ময়মনসিংহে করোনা শনাক্তের দ্বিতীয় পিসিআর ল্যাব চালু

Mymensingh-corona-update

বহু প্রত্যাশিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ২য় পিসিআর মেশিনটিতে চালু হয়েছে। একটি যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকায় চালু করতে ১৫দিন সময় বেশী লেগেছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) অধ্যক্ষ প্রফেরর ডাঃ চিত্তরঞ্জন দেবননাথ জানান, তিনি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ভারত থেকে দ্রুত নষ্ট যন্ত্রাংশটি এনে সংযোজনের পর অবশেষে ১৭মে থেকে পুরোদমে মেশিনটি দিয়ে নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দুটি পিসিআর মেশিন দিয়ে ৭টি স্লটে ও শিফটে মোট ৬৫৬টি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এটি একক প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে দেশের সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এতে ময়মনসিংহ বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ জন। ফলে এই ল্যাবে এখন নমুনা পরীক্ষার জটমুক্ত হয়েছে। গত ১ এপ্রিল ১ম পিসিআর ল্যাব চালূ হওয়ার পর ২য় ধাপে ১৮৮ টি নুমনা পরীক্ষা হয়ে আসছিল।

পরবর্তীতে ৩ধাপে ২৮২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখন থেকে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে অধ্যক্ষ ডাঃ চিত্তরঞ্জন দেবনাথ জানান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম আজিজ মহোদয়ের প্রচেষ্টায় আরো একটি পিসিআর মেশিন আমরা পেয়েছি। যার ল্যাবও প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন এই মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা ইনস্টলেশন করে চালু করলেও মমেকএ তৃতীয় পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেরর ডাঃ চিত্তরঞ্জন দেবনাথ আরো জানান এই মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা তদারকির জন্য ৫জন সিনিয়র চৌকস অধ্যাপককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- নেত্রকোণা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ শ্যামল কুমার পাল, মমেক কার্ডিওলজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল বারী, ফার্মাকোলজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শ্যামল কুমার সাহা, মমেক মাইক্রোবায়োলজি বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সালমা আহমাদ ও সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় পরিষদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় করোনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক, বি.এম.এ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এইচ. এ. গোলন্দাজ তারা জানান, মমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ চিত্তরঞ্জন দেবনাথের অত্যন্ত আন্তরিকতায় করোনা সনাক্তের পিসিআর ল্যাবটি অনেক গতি পেয়েছে। ভোর থেকে মধ্যরাত অবদি ল্যাবে পরীক্ষার বিষয়গুলোর প্রতি খোঁজখবর রাখছেন। তার উদ্যমে ডাক্তার ও টেকনিশিয়ানগণ কাজে উজ্জেবিত। তাই গতকাল দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা মমেক ল্যাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরো বলেন নমুনা পরীক্ষার অগ্রগতি হলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসার ভালোমানের হাসপাতাল এখনো নির্ধারিত হয়নি । তা অত্যন্ত দুঃখজনক। অনেক ডাক্তার নার্স আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। ব্যবস্থাপনার অভাবে তাদের হাসপাতালে তাদের সুষ্ঠু চিকিৎসা হচ্ছে না। যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ডাক্তাররা সুষ্ঠু চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন এবং কোনো ক্ষতির শিকার হলে এর দায়ভার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে বলে হুশিয়ার করে দেন ডাঃ এইচ. এ. গোলন্দাজ তারা।

করোনাভাইরাসের হটসপট এখন ময়মনসিংহ বিভাগ। আক্রান্ত, মৃত্যু, ঝুঁকি, আতংক এই বিভাগে সবই বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ মোঃ আবুল কাশেম জানান, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় গত ১৭ মে পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯ হাজার ৭১৬টি তন্মধ্যে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬২৮ জন এবং মারা গেছে ১০ জন। বিভাগে ৭৮ চিকিৎসক ও ৭২ নার্সসহ মোট ২৮৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মোট আক্রান্তের প্রায় ৪৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালেই ১২৭জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত। নিজ কর্মস্থলে সুষ্ঠু চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগ ভূক্তভোগী রোগী চিকিৎসকদের।

Share this post

scroll to top