দৌলতদিয়া ঘাটে আজও ঢাকামুখী মানুষের ঢল

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়েই জীবিকার তাগিদে কর্মস্থল ঢাকায় ছুটছেন মানুষ। গত কয়েক দিনের মতো আজ বুধবারও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় ভীড়ের মধ্যেই গাদাগাদি করে ট্রলার ও ফেরিতে নদী পার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির পাশাপাশি এতে ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার। তবে দুপুরের দিকে সেনাবাহিনী ঘাটে আসায় ও তাদের তৎপরতায় ভিড় কমেছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ।

গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ঢাকায় গার্মেন্টস কারখানা খোলায় চাকরি বাঁচাতে ও জীবিকার তাগিদে মাহেন্দ্র, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঘাটে আসছেন যাত্রীরা। পরে হেঁটে ফেরিতে উঠে নদী পার হচ্ছেন। তারা ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থলে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বন্ধ রয়েছে শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস আদালত। তবে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গার্মেন্টস কারখানা খোলা থাকার সিদ্ধান্তে দৌলতদিয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের ঢল শুরু হয়। শ্রমিকরা চাকুরী হারানোর ভয়ে ও বেতনের আশায় জীবন বাজি রেখে করোনাকে তুচ্ছ করে এ যাত্রা শুরু করতে নদী পার হচ্ছেন। লকডাউন উপেক্ষা করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আজও নদী পার হচ্ছেন শত শত যাত্রী। তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই।

ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ জরুরি যানবাহন পারাপারের জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পাঁচটি ফেরিতে সীমিত আকারে ঘাট সচল রাখা হয়েছে। এই সুযোগে ফেরিতে যাত্রীরা নদী পারাপার হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে, আজ বুধবারও ঢাকামুখী যাত্রীদের এই চাপ অব্যাহত রয়েছে।

এ সব যাত্রী জানান, করোনাভাইরাসের কারণে তারা দীর্ঘদিন বাড়িতে ছিলেন। এখন গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে। তাই তারা করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ঢাকায় যাচ্ছেন। ঢাকায় না গেলে চাকরি হারাবেন বলেও অনেকে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকামুখী যাত্রীরা জানান, পেটের ক্ষুধার কাছে করোনাভাইরাস কিছুই না। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও যেতে হবে ঢাকার কর্মস্থলে। না যেতে পারলে চাকরি থাকবে না। তাই বাধ্য হয়েই ঢাকায় যেতে হচ্ছে।

এ সব ফেরিতে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনের সাথে কর্মস্থলে ফেরা মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছে। এতে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। গত ২৬ এপ্রিল বিআইডব্লিউটিসির দুই কর্মকর্তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় সংস্থাটিতে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুন্নাফ বলেন, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নৌযানে যাত্রী পারাপার ঠেকাতে আমরা চেষ্টা করছি। হঠাৎ করেই ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে। আমাদের লোকবল কম থাকায় যাত্রী পারাপার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি বলেন, ‘সরকারি আদেশে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌপথে শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ জরুরি যানবাহন পারাপারের জন্য সীমিত আকারে ফেরি চলাচল সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু মানুষের চাপে আমরা ঠিকমতো পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার করতে পারছি না। প্রতিটি ফেরিতেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তারা সবাই বিভিন্ন গার্মেন্টস ও অনান্য ছোটখাটো কারখানা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মী। করোনা ঝুঁকি থাকলেও ফেরিতে তাদের পারাপার এভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়। মানুষকে সচেতন হতে হবে।’

Share this post

scroll to top