শিশু-কিশোর বা তরুণ-তরুণীর মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বা উদ্বিগ্নতা দেখা দিলে, সেটা কাটিয়ে উঠতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে দাদা-দাদী বা নানা-নানী। এ কারণে শিশু বা অল্পবয়সীদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিলে তাদের দাদা-দাদীর সংস্পর্শে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
টেলিফোন হেল্প-লাইন পরিষেবা চাইল্ড-লাইনের প্রতিষ্ঠাতা ডেইম এস্থার রান্টজেন বলেছেন, “যৌথ পরিবারের ভেঙে যাওয়ার কারণে এবং নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের সহচর্যের অভাবে শিশুদের বেড়ে ওঠা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
তার মতে, শিশুদের দাদা-দাদীর সাথে দেখা করার আইনগত অধিকার দেয়া উচিত। যেটা কি-না ফ্রান্সে আছে।
তিনি বলেন, অনেক মা-বাবা এতোটাই ব্যস্ত থাকেন যে তারা শিশুদের মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকানো যায়
চাইল্ড-লাইন পরিচালনাকারী দাতব্য সংস্থা এনএসপিসিসির হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে শিশুদের উদ্বেগ কাটাতে সহযোগিতার চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
এই প্রতিষ্ঠানটি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভুগছে এমন তরুণদের জন্য গত দুই বছরে ২১ হাজারেরও বেশি সেবা দিয়েছে।
তারা মূলত টেলিফোনের মাধ্যমে আক্রান্তের সাথে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করে যা প্রাথমিক অবস্থায় অনেককেই আত্মহত্যা থেকেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
এ থেকে আন্দাজ করা যায়, একজন অপরিচিত মানুষের সাথেও মন খুলে কথা বলতে পারার সুযোগ কতোটা সহায়ক হতে পারে। আর সেই মানুষটা যদি পরিবারের কাছের মানুষ হয়, তাহলে তো কথাই নেই।
পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা
প্রতিনিয়ত মানসিক উদ্বিগ্নতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সেক্ষেত্রে এ ধরণের হেল্প-লাইন পরিসেবা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ডেম এস্থার। এক্ষেত্রে তিনি পরিবারের ভূমিকাকে সবচেয়ে বড় করে দেখছেন।
ডেম এস্থার বলেছেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমি যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছিলাম। আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে মা-বাবার সাথে কথা বলতে পারতাম না, সেটা নিয়ে হয়তো পরিবারের অন্যদের সাথে কথা বলতাম। সেই সুযোগটা আমার ছিল।”
তাই পরিবারগুলোর আসলে বোঝা উচিত যে শিশু বা তরুণ সদস্যদের যথেষ্ট মানসিক সহায়তা দেয়ার মতো অবস্থা তাদের রয়েছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
সহায়ক ভূমিকা পালন
“মানুষ সারা দিন ব্যস্ত থাকে- অনেকেই দুই থেকে তিনটা চাকরি করে থাকেন, অথবা তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে হয়তো তার পরিবার থাকে না। আবার অনেককেই চাকরির কারণে পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। এমন নানা কারণে দিন দিন পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
আবার ছোট পরিবারগুলোর সদস্যরাও সময় দিতে না পারার কারণে এক ধরণের বিচ্ছিন্নতায় ভুগছে।
ডেইম এস্থারের মতে, আজকাল বড় পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে এবং পরিবার একীভূত রাখাটাকে এখন আর কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না।
অথচ এটা সত্যি যে, শিশুদের মানসিক বিকাশে বা উদ্বিগ্নতা কাটাতে এই বড় পরিবারের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, “যে পরিবারের শিশুরা দাদা-দাদী বা নানা-নানীর সংস্পর্শে বেড়ে ওঠে তারা বুঝতে শেখে যে জীবনকে তারা যতোটা জটিলভাবে, জীবন এতোটা জটিল না।”
আবারও যোগাযোগ স্থাপন
বর্তমান পরিস্থিতিতে নবীনদের মানসিক সুস্থতার জন্য দাদা-দাদী বা নানা-নানীর সাথে দেখা করাটাকে অধিকার হিসেবে দেখতে চাইছেন ডেম এস্থার।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন প্রত্যেক শিশুকে তাদের দাদা-দাদীর সাথে যোগাযোগ রাখার অধিকার দিতে হবে, যেটা কিনা ফ্রান্সে আছে।”
ডেম এস্থার এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে দিন দিন বাড়তে থাকা পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে ওই শিশুদের সাথে দেখা করার জন্য তাদের দাদা-দাদীকে অনেক সময় আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
তবে ফ্রান্সের মতো দেশে, সবারই তাদের দাদা-দাদীর দেখা করার অধিকার রয়েছে। এবং এই নিয়ম যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ডেম এস্থার।
তিনি বলেন, “ডিউক অব ক্যামব্রিজ এবং ডিউক অফ সাসেক্সসহ উচ্চ মার্গীয় ব্যক্তিরাও এই সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছেন। পরিবারের বিচ্ছিন্নতা রোধ, সেইসাথে নবীনদের মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে খোলামেলা কথাবার্তার ওপরও জোর দিচ্ছেন তারা।”
ডেইম এস্থারের মতে, পরিবারের কেউ যদি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে এবং দ্রুত যদি এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে যে কারো মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দেখা দিতে পারে।