আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে অবস্থিত পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের দিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ফল পেতে কোন দল কোন কেন্দ্র পরিদর্শন করবে, তা সমন্বয়নের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে। নির্বাচনী পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে দূতাবাসগুলো স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সহায়তা নেয়ার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের ওপরেও নজর রাখবে।
তবে দূতাবাসগুলোর ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন প্রচলিত অর্থে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে তারা নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের মতো প্রকাশ্যে কোনো প্রতিবেদন দেবেন না। দূতাবাসগুলোর প্রতিবেদন যাবে নিজ নিজ দেশের সদর দফতরে। বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের সাথে সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব প্রতিবেদন বিবেচনায় নেয়া হবে।
চলতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ইইউ সবচেয়ে বড় পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছিল। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইইউর ১৪৬ জনের পর্যবেক্ষক মিশন ছিল। এ মিশন দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্প মেয়াদে ভাগ হয়ে সারা দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল। মিশনটি স্থানীয় পর্যবেক্ষকদেরও কাজে লাগিয়েছিল। পেশাদারিত্বের কারণে ইইউর পর্যবেক্ষক মিশনের প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়।
এবার ইইউ দু’জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশী কূটনীতিকসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে মতবিনিময় করছেন। বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন ব্রাসেলসে ইইউ সদর দফতরকে দেবে। এবার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও বাজেট স্বল্পতার কারণে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানো থেকে বিরত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বিদেশী পর্যবেক্ষক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছোট আকারের ১২টি পর্যবেক্ষক দল আসবে। এ ছাড়া স্থানীয় দূতাবাস থেকে ৮ থেকে ১০টি দল ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলগুলোকে সহায়তা করবে। এনডিআই গত অক্টোবরে পাঁচ সদস্যের প্রাক-মূল্যায়ন দল বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল। চলতি মাসে আরো একটি দল এসেছে। এনডিআইর অংশীদার দ্যা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনের (এনফ্রেল) দু’জন আন্তর্জাতিক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ঢাকায় আছেন। সংস্থাটি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে। ব্রিটেন ও সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র ১৫ হাজার স্থানীয় পর্যবেক্ষককে অর্থায়ন করবে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র বা কমনওয়েলথ রাজি হয়নি। এ সময় নির্বাচন কমিশনের শেষ ভরসা ছিল সার্কভুক্ত দেশগুলোর নির্বাচন কমিশনের সংগঠন ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (ফেমবোসা)। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ফেমবোসা থেকে ভারত ও ভুটানের চারজন পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে আসেন। এ সংগঠনের অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো অর্থাৎ আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কোনো প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসতে রাজি হয়নি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এই নেতিবাচক অবস্থানের কারণে নির্বাচন কমিশন ওই সময় স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়। এ সময় আট হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৩৫ হাজার স্থানীয় পর্যবেক্ষক অংশ নিতে পারেন।