ময়মনসিংহের ভালুকায় গণধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে লিপি আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে দুজন এ তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন রকিবুল ইসলাম (১৯), হৃদয় মিয়া (১৮), জয়নাল (২০), মামুন (১৮) ও রাব্বি (২২)। হৃদয়ের বাড়ি ধোবাউড়া উপজেলার হরিণধরা গ্রামে। তিনি উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। এ ছাড়া অন্যদের বাড়ি ভালুকা উপজেলায়।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ বিকেলে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর পূর্ব পাশে বিলাইজোড়া খালের সেতুর পাশ থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন নূর হোসেন নামের এক ব্যক্তি লাশটি তাঁর মেয়ে লিপি আক্তারের বলে শনাক্ত করেন।
নূর হোসেনের বাড়ি উপজেলার কংশেকুল গ্রামে। তিনি পরিবার নিয়ে জামিরদিয়া এলাকায় থাকেন। লিপি পাশের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় এ এ ইয়ার্ন নামের একটি কারখানায় চাকরি করতেন। ১৫ মার্চ লিপি নিখোঁজ হন। ১৭ মার্চ লিপির বাবা গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ২০ মার্চ (লিপির লাশ শনাক্তের দিন) নূর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
৬১ দিন পর গত বৃহস্পতিবার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রকিবুল ইসলাম ও হৃদয় মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার জয়নাল, মামুন ও রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। রকিবুল ও হৃদয় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার এসআই ইকবাল হোসেন বলেন, রকিবুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে লিপি আক্তারের। তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর লিপি বিয়ের জন্য চাপ দিলে রকিবুল যোগাযোগ কমিয়ে দেন। গত ১৪ মার্চ রকিবুল আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে লিপিকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। পরের দিন রাত ১০টায় লিপির কারখানা ছুটি শেষে ভালুকা উপজেলার কড়ুইতলা মোড়ের উত্তর পাশে একটি গভীর বাগানে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে লিপির হাত বেঁধে রাব্বি, মামুন, রকিবুল, আশিক, হৃদয় ও জয়নাল ধর্ষণ করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই লিপির মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৬ মার্চ রাত ১০টায় লিপির লাশ বিলাইজোড়া খালের সেতুর পাশে ফেলে রেখে যান আসামিরা।
এ বিষয়ে মামলার তদারক কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, লিপি হত্যা মামলাটি ছিল ক্লু-লেস। রহস্য উদঘাটনে বেশ বেগ পেতে হতে হয়েছে। কারণ, ওই মেয়ের পরিবারের অন্য সদস্যরা বাক্-প্রতিবন্ধী। তারা কোনো ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেনি। মামলার রহস্য উদঘাটন করতে একদিকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে, অন্যদিকে তদন্ত কর্মকর্তাকে ছদ্মবেশ ধারণ করে আসামি শনাক্ত করতে হয়েছে।