ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগ। ভাইরাসজনিত এ রোগের প্রকোপ থেকে গবাদিপশুকে বাঁচাতে উপজেলা পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করেও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন না কৃষকরা।
নান্দাইল উপজেলা পশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন রোগের ভাইরাসের নাম এলএসডি। এটি গবাদিপশুর নুতন একটি রোগ যার প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে প্রথম এ রোগ দেখতে পাওয়া যায়। এ রোগে আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে গিয়ে স্থানে স্থানে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ নিঃসৃত হতে থাকে। কখনো সিনার নিচে বড় থলির মতো হয়ে পানি জমে থাকে। তখন কিছুই খেতে চায় না বলে গবাদিপশু শুকিয়ে যায়। সংক্রমণ বেশি হলে পশু মারাও যেতে পারে। তবে বাছুরের এ রোগ হলে বাঁচানো কঠিন।
বৃহস্পতিবার উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেক বাড়িতেই লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত একাধিক পশু রয়েছে। সিংরইল কোণাডাংগর গ্রামের কামাল উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর একটি বিদেশি জাতের গাভি ও বাছুর এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি গাভির ক্ষতস্থান মাছির উপদ্রব থেকে বাঁচাতে কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। শুধু কামাল উদ্দিন নন, তাঁর প্রতিবেশি পারভীন আক্তারের ২টি, শান্তা বেগমের ৩টি, আব্দুস সালামের ১টি, মোস্তাফা মিয়ার ৩টি, শহীদ মিয়ার ২টি ও মন্নাছ মিয়ার ৩টি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
কামাল উদ্দিন বলেন, যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অনেক কষ্ট করে উপজেলা পশু হাসপাতালে গিয়েও ওষুধ পাওয়া যায় না। বাজার থেকে কিনতে গেলেও বলা হয় সরবরাহ নেই।
জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বাতুয়াদি গ্রামের স্কুলশিক্ষক কামাল উদ্দিন জানান, তাঁর বাড়িসহ আশেপাশে বাড়ির শতাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
মুশুলি বাজারের পশু চিকিৎসক মঞ্জুরুল হক ও শিয়ালধরা বাজারের পশু চিকিৎসক আবু জাহেদ জানান, তারা গবাদিপশুর চিকিৎসা করতে হিমসিম খাচ্ছেন। উপজেলায় এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দেয়নি।
নান্দাইল উপজেলা পশু হাসপাতালের ভেটেনারি সার্জন ডা. উজ্জল হোসাইন বলেন, ‘হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন ৫০-৬০ জন গরুর মালিককে মোবাইল ফোনেও এ রোগের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছি। সরবরাহ না থাকায় অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশান, ব্যাথানাশক ট্যাবলেট ও অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। তবে এ রোগে বাছুরের মৃত্যুর হার বেশি হলেও বড় গরুর মৃত্যুর হার একেবারেই কম।