পবিত্র নগরী মক্কায় দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানরত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সার্বজনীন ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ যে নামে মুসলিমদের ডেকেছেন সেটিই হতে হবে উম্মাহর একক পরিচয়। এর বাইরের সম্প্রদায়গত বিভেদ বা লেভেল এটে দেয়া অথবা অনৈক্য সৃষ্টির মতো কাজকে দূরে ঠেলে রাখতে হবে।
গতকাল বুধবার মক্কার মসজিদুল হারাম সংলগ্ন হোটেল জেবেল ওমর হিলটনের কনফারেন্স সেন্টারে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পবিত্র নগরী মক্কা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বেসরকারী ইসলামী সংগঠন মুসলিম ওয়াল্ড লীগ “ইসলামী ঐক্য – লেবেল দেয়া আর বর্জনের বিপদ” শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের প্রতিনিধি হিসাবে মক্কার গভর্নর ও খাদেমুল হারাইনের উপদেষ্টা প্রিন্স খালেদ আল ফয়সল সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের সুপ্রিম কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সৌদি গ্রান্ড মসজিদের খতিব শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ শায়খ, মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আলিসা, আমিরাতের ফতুয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শায়খ আবদুল্লাহ বায়াহ, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসুফ বিন আহমদ আল ওতায়মিন, মিসরের গ্রান্ড মুফতি ড. শাউকি আলম, আলজেরিয়ার সুপ্রিম ইসলামিক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ড. বাইবদাল্লাহ গোলাম-আল্লাহ, লেবাননের গ্রান্ড মুফতি শায়খ আবদুল লতিফ ডেরাইনে। সম্মেলনে ১২৭টি দেশের এক হাজারের বেশি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী ও একাডেমিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করছেন।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মুসলিম উম্মাহর এই সঙ্কট সময়ে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ নাম ও পরিচয়ে ফেরত যেতে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। পরাক্রমশালী আল্লাহ আমাদেরকে এক মুসলিম নামেই ডেকেছেন। সাম্প্রদায়িক পরিচয় ও বিশেষ গোষ্ঠীর লেবেল দিয়ে বর্জনের যে প্রবণতা তাতে উম্মাহর কোনো কল্যাণ হবে না।
বক্তারা আরো বলেন, ঐক্য মুসলিম উম্মাহকে কার্যকর ও স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করে তুলতে পারে। তবে এই ঐক্য সংহতি, যৌথ উদ্যোগ ও কর্মকান্ডের মাধ্যমেই সম্ভব হবে। আমাদের মতপার্থক্যের যে সব বিষয় রয়েছে সেগুলিকে সংলাপের মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি ও সংশোধন করতে হবে। উগ্রপন্থা ও তাকফিরি বিদ্রোহের সাথে যুক্ত করার জন্য একে অন্যকে অভিযুক্ত করার প্রবণতা সবাইকে পরিহার করতে হবে। একই সাথে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা বিদ্বেষ ও বর্জন করার প্রবণতাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
মুসলিম ওয়াল্ড লীগের সেক্রেটারি জেনারেল শায়খ মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আলিসা তার মুল প্রবন্ধে বলেন, ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব সংঘাত সৃষ্টির প্রকল্প মোকাবেলার জন্য উম্মাহকে একটি ব্যাপকভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাধারার অনুসারীদের মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেল গড়ে তুলতে হবে। যার লক্ষ্য হবে সকল বিশ্বাসীদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করা।
তিনি বলেন, একটি সাধারণ ঐক্য গড়ার জন্য দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দূরত্ব ভেঙ্গে ফেলতে হবে। আর একক অবস্থানের অধীনে মুসলমানদের ঐক্যের ধারা ও রীতিনীতিগুলিকে জোরদার করতে হবে। সংযমের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সাদৃশ্যের বন্ধনকে জোরদার করতে হবে এবং পরিত্যাগ করতে হবে শত্রুতা ও বিভাজনের অহংকার।
মুসলিম পণ্ডিত, ধর্ম প্রচারক ও চিন্তাবিদ এবং তাদের মতামতকে একত্রিত করা সম্মেলনের উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বৈচিত্র্য ও বহুত্ববাদের মাধ্যমে আল্লাহর সর্বজনীন আইন সম্পর্কে যথাযথ উপলব্ধি করে এটি অর্জন করতে হবে।
সম্মেলনে বলা হয়, আজকের পরিস্থিতিতে সব মুসলিমকে একত্রিত করার দায়বদ্ধতাকে বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে হবে। আর অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথেও মুসলমানদের সর্বোত্তম পদ্ধতিতে সহযোগিতা করা উচিত। একই সাথে চরমপন্থা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের সকল রূপ প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
সম্মেলনে বলা হয়, বৈজ্ঞানিক, মতাদর্শিক ও সামাজিক সংযম প্রচারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং ইসলামের সত্যিকারের সহনশীল রূপ প্রদর্শন করতে হবে। সব ধরনের বৈষম্য, ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িক দ্বন্ধ নিরসনের জন্য বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।