অসহায় আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে অমানবিক নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে ফ্রান্স। কারো চোখ কানা করে দিচ্ছে, কাউকে কানে মেরে করছে কালা। আবার কাউকে হাত-পা ভেঙে খোঁড়া করে দিচ্ছে। দুই-চারজনকে নয়। এভাবে হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বিকলাঙ্গ করছে। ছাড় দেয়া হচ্ছে না শিশু ও নারীদেরও।
ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশ ছাড়া করতেই এই ‘বিকলাঙ্গ নীতি’ গ্রহণ করেছে দেশটির পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। এক্ষেত্রে কখনো পেপার স্প্রে-রাসায়নিক পদার্থ, কখনো কাঁদানে গ্যাস আবার কখনো লাঠি ব্যবহার করছে তারা। আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তা ও তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে- এমন চারটি সংগঠনের সমন্বিত এক রিপোর্টে ফ্রান্সের দু’টি আশ্রয় শিবির কালাইস ও ডানকার্কে ফরাসি নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি ‘পুলিশ ভায়োলেন্স ইন কালাইস : আবিউসিভ অ্যান্ড ইলিগাল প্র্যাকটিসেস বাই ল’ এনফোর্সমেন্ট অফিসার্স’ শীর্ষক রিপোর্টে এসব তথ্য জানা যায়।
দারিদ্র্যতা ও সঙ্ঘাত থেকে বাঁচতে গত কয়েক বছরে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এসে প্রধানত ফ্রান্সের উপকূলীয় বন্দর এলাকা কালাইস ও ডানকার্কে বসতি গেড়েছিল কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। কিন্তু এসব আশ্রয়প্রার্থীদের মানবিক আবেদন অগ্রাহ্য করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় ফরাসি সরকার।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ২০১৬ সালের শেষের দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে আজো অব্যাহত রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। অভিযানে পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে সুপরিকল্পিতভাবে শরণার্থীদের বিকলাঙ্গ করার অভিযোগ উঠে শুরু থেকেই। প্রায় এক বছর ধরে পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর রেকর্ড নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বেসরকারি অধিকার সংগঠন লাবার্জ ডেস মাইগ্রান্টস, রিফিউজি ইনফো বাস, ইউটোপিয়া৫৬ ও লিগাল শেল্টার। সংগঠনগুলো বলছে, শুধু কালাইসে এ ধরনের অন্তত ৯৭২টি ঘটনা রেকর্ড করেছে ত্রাণ সহায়তাকর্মীরা। তাদের অনুসন্ধানেও একই চিত্র উঠে এসেছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অন্যতম ভয়াবহ অভিযোগ হচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইরিত্রিয়া থেকে আসা ১৬ বছরের একটি কিশোরের চোখ কানা করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়। পুলিশের লাঠির আঘাতে তার কান কালা হয়ে গেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘অভিযানের সময় মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিটার দূর থেকেও আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর নির্বিচারে পেপার স্প্রে, রাসায়নিক এজেন্ট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে দাঙ্গা পুলিশ।’ ইথিওপিয়া থেকে আসা ২১ বছরের এক যুবক জানিয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবরে পুলিশের পিটুনির শিকার হন তিনি।