বৈধ পাসপোর্ট ও তিন মাস মেয়াদের ভ্রমণ ভিসায় ভারতের আসাম রাজ্যের জোরহাট এলাকায় গিয়ে আটকে পড়া কুড়িগ্রামের চিলমারীর উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া গ্রামের ২৬ জন অধিবাসীর হদিস মিলেছে। তারা সবাই আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলা কারাগারে আছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ লিগ্যাল ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে ভারত জুড়ে লকডাউন থাকায় তারা আটকা পড়েন। ফলে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স আইনে ফৌজদারি মামলা করে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তিন মাস মেয়াদী ভ্রমণ ভিসা নিয়ে ব্যাপারীপাড়া গ্রামের অধিবাসী সাইফুল ইসলাম, ছবিয়ার রহমান, চাঁন মিয়া, বকুল মিয়া, আবুল ফরিশ, আনোয়ার হোসেন, রাজা মিয়া, মাইদুল ইসলাম, মানিক মিয়া, রেজাউল করিম, সহিদুল ইসলাম, নিরু মিয়া, হযরত আলী, আনারুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, নবিকুল ইসলাম, বিপ্লব মিয়া, এছানুল হক, আবু হানিফ, নুরুল হক, আবু বক্কর সিদ্দিক, আয়নাল হক, শাহ আলম, মো. হাফিজুর, আলম মিয়া ও ইউনুস আলী চলতি বছরের প্রথম দিকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী এবং ভারতের কুচবিহার জেলার চেংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে আসাম রাজ্যের জোরহাট এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে যান। এরপর করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সেখানে আটকা পড়েন তারা। এ অবস্থায় ভারতের দ্বিতীয় দফা লকডাউনের শেষ দিন ৩ মে কিছু সময়ের জন্য চেকপোস্ট খুলে দেওয়া হবে এমন খবরের ভিত্তিতে বাড়ি ফেরার জন্য জোরহাট থেকে চেংরাবান্ধার উদ্দেশে রওয়ানা দেন তারা। কিন্তু পথে ধুবড়ি জেলার চাপোর থানা পুলিশ তাদের আটক করে। এরপর ৫ মে সকাল ১০টার দিকে এবং ৬ মে দুপুর ২ টার দিকে ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বজনদের সাথে কথা বলতে দেয় ওই থানার পুলিশ। এরপর থেকে তাদের অবস্থা ও অবস্থানের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
এসএম আব্রাহাম লিংকন আরও জানান, ঘটনাটি জানার পর তাদের প্রত্যর্পণ চেয়ে গত ১৪ মে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং রাজশাহীস্থ ভারতীয় হাই কমিশনে আবেদন পাঠিয়েছেন তিনি।
এদিকে ভারতের আদালতে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলা খারিজ করে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন কোলকাতাস্থ বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিরিটি রায়।
কিরিটি রায় ভারতের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে- যতদিন মামলা খারিজ করে ওই ২৬ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না- ততদিন তাদের আশ্রয়শিবিরে রেখে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ-ভারত বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ লিগ্যাল ফোরামের আহ্ববায়ক ও কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম আব্রাহাম লিংকন।
উল্লেখ্য, ভারতে আটকে পড়াদের স্বজনরা তাদের ফেরত আনার জন্য সহযোগিতা চেয়ে গত ১৪ মে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের কলেজ মোড় এলাকায় মানববন্ধন করার পাশাপাশি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে লিখিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করেছিলেন।