বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার জন্য যা যা করার দরকার আওয়ামী লীগ তাই করবে। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন বানচালও করে দিতে পারে তারা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, সারাদেশে আওয়াজ উঠেছে নৌকাডুবির। এখন পতনের ক্ষণগননা চলছে। তাই পলায়নপর সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরই চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং আওয়ামী হানাদারদের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। এই অবৈধ সরকার আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে হামলা গ্রেফতার বাড়িয়ে দিয়েছে। টিকে থাকার জন্য শেষ মরণকামড় দিচ্ছে এখন।
তিনি বলেন, ৫ বছর ঢাকায় আরাম আয়েশে লুটপাট করে কাটিয়ে এখন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে চরম প্রতিকূলতায় পড়েছে নৌকার প্রার্থীরা। দিকে দিকে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। ভোট চাইতে গিয়ে ভোটারদের রোষের মুখে পড়ছে। দলীয় সন্ত্রাসী আর পেটোয়া বাহিনী দিয়ে সাধারণ জনগণকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। সময় এখন জনগণের। এই কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফিয়া ডনদের মতো বলছেন-‘আর ভাষণ নয়, এ্যাকশনে যেতে হবে’। অর্থাৎ এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নিজেদের দুর্বিনীত ক্যাডারদেরকে সহিংসতার পথ অবলম্বনের জন্য উস্কানি দিলেন। অব্যাহত মামলা-হামলা, গুম-খুন, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে জনগণের রায় এখন প্রতিফলিত হবে। আমরা নিশ্চিত, এবার সরকারী সকল বাধা অতিক্রম করে সারাদেশে সাহসী জনতা ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনবেই ইনশা-আল্লাহ।
রিজভী বলেন, চারদিকে কবি হেলাল হাফিজের একটি কবিতার পংক্তি খুব উচ্চারিত হচ্ছে। “ভোলায় ভালায়া আর কথা দিয়া আর কতোদিন ঠকাইবেন মানুষ, ভাবতাছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ। গোছায়া গাছায়া লন বেশিদিন পাইবেন না সময়, আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়।”
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে টেলিফোনে বলছেন-বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলার সংবাদ যেন ছাপানো না হয়।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন বানচালও করে দিতে পারে। সেই কারণে আমরা গতকাল দলের পক্ষ থেকে আজকেই সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবির ঘন্টা খানেক পরেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের দিনের ৫ দিন আগে সেনা মোতায়েনের ঘোষণ্ দিলো নির্বাচন কমিশন। আমাদের আশঙ্কাই ঠিক হলো-এই সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচনী মাঠ বিরান ভূমিতে পরিণত করবে আওয়ামী চেতনায় সাজানো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা। তবে আমরা সকল বাধা অতিক্রম করে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ভোটের লড়াই করে যাবো। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণই আমাদের শক্তি।
তিনি বলেন, সারাদেশে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে মহড়া দিচ্ছে। এসব অপরাধের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তারা মিথ্যা মামলা দায়ের ও গণগ্রেফতারের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রেফতারের নামে মানুষকে পণ্য বানিয়ে বাণিজ্য করছে পুলিশ। বিনা কারণে পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশ আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। নতুন নতুন মামলায় বিস্ফোরক ও মাদক দিয়ে কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এসব জানিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। পুলিশ নির্বাচন কমিশনের কোনো কথা শুনছে না বা নির্বাচন কমিশন তাদের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না। আওয়ামী লীগের সব কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গণগ্রেফতার বন্ধ করতে বললেও পুলিশ এসব আমলে নিচ্ছে না। প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন একাকার। পুলিশ, সরকারি অফিসার ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি ও ফ্রন্টের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। রিটার্নিং অফিসাররা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় তৈরী করছেন না।
রিজভী বলেন, পুলিশের প্রতি আমাদের অনুরোধ, নির্বাচনী হাওয়া কাদের অনুকূলে বইছে সেটি উপলদ্ধি করতে চেষ্টা করুন। আপনারে সরকারের কথা বিশ্বাস করে জনগণের প্রতিপক্ষ হবেন না। জনগণের পক্ষে দাঁড়ান। দু:শাসনের অবসানের জন্য আপনারাও অবদান রাখুন।
আর নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি- অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েই ৫৪টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ হলো তাদের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা সহ্য না করা। ‘৭৫ সালে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। এবার দলদাশ মিডিয়াদের দিয়ে স্তুতি প্রচার নির্বিঘ্নে করতে ৫৪ টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণ করলেন, ‘বাকশাল মরিয়াও মরে নাই’!
এছাড়া নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, সিরাজাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, নেত্রকোণা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, যশোর, খুলনা, ঢাকা জেলা ও মহানগর, সিলেট, জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বিএনপির নির্বাচনী প্রচার ও নির্বাচনী অফিসে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ ভাংচুর করে এবং ধানের শীষের কমীদের হুমকি দেয় বলে রিজভী অভিযোগ করেন। তিনি অবিলম্বে এসব কর্মকান্ড বন্ধ করে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।