নেত্রকোনার বারহাট্টায় কিশোরী গৃহকর্মীকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
আজ শনিবার দুপুরে সিংধা আলোকদিয়া সড়কে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে নারী-পুরুষসহ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, এটি একটি শিশু হত্যা। তার উপর গৃহকর্মী। মানুষ জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিরাপত্তা খোঁজে আর সেখানে যদি তাদের কাছেই শিশুরাও অনিরাপদ থাকে তাহলে আমরা যাবো কোথায়? তাই অবিলম্বে তারা এই চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।
এদিকে, চেয়ারম্যানের লোকজন মানববন্ধনে বাধা দিলে কয়েকমিনিটে তারা মানববন্ধন শেষ করে দেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে চেয়ারম্যানের মোহনগঞ্জ বাসায় গৃহকর্মী কিশোরী মারুফার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বিকালে শিশুটির লাশ নিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১১ মে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে মারুফার মা আকলিমা আক্তার বাদী হয়ে চেয়ারম্যানকে আসামি করে থানায় মামলা নেয়। ওইদিনই রাতে মোহনগঞ্জ থানার পুলিশ চেয়ারম্যানকে আটক করে। পরদিন আদালতে সোপর্দ করলে জেলে রাখার একদিন পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হন চেয়ারম্যান কাঞ্চন।
এদিকে মোহনগঞ্জ থানায় ওসি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়া এবং মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে স্বাক্ষর করানোর অভিযোগ করেন মেয়ের মা। এরপর দুইদিন বাদে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর সহায়তায় মামলা করেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝর উঠে। পরে শিশুটির শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখে সঠিক বিচার দাবি করেন জেলাবাসী। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়ে নিজেই তদন্ত করতে নামেন পুলিশ সুপার।
অন্যদিকে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন ওঠে সরকারি সাবেক দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে এই চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে এ সকল অপকর্ম করে যাচ্ছেন এলাকায়। তিনি বারহাট্টা উপজেলায় অফিস না করে মোহনগঞ্জ বাসার পাশে একটি দোকানে বসে পরিষদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এতে ওই ইউনিয়নবাসীর নানা বেগ পোহাতে হয়। কোনো কাজে তাদেরকে এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলা পর্যন্ত আসতে হয়। এছাড়াও গত ২০১৯ সানে চেয়ারম্যানকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
নানা ঘটনা তিনি ঘটিয়ে যাচ্ছেন প্রভাব খাটিয়ে এমন অভিযোগ এলাকার ছোট বড় প্রতিটি মানুষের। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের ভাইটাল পদ নিয়ে তিনি এহেন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
বারহাট্টার সন্ধ্যা রানী জানান, বারবার নারীদের সাথে পাশবিক নির্যাতনের পর ছাড়া পেয়ে যান প্রভাব খাটিয়ে। তার বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতেই পারে না। প্রতিটি নারী লাঞ্চিত হয়ে আছে। এই শিশু মারুফার বাবা আকবর মারা যাওয়ার ঘটনাও চেয়ারম্যান ধামাচাপা দিয়ে গত দুই বছর পূর্বে মেয়েটিকে তার মেয়ের মতো করে লালন পালনের আশ্বাস দেয় পরিবারটিকে। কিন্তু এই শিশু বাচ্চাকে পাশবিক নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। এরপর মেয়ের মা নিজ বাড়িতে চেয়ারম্যানের ভয়ে লাশ নিতে পারেননি। অবশেষে শিশুর নানার বাড়ি কলমাকান্দা উপজেলায় নিয়ে গিয়ে লাশ দাফন করা হয়। মেয়ের মা-ও নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।