অনেকে একা একা খেতে পারে না। তাদের মতে, একা একা খাওয়ার মত ‘বোরিং’ কাজ আর নেই।
কিন্তু না চাইলেও দিন দিন মানুষ একা একা খেতে বাধ্য হচ্ছেন, অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কারণ সারা পৃথিবীতে এক সদস্যের পরিবারের সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
জাতিসঙ্ঘ এবং ওইসিডির পরিসংখ্যানে দেখো যাচ্ছে, পৃথিবীতে এখন ৩০ কোটি মানুষ একা থাকেন। এবং বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের অর্ধেক একা বসে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সারেন।
কিন্তু একাকী খাওয়া কি খারাপ কিছু?
বিবিসির খাদ্য বিষয়ক অনুষ্ঠানের শিলা ডিলান বলছেন, একা বসে খাওয়াটা বরঞ্চ ভালো। আটটি কারণ দিয়েছেন তিন –
১. আপনি আপনার খুশিমত খাবার খেতে পারেন
একা বসে খেলে অন্য মানুষ কী পছন্দ করে সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না। ধরুণ আপনার শুটকি মাছ খেতে ইচ্ছা করছে। বহু মানুষ শুটকির গন্ধ একবারেই পছন্দ করেন না। ঘরে ঢোকেনই না। কিন্তু শুটকি যার পছন্দ তিনি একা বসে খেলে এ নিয়ে তাকে ভাবতে হবে না।
রান্না নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে পারেন। অন্যের বিবেচনার আশঙ্কায় থাকতে হবে না। কে জানে এভাবেই আপনি হয়তো সৃজনশীল রাঁধুনী হয়ে উঠতে পারেন!
২. খাবারের ভাগ দিতে হবে না
আপনার অত্যন্ত প্রিয় একটি খবার হয়তো আপনি অর্ডার দিলেন। দেখা গেল, বন্ধুরা এসে তার সিংহভাগই সাবাড় করে দিল। আপনার জন্য পড়ে থাকলো তলানি।
অনেক সময় খাবারের ভাগ দেওয়া আত্মতৃপ্তির ব্যাপার, কিন্তু এক টুকরো মাছের চপের বদলে প্রিয় স্টেকের ২০ শতাংশ দিয়ে দিতে সবসময় মন চায়না।
৩. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া সুবিধা হয়
আপনি যদি ডায়েট করতে চান, তাহলে একা খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
আমেরিকার হৃদরোগ সমিতির গবেষণা বলছে, দলে বসে খেতে গিয়ে ৬০ শতাংশ মানুষের ডায়েট চার্ট ভেস্তে যায়। আরেকটি গবেষণা বলছে, দল বেঁধে খেলে মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি খায়, চর্বিযুক্ত খাবারও বেশি খায়।
৪. নিজের পছন্দের গতিতে খেতে পারেন
গবেষণায় দেখা গেছে, একসাথে খেতে বসে মানুষ অন্যের খাওয়ার গতির সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করে।
ফলে অন্যের খাওয়ার অভ্যাস, খাওয়ার পরিমাণ দ্বারা প্রভাবিত হয়, নিয়ন্ত্রিত হয়। একা খেলে সেটি হয় না।
৫. খাবারের স্বাদ-গন্ধ আস্বাদন করা সহজ হয়
অন্যের সাথে খেলে তার গল্প শুনতে হতে পারে। খাবারের স্বাদ-গন্ধের দিকে মনযোগ দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
৬. একা বাইরে খেতে যাওয়া আনন্দের হতে পারে
একা একা রেস্তোঁরায় খাওয়ার জন্য অবশ্য অভ্যাস করতে হয়।
কিন্তু একবার তা হয়ে গেলে মন্দ নয়। একা বসে খাবেন, আর চারপাশে কী হচ্ছে তা উপভোগ করবেন।
৭. অন্যের চিবোনোর শব্দ শুনতে হয় না
অন্যের খাওয়ার শব্দ যদি আপনার অস্বস্তির কারণ হয়, তাহলে এক একা খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে সেই অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেবে।
মুখ থেকে বেরুনো অন্যের চপ-চপ শব্দ আপনাকে শুনতে হবে না।
৮. যখন খুশি, যেখানে খুশি, যা খুশি খেতে পারবেন
চাইলে ভোর ৫টায় বাথটাবে বসে চা-রুটি খেয়ে নিতে পারেন। অন্যে কী ভাবলো – তা ভাবতে হবে না।
তবে সাবধান থাকবেন, পেঁয়াজ- রসুনের কড়া গন্ধওয়ালা খাবার খেয়ে যেন প্রতিদিন কাজে না যান। সহকর্মীরা বিরক্ত হতে পারেন।