী ও প্রসব হওয়া নবজাতকের?
মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার দেওসহিলা গ্রামে সরজমিনে গেলে ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, আমি তখন মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। গত বছরের আষাঢ় মাসের ২৫ তারিখ একই বাড়ির আবু বক্কর বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী নাসিমার অনুরোধে ওদের ঘরে রাতে ঘুমাতে যাই। ওই বাড়ির সেলিমের ছেলে জুয়েল হঠাৎ ঘরে প্রবেশ করে আমাকে উক্ত্যক্ত করতে থাকে। একপর্যায়ে আমি রাগান্বিত হয়ে উঠলে নাসিমা আমার মুখে ওড়না দিয়ে চেপে ধরে। এ সময় জুয়েল আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি প্রকাশ করলে আমার পিতা-মাতাসহ পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।
এভাবে আরো একাধিকবার ভয় দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। আমি ভয়ে বিষয়টি চেপে রাখলেও আমার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকলে মা-বাবাকে এ ঘটনা জানাই। তারা বিভিন্নস্থানে ঘুরে বিচার না পাওয়ায় ১০ মার্চ ২০২০ তারিখে বাবা হানিফ মিয়া বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে নেত্রকোনার মদন কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ১৮ মার্চ আদালতের নির্দেশনুসারে মামলাটি ২৪ মার্চ থেকে মদন থানায় তদন্ত শুরু হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ময়মনসিংহ হাসপাতালেই গত ৩ মে কন্যাসন্তান প্রসব হয়। এখন কি হবে আমার ও প্রসব হওয়া নবজাতকের। আসামিরা প্রকাশ্যে বাড়িতে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। মামলা দায়ের করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ধর্ষক জুয়েলসহ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আর যেন কোনো কিশোরীর অবস্থা আমার মতো না হয় সে জন্য ধর্ষক জুয়েলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
ভুক্তভোগীর কিশোরীর মা জানান, আমার মাদরাসাপড়ুয়া মেয়েকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রতিবেশী সেলিমের ছেলে জুয়েল জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেলে ঘটনাটি আমাদের কাছে প্রকাশ করে। আমরা বিভিন্নস্থানে ঘুরে ন্যায়বিচার না পাওয়ায় আমার স্বামী বাদী হয়ে নেত্রকোনার মদন কোর্টে মামলা করেছে। আমরা গরির মানুষ দিন আনি দিন খাই। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে আছি। টাকা খরচ করতে পারি না বলে কেউ আমাদের কথা কানে নেয় না। এখন কি হবে আমার কিশোরী মেয়েটার? এমন কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
অভিযুক্ত জুয়েলের বাড়িতে গেলে মামলার এজহার ভুক্ত ২ নম্বর আসামি নাছিমার সাথে দেখা হয়। তার সাথে কথা বলতে চাইলে সে নানা কথা বলে পালিয়ে যায়। জুয়েলের মা বেদেনা আক্তার ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় আমাদের প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিছু দিনের মধ্যেই আমার ছেলেকে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করানোর চেষ্টা করতেছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন, আগে এসআই ফারুক এ মামলার দায়িত্বে ছিলেন। এখন আমি দায়িত্বে আছি। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মদন থানার ওসি মো. রমিজুল হক বলেন, মামলাটি তদন্ততাধীন। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খালিয়াজুরি সার্কেল) মো. জামাল উদ্দিন জানায়, আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।