ময়মনসিংহে আগামী ৩ দিন থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও সাগরে ঝড়ো হাওয়ার কারণে আগামী তিন দিন প্রায় সারা দেশে থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিরও আশঙ্কা আছে। এদিকে উপকূল অঞ্চল ও চরগুলোতে এক থেকে দুই ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। এসব কারণে সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য থাকার কারণে সাগর উত্তাল। সাগরে মাছ ধরাসহ এ ধরনের কাজ বিঘ্নিত হবে বলেই তিন নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, পশ্চিমা লঘুচাপ এবং বায়ু চাপের যে বিন্যাস, তাতে দেখা যায় যে বাংলাদেশসহ আশপাশের এলাকায় জলীয় বাষ্পের জোগান হচ্ছে। এই জোগান থেকেই মঙ্গলবার কালবৈশাখী ঝড় বৃষ্টি হয়েছে, আজও হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়ার এমন অবস্থা কমপক্ষে আরও দুই থেকে তিন দিন থাকবে। তবে সেটি টানা নয়। থেমে থেমে দিনে একবার ঝড় হতে পারে, বৃষ্টিও হতে পারে থেমে থেমে।
বুধবার (২৭ মে) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে দিনাজপুরে ১৪৫ মিলিমিটার। এছাড়া বগুড়ায় ৮৪, ঈশ্বরদী ও নেত্রকোনায় ৭৪, বদলগাছিতে ৭২, টাঙ্গাইলে ৬৫, ময়মনসিংহে ৬৪, ঢাকায় ৬৩, সিলেটে ৬২, চুয়াডাঙ্গায় ৬০, তাড়াশে ৫৮ এবং নিকলিতে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, তেতুলিয়া, ডিমলা, রাজারহাট, সাতক্ষীরা ও যশোরেও বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (২৬ মে) দিনগত মধ্যরাতে এবং বুধবার (২৭ মে) ভোরে তীব্র কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে। কোথাও কোথাও এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৭৭ কিলোমিটার পর্যন্ত। এরপর আজ সারা দিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে থেমে থেমে। কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে পড়েছে, কোথাও আবার বিদ্যুৎ গেছে বারবার।
আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় আরও বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য ও অমাবস্যার প্রভাবে রাতে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বুধবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়, বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।