এখন পবিত্র মাহে রমজান। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মানুষের রমজানের রুটিন ভিন্ন। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব ঘরবন্দি। মসজিদগুলোয় তারাবির নামাজ পর্যন্ত সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতি দেখে বহু ধর্মপ্রাণ মুসল্লির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
এবারের ঘরবন্দি রমজান আমরা উদযাপন করতে পারি ভিন্নভাবে। যেহেতু এটি কোরআনের মাস, তাই এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। কারণ কঠিন কিয়ামতের দিন এই কোরআন আমাদের জন্য সুপারিশকারী হবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে সুপারিশকারী হিসেবে আসবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা আল-বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কিয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা আল-বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বারাকাতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ। আর বাতিলের অনুসারীরা এর মোকাবিলা করতে পারে না। হাদিসটির বর্ণনাকারী আবু মুআবিয়া বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি যে বাতিলের অনুসারী বলে জাদুকরদের বলা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৫৯)
কোরআন এতটাই সম্মানী যে রাসুল (সা.) সর্বদা কোরআনের ধারকদের প্রাধান্য দিতেন। ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হওয়া সাহাবিদের মধ্যে যাঁরা অধিক কোরআন জানতেন তাঁদের কবরে নামানোর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ওহুদ যুদ্ধের শহীদদের দুজনকে একই কাপড়ে দাফন করেছিলেন। জড়ানোর পর জিজ্ঞেস করতেন, এদের মধ্যে কে অধিক কোরআন জানে, যখন কোনো একজনের প্রতি ইশারা করা হতো তখন তিনি তাকেই কবরে আগে নামাতেন এবং বলতেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষী হবো। সেদিন তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের জানাজাও পড়ানো হয়নি এবং তাদের গোসলও দেওয়া হয়নি। (বুখারি, হাদিস : ৪০৭৯)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কোরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৪৩)
শুধু দুনিয়াতেই নয়, জান্নাতেও কোরআনের ধারকদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, (কিয়ামতে) কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পাঠ করতে করতে ওপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে-সুস্থে পাঠ করতে সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৬৪)। তাই আমাদের সবার উচিত, শুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষায় মনোনিবেশ করা। বিশেষ করে লকডাউনের এই ছুটি আমরা কোরআন শিক্ষার কাজে ব্যয় করতে পারি। প্রয়োজনে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হলেও তা করা যেতে পারে। এখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে বিশেষজ্ঞ কারিদের কোরআন শেখা খুবই সহজ। হতে পারে এর অসিলায় মহান আল্লাহ আমাদের ওপর রহমত করতে পারেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদের রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৫)
আমাদের উচিত পবিত্র এই মাহে রমজানে দিনরাত তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমাদের ঘরগুলোকে আল্লাহর রহমতে বেষ্টিত করে রাখা। যাতে কোনো ধরনের বিপদাপদ আমাদের কাছে আসতে না পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অধিক কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রমজানের মুহূর্তগুলোকে আরও আমলময় করে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।