পঞ্চ স্তম্ভের অন্য রকম সেঞ্চুরি

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাঁচ স্তম্ভ – মাশরাফি মতুর্জা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একসাথে ক্রিকেটপ্রেমীদের তারা অনেক ম্যাচে জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছেন, আবার হারের পর কাঁদিয়েছেনও। এই হাসি-কান্নার যাত্রায় তারা অন্য রকম একটি মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগামীকাল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটি বিশেষ একটি ম্যাচ হতে যাচ্ছে তাদের জন্য। জনপ্রিয় এই পাঁচ তারকার একসাথে শততম ম্যাচ সেটি। ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো তাদের এই শততম যাত্রা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে’তেই দুই শ’তম আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মাশরাফি মর্তুজা। পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড় তিনি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে। অথচ একটা সময় ইনজুরির জন্য খেলা শেষ হতে বসেছিল তার। কিন্তু কঠিন মনোবল আবারো ২২ গজে দাঁড় করিয়েছে এই পেসারকে। এখন তিনি দলের অনুপ্রেরণা। তিনি দলে থাকা মানেই বাড়তি শক্তির যোগান।

জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পেছনেও দুর্দান্ত তিনি। দুটি কাজই একসাথে করে যান। দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক তিনি।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই দুর্দান্ত তিনি। প্রতি মৌসুমেই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান এই সুপারস্টার।

বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। ব্যাট হাতে দলের সবচেয়ে বেশি রেকর্ডের মালিক তিনি। ২০১৫ সাল থেকে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে যাচ্ছেন তিনি।

সাইলেন্ট কিলার মাহমুদুল্লাহ। নিরবে কাজটি করে যান তিনি। দলের দুঃসময়ে ক্রিজে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ধীর-স্থির ব্যাটিং করেন। আর ডেথ ওভার এলেই দুর্ধর্ষ তিনি। সপাটে চালান ব্যাট। সম্প্রতি টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।

এই পাঁচজনের একসাথে পথচলা প্রায় ১৫ বছর। সময়টা তামিম জানিয়েছেন ক্রিকইফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে। শততম ম্যাচ নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। বলেন, ‘ম্যাচটি অবশ্যই বিশেষ কিছু।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে আমরা একে অপরকে চিনি। ক্যারিয়ারের অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আশা করছি, দিনটিতে বিশেষ কিছু করে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবো।’

তামিম বলেন, ‘আমাদের পাঁচজনের মধ্যে মাশরাফি এবং মাহমুদুল্লাহ ভাই বড়। সাকিব, মুশফিক এবং আমি- আমরা তিনজন অনুর্ধ্ব-১৫ থেকে একসাথে খেলে আসছি। আমরা একে-অপরের সাথে সবকিছুই শেয়ার করি। আমাদের সম্পর্কটা চমৎকার। মুশফিক এবং সাকিব আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিন্তু বেশি সময় আমি কাটাই মাশরাফি এবং রিয়াদ ভাইয়ের সাথে। আলাদা আলাদাভাবেও এই দু’জনের সাথে আমাদের সর্ম্পকটা অন্য রকম।

মাশরাফির ভাবনা কী? খুব বেশি তফাৎ নেই। তার মতে, তাদের সাথে সহজ সর্ম্পকের কারণে নেতৃত্বে কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। বলেন, ‘তাদের সবার ভালো পারফরমেন্স আমার কাজটি অনেক সহজ করে দেয়। বড় ম্যাচগুলোতে তাদের অবদান এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তাদের প্রশংসা ঝরেছে অধিনায়কের কণ্ঠে, ‘সাকিবের কথা আর কী বলব, ও অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। মুশফিক সব সময়ই মানসম্পন্ন খেলোয়াড়। তামিম আর রিয়াদ খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ক্রিকেটার। তারা জানে, আমার সাথে কীভাবে খেলতে হবে। এখন তাদের বেশি কিছু বলার প্রয়োজন হয় না।

গত সেপ্টেম্বরে ক্রিকইনফোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুশফিক বলেছিলেন, ‘তামিম আমার চিন্তা-ভাবনার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। আর মাহমুদুল্লাহ শিখিয়েছেন, কীভাবে নিজের উন্নতি করা যায়।’

আর তাদের নিয়ে মাহমুদুল্লাহর’র ভাষ্য, ‘তাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তামিম-মুশফিক-সাকিব আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা যোগায়।’

এই পাঁচজন আগামী বিশ্বকাপে দলের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এরপর হয়ত আর এক সাথে তাদের পাওয়া যাবে না, তখন দলের কী হবে?

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top