২১৬জন যাত্রী নিয়ে আটলান্টিকে হারিয়ে যাওয়া এয়ার ফ্রান্স বিমানে কি ঘটেছিল সেদিন?

flightসময়টা ২০০৯, ৩১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো বিমান বন্দর থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিমানটি আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে পরদিন সকালে ২১৬ জন যাত্রীকে নিয়ে প্যারিসের চার্লস দে গলে (Charles de Gaulle) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করার কথা।

সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। বিমানবালাগণ ইতিমধ্যেই রাতের খাবার পরিবেশন করেছেন। বেশিরভাগ যাত্রীই তখন রাতের খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছেন। শীতল আটলান্টিকের ওপর দিয়ে গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে প্যরিসের উদ্দেশ্যে উড়ে চলেছে এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭। কিন্তু হঠাৎ করেই রেডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ বিমানটি। মাঝরাতে খবর হলো এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পরদিন সকালে বিমানটির অবতরণের সময় পার হয়ে গেলেও বিমানটি বেমালুম নিখোঁজ হয়ে আছে। ঘটনাটি ম্যাজিকের মত ঘটে যায়। এমনকি নিখোঁজ হবার পূর্বে বিমানের পাইলটদের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য বা সন্ত্রাসী আক্রমণের মত কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। নানান উৎকণ্ঠা, সংশয় আর সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে সকলের মাঝে।

ফ্রান্সের গোয়েন্দা বিভাগও তাৎক্ষণিকভাবে মাঠে নামে সন্ত্রাসী আক্রমণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য। কিন্তু বিমানের যাত্রীদের তথ্য যাচাই করে সন্দেহজনক কিছুই নজরে এলো না। অন্যদিকে সকাল হতেই বিমান বন্দরে ভীড় জমতে থাকে যাত্রীদের পরিবার পরিজনের। প্রিয়জনের এ রহস্যময় হারিয়ে যাবার ধাঁধার উত্তর পেতে শুরু হয় দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর। খোঁজ মিলবে কি কোথায় হারিয়ে গেল এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭? হতভাগ্য যাত্রীদের ভাগ্যেই বা কি ঘটেছিল সে রাতে?

এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ নিখোঁজ হবার সংবাদ প্রকাশের পর বিমান বন্দরে যাত্রীদের পরিবার পরিজনের আহাজারী

এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ নিখোঁজ হবার সংবাদ প্রকাশের পর বিমান বন্দরে যাত্রীদের পরিবার পরিজনের আহাজারী

একটি ব্যার্থ অনুসন্ধান অভিযান

রাডারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে প্রথম যে কাজটি সাধারণত করা হয়ে থাকে সেটি হলো বিমানটি শেষ অবস্থান যেখানে ধরা পড়ে, রাডারে নির্দেশিত সে স্থান হতে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা। এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর ক্ষেত্রেও সে পদ্ধতি অনুসরণ করা হলো। সর্বপ্রথম অনুসন্ধান বিমান পাঠানো হলো আটলান্টিক সাগরে। অন্যদিকে ফ্রান্স থেকে উড়ে এলো তদন্তকর্মকর্তাগণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্ত হলো বহুজাতিক এ উদ্ধার অভিযানে। সে মুহূর্তে আকাশে উড়ছে প্রায় ৬০০ এয়ারবাস ৪৪৭। ফলে হারিয়ে যাওয়া এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ যদি কোন যান্ত্রিক বা নকশাগত ত্রটির কারণে ধ্বংস হয়ে থাকে সেটি দ্রুত নির্ণয় করা না গেলে অন্যান্য এ সিরিজের অন্যান্য এয়ারক্রাফ্টগুলোও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশ্বের সেরা সব অনুসন্ধানকারী আটলান্টিকের বুকে এক হয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে গেলেও রহস্যময়ভাবে বিমানটির হারিয়ে যাবার কোন কূল কিনারা বের করা সম্ভব হলো না।

জলে ব্রাজিলের নৌ-বাহিনী অন্যদিকে আকাশ হতে ১২টি বিমান দিনরাত বিরামহীনভাবে নজর রেখে চলেছে নিখোঁজ বিমানের কোন চিহ্ন পাবার আশায়। কিন্তু পাঁচ দিন পরেও বিমনের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না এমনকি মিলল না কোন ধ্বংসাবশেষও। অবশেষে ষষ্ঠতম দিনে বলা যায় ভাগ্য প্রথমবারের মত কিছুটা সহায় হলো। ব্রাজিলের নৌ-বাহিনী প্রথমবারের মত সমূদ্রে ভেসে থাকা বিমানের ক্ষুদ্র কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন। সাথে ৫০ জন বিমান যাত্রীর মৃতদেহ। অনুসন্ধান কার্য্ক্রম কিছুটা আলোর মুখ দেখলেও এর থেকে বিস্তর কোন তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হলো না। তবে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেল যে, বিমানটি আটলান্টিকের বুকেই বিধ্বস্ত হয়েছে এবং প্রত্যেক যাত্রীই সম্ভবত নির্মম মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করে নিয়েছেন।

এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর ধংসাবশেষ উদ্ধারে ব্রাজিলের নৌ-বাহিনী।প্রথমবারের মত বিমানের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের পর অনুসন্ধান কার্যক্রম আরো জোরালোভাবে পরিচালিত হতে থাকে। সকলের আশা তখন বাকী হতভাগ্য যাত্রীদের মৃতদেহ উদ্ধার করে হয়ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। একই সাথে তদন্ত কর্মকর্তাদের নজর বিমানের ব্ল্যাক বক্সটি উদ্ধারের ওপর। কারণ এই উজ্জ্বল কমলা রঙের জিনিসটিই পারে হতভাগ্য বিমানটির ভাগ্যে শেষ মুহূর্তে কি ঘটেছিল এবং তার পেছনের কারণকে উদঘাটন করতে। কিন্তু ভাগ্যদেবী আবার হয়ত আটলান্টিকের গভীর জলে ডুব দিলেন। ৩০ দিন পেরিয়ে গেলেও ব্ল্যাক বক্স, বিমানের মূল অংশের কোন ধ্বংসাবশেষ এমনকি কোন যাত্রীর মৃতদেহও খুঁজে পাওয়া গেল না। আটলান্টিক এর বুকে হারিয়ে যাওয়া এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর রহস্য আদৌ মীমাংসা করা সম্ভব হবে কিনা এটা নিয়ে সংশয় দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকলো।

তবে সংশয় এবং অনিশ্চয়তার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যেতে থাকে ফ্রান্সের তদন্তকারী দলটি। উদ্ধার কাজে এসে যুক্ত হয় ফ্রান্সের নৌবাহিনীর পারমাণবিক সাবমেরিনসহ আরো দুটি ছোট সাবমেরিন। সময়ের সাথে বাড়তে থাকে খরচও। এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ হতে চলেছে বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কার্যক্রমের ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল একটি মিশন। এতকিছুর পরও তৎকালীন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং বিশ্বসেরা সব অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের নাগালের বাইরেই থেকে যায় বিমানটি। ধীরে ধীরে ঘনীভূত হতে থাকে হতাশার গ্লানী।

ফ্রান্সের অনুসন্ধান মিশনে নেতৃত্বদানকারী উর্ধতন কর্মকর্তা ফেরান্তে (Olivier Ferrante) দ্যা গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মধ্যে দিয়ে বোঝা যায় গোটা দলটি কতটা মরিয়া এবং হতাশার মধ্যে দিয়ে তাদের মিশনকে সামনে নিয়ে চলেছিল।

“Our mission is to find out what happened as quickly as possible to prevent another possible accident so time is our enemy and for five long days until the first pieces of floating debris were found, we hadn’t a clue,”

অবশেষে উদ্ধার

এই উদ্ধার অভিযানে সর্বশেষ এসে যুক্ত হয় আমেরিকার একদল বিশেষজ্ঞ ডুবুরি। এ দলটি ১৯৮৫ সালে টাইটানিক এর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার অভিযানেও অংশ নিয়েছিল। এই আমেরিকান ডুবুরি দলের হাত ধরেই দু’বছর পর ২০১১ এর এপ্রিলে অবশেষে বিমানের মূল অংশের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রায় ১৩ হাজার ফুট পানির নিচে সন্ধান মেলে বিমানটির গুরুত্বপূর্ণ ধংসাবশেষের এবং উদ্ধার করা হয় হতভাগ্য ১০৪ জন যাত্রীর মৃতদেহের। যখন মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হয় তখনও সেগুলি সিটবেল্ট বাধা অবস্থায় এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর যাত্রী আসনে অবস্থান করছিল।

তবে সবচে বড় আশার কথা, এবারের আবিষ্কারের মধ্যে বিমানের ব্ল্যাক বক্সটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সস্তির আভাস দেখা যায়। প্রায় হারিয়ে যেতে বসা অমীমাংসীত রহস্যের হয়ত কিছু কূল-কিনার বের করা সম্ভব হবে এবার। ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হবার পরপরই অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের সাথে সেগুলো বিশেষ বিমানে সেদিনই ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সমগ্র বিশ্ব অপেক্ষা করতে থাকে অমীমাংসীত প্রশ্নগুলোর উত্তরের আশায়। দূর্ঘটনার রাতে ঠিক কি হয়েছিল হতভাগ্য বিমান যাত্রীদের সাথে! কি কারণেই বা এমন রহস্যময় ভাবে বিমানটি হারিয়ে গেল আটলান্টিকের বুকে? সকলেই উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন কখন মিলবে উত্তর।

সেদিন রাতে কি হয়েছিল?

এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো বিমান বন্দর ছেড়ে যাবার প্রায় মাঝ রাতে তরুণ কো-পাইলট পেয়েরে বোনিনের হাতে বিমান পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অন্যদিকে বিমানের যাত্রীগণও রাতের খাবার শেষে তখন বিশ্রাম নিচ্ছেন, ঘুমিয়ে আছেন। গোটা বিমানটি দীর্ঘরাত আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ফ্রান্সের মাটিতে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করছে। সবকিছুই শান্ত স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে চলছিল।

আটলান্টিকের বরফশীতল আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বিমানটি হঠাৎ খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে যায়। বিমানের গতি প্রদর্শনকরী যন্ত্রে বরফ জমে তা ঠিকমত কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর অনভিজ্ঞ তরুণ পাইলট তখন ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। ককপিটে একটির পর একটি এলার্ম বেজে উঠছে। এলার্মের শব্দে বিমানের ক্যাপ্টেন পাইলট ডুবোইস জেগে ওঠেন। বিমানের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালাতে থাকে তিনি। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বিমানটির অটোপাইলট সিস্টেম কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ স্থির (stall) অবস্থায় চলে যায়। পাইলটদের সব চেষ্টা অগ্রাহ্য করে বিমানটি আটলান্টিকের বুকে প্রবল বেগে নেমে আসতে থাকে। বিমানটির সাগর পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার গতি এতটাই প্রবল ছিল যে সিট বেল্টে বাঁধা অনেক যাত্রীর শরীরের উপরের অংশ কোমর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাগরের বুকে আঘাত হানার সাথে সাথে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে তলিয়ে যেতে থাকে আটলান্টিকের অন্ধকার গর্ভে।

সাগরের তলদেশে খুঁজে পাওয়া ফ্লাইট ৪৪৭ এর একটি ল্যান্ডিং গিয়ার

সাগরের তলদেশে খুঁজে পাওয়া ফ্লাইট ৪৪৭ এর একটি ল্যান্ডিং গিয়ার

পরবর্তী তদন্তে বেরিয়ে আসে যে টিউবটিতে বরফ জমে দূর্ঘটনার সূচনা হয়েছিল তা ইতিপূর্বেই এয়ার ফ্রান্সের এই মডেলের প্রত্যেকটি বিমান থেকে রিপ্লেসমেন্টর (replacement) জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। হয়ত প্যারিসে পৌঁছালেই নতুন মডেলটি সংযোজিত হতো বিমানটিতে। অন্যদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ মনে করেন হয়ত বিমানের ক্যাপ্টেন সময়মত জেগে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করলে এতবড় বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারতো। বিমানের ক্যাপ্টেন ডুবোইস (Marc Dubois) একজন অভিজ্ঞ পাইলট হওয়া সত্ত্বেও তিনি সময় পেয়েছিলেন অত্যন্ত কম। ফলে তার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বলা যায় গোটা ঘটনাটি প্রায় নিমিষের মধ্যেই ঘটে যায়।

তদন্তে নেতৃত্ব প্রদানকারী অনেক কর্মকর্তা মনে করেন যান্ত্রিক গোলযোগ থাকা সত্ত্বেও এটি একটি পরিত্রাণ যোগ্য পরিস্থিতি ছিল। এক্ষেত্রে তারা দূর্ঘটনার জন্য বিমানের পাইলদেরকে অনেকাংশে দায়ী বলে মতামত দেন। পরিস্থিতি সামাল দেবার মত পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার অভাব ছিল বলেও অনেকে তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন।

ফ্রান্সের তদন্তকারী সংস্থা ২০১২ তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে দূর্ঘটানার কারণ হিসেবে যান্ত্রিক গোলযোগের পাশাপাশি এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ বিমানের পাইলটদের সংকটকালীন সময়ে পরিস্থিতি সামাল দেবার মত উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবার ব্যার্থতাকেও দায়ী করা হয়। পাশাপাশি বিমানের উচ্চতা ও গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রগুলোকেও দূর্ঘটনার অন্যতম মূখ্য কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।

আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট গভীর থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর ব্ল্যাক বক্স।

আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট গভীর থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর ব্ল্যাক বক্স।

তদন্তের প্রধান কর্মকর্তাও এঘটনার জন্য যান্ত্রিক গোলযোগের পাশাপাশি ক্যাপ্টেনকেও দায়ী করেন। তার মতে আটলান্টিক এর ঝড়ো পরিবেশের মধ্যে কো-পাইলটকে দায়িত্বে রেখে বিশ্রামে যাওয়া চরম অপেশাদারিত্বের বহি:প্রকাশ। তার মতে ক্যাপ্টেন শুরু থেকেই ককপিটে দায়িত্বে থাকলে হয়ত গল্পটা ভিন্নভাবে শেষ হতে পারতো।

এ দূর্ঘটনার জন্য আমরা যে কারণকেই দায়ী করা হোক না কেন তার মূল্য দিতে হয়েছে বিমানের সকল যাত্রীকে। দূর্ঘটনার পর এয়ার ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পাশাপাশি পাইলটদের পেশাদারিত্বের মানোন্নয়নেও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে এয়ার লাইন্সগুলো। প্রায় ২ বছর ধরে চলা এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর উদ্ধার অভিযানে ব্যয় হয় প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার।

এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ এর হতভাগ্য যাত্রীদের পরিবারকে সান্তনা দেওয়া হয়ত কোনভাবেই সম্ভব নয়, তবে আমরা ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের বিপর্যয়ের মুখে না পড়ি সে প্রার্থনা করতে পারি। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি আর দক্ষ অনুসন্ধানকারীদের সাথে নিয়েও এ উদ্ধার অভিযানটি শেষ হতে প্রায় ২২ মাস সময় লেগেছিল। বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে উদ্ধারকারী ও অনুসন্ধানকারীগণ একত্রিত হয়েছিলেন বিমান দূর্ঘটানার ইতিহাসে অন্যতম সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল এ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে।

সময়ের সাথে আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়লেও এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিয়েও প্রকৃতির কাছে আমরা কতটা অসহায়। এই দুর্ঘটনার অন্তত একটা উপসংহার এসেছে যেটা আমরা অন্তত এখনো মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩৭০ এর জন্য আনতে পারিনি।

Share this post

scroll to top