সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জীবাণুনাশক টানেল ব্যবহার বন্ধে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, মানবদেহ জীবাণুমুক্তের নামে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত জীবাণুনাশক ব্যবহার বন্ধ হওয়া জরুরি। এটা করা না হলে নাগরিকের স্বাস্থ্য দীর্ঘমেয়াদে ঝুকিতে পরতে পারে। করোনাকালীন সময়ে এই জাতীয় জীবাণুনাশক যন্ত্র সরবরাহ ও স্থাপন করে একটি চক্র দেশে এই ধরনের ঝুকিপূর্ণ পণ্যের বাজার তৈরি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে চায় বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে।
আজ বুধবার স্বাস্থ্য সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব, বিদ্যুৎ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইইডিসিআরের পরিচালক, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ই-মেইল ও ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খানের দেয়া নোটিশে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। ইতমধ্যে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বনের কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি বক্স, চেম্বার, টানেল, গেইট ও বুথ এর মাধ্যমে সরাসরি মানুষের দেহে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে করোনার জীবানু দূর করার পদ্ধতি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিতে দেখা যাচ্ছে। গত ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে দেশের সব সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়ে জীবাণুনাশক টানেল ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু ১১ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ওই বিধিমালার এক নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে “প্রয়োজনীয় সংখ্যক জীবানুমুক্তকরণ টানেল স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রনালয়কে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে”। এক মাসের মধ্যে একই বিষয়ে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, হু মানবদেহে কোনোভাবেই ব্লিচ থেকে শুরু করে যে কোন ধরনের জীবাণুনাশকের ব্যবহার নিষেধ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এইরূপ জীবানুনাশকের প্রয়োগ চোখ এবং চামড়ার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। মানুষের পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান এবং সীমিত ভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারের কথা বলেছে হু। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) স্পষ্ট করে তাদের গাইডলাইনে জানিয়েছে তারা স্যানিটাইজিং টানেলের ব্যবহার সমর্থন করে না। এছাড়া তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, এরূপ জীবানুনাশক প্রয়োগে করোনার ভাইরাস ধ্বংসের কোন প্রমাণ নেই। স্যানিটাইজিং টানেলে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা থেকে চোখ, চামড়া এবং শ্বাস যন্ত্রের ক্ষতির কথা বলেছে।
ভারতের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিগত ১৯ এপ্রিল মানব দেহে জীবাণুনাশক ব্যবহার কোন প্রকারেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে। একই সঙ্গে এই ধরনের রাসায়নিকের মাধ্যমে তৈরিকৃত জীবাণুনাশক শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিকারক বলে নির্দেশনা জারি করেছে। মালয়েশিয়ান সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণাতেও মানবদেহে এইরূপ জীবানুনাশক প্রয়োগ বৈজ্ঞানিক ভাবে ভিত্তিহীন এবং ঝুকিপূর্ণ জানিয়ে যে কোন ডিভাইজের মাধ্যমে মানবদেহে জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং প্রয়োগ বাতিল করেছে।
নোটিশে বলা হয়, হু, সিডিসি থেকে শুরু করে পৃথিবীর কোথাও মানুষের শরীরে সরাসরি জীবাণুনাশক ব্যবহারের বিষয়টিকে ঝুকিপূর্ণ মনে করে বাতিল করছে, সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি বা বেসরকারি অফিসে জীবাণুনাশক ট্যানেল ব্যবহারের নির্দেশনা জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে। এতে নাগরিকের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । এই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বনে এক দিকে সরকারের প্রচুর অর্থের ব্যয় হবে এবং অন্যদিকে নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ঝুকিতে পড়বে ।
সেজন্য মানবদেহে ব্যবহার কিংবা প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত যে কোন ধরনের ডিভাইজ যেমন বক্স, চেম্বার, ট্যানেল, গেইট, বুথ নোটিশ প্রাপ্তির দুই দিনের মধ্যে বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।