গাজীপুরে বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ

গাজীপুরে করোনাভাইরাস সংক্রামন রোধে ঘোষিত লকডাউনের মাঝেই রোববার ৪৩৮ পোশাক কারখানা চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। ঝুঁকি নিয়েই শ্রমিকরা এসব কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছে। এদিকে বকেয়া বেতন ও বন্ধ ঘোষিত কয়েকটি কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে জেলার কয়েকটি স্থানে শ্রমিক বিক্ষোভের খবরও পাওয়া গেছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, করোনা ঝুকি রোধে গাজীপুর জেলায় গত ১১ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই গাজীপুরে প্রায় সব পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি সরকার স্বল্প পরিসরে কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিলে রবিবার ৪৩৮ টি কারখানা চালু করা হয়। কারখানা গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় তারা শ্রমিকদের গায়ে স্প্রে করে দিচ্ছেন, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করে কর্মীদের কারখানায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সবার হাত ধোয়া এবং মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে অনেক কারখানায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এবং যাতায়াতের সময় শ্রমিকরা সামাজিক দূরত্ব মানছে না।

এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় আরএল ইয়ার্ণ ডায়িং কারখানায় মার্চের বেতনের দাবিতে রবিবার সকালে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে ২ মে কারখানা খোলার পর বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা আন্দোলন ত্যাগ করে।

পুলিশ কর্মকর্তা সুশান্ত সরকার আরো জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার বাড়ইপাড়া এলাকার হেচং বিডি লিমিটেড পোশাক কারখানাটি গত নভেম্বর মাসে লে-অফ ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বন্ধ ঘোষণার সময় গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন ভাতাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিন আগে গেইটে টানিয়ে দেয়া একটি নোটিশে কারখানাটি শনিবার (২৫ এপ্রিল) চালু এবং আগামী ৭ মে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।

এর প্রেক্ষিতে শনিবার সকাল হতে শ্রমিকরা কারখানার গিয়েও প্রধান ফটক বন্ধ এবং কারখানায় কাউকে না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। রোববার সকালেও তারা একই দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।

একই ভাবে টঙ্গী দত্তপাড়া এলাকায় ব্রাইট অ্যাপারেলস লিমিটেড ২৬ মার্চে কোন খোলার তারিখ না দিয়ে কারখানা লে-অফ ঘোষনা করে ফটকে নোটিশ টানিয়ে দেয়। কিন্তু ২৬মার্চ অনেক কারখানা খুললেও ওইটি খুলেনি। রবিবার সকালে কারখানাটি খুলে দিতে কিংবা খোলার তারিখ নির্ধারণের দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। এছাড়া একই দিনে গাজীপুর মহনগরীর ভোগড়া এলাকায় লে-অফ ঘোষিত স্টাইলিস গার্মেন্টস কারখানাটিও চালু করতে তারিখ ঘোষনার জন্য শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু ও পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। কারখানা কতৃপক্ষের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা অলোচনার আশ্বাসে তারা বাড়ি চলে যায়। এভাবে বিক্ষোভ আন্দোলন হলে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তবে আমরা কারখানা শ্রমিক-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে করোনা সংক্রমনরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করে যাচ্ছি। এছাড়াও কয়েক স্থানে বেতন ভাতাদি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে।

গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল পুলিশের এসপি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, গাজীপুরে মোট কারখানা রয়েছে ২হাজার ৭২টি। রবিবার এসব কারখানার মধ্যে ৪৩৮টি কারখানা খুলেছে। খোলা কারখানার মধ্যে ২৩৮টি বিজিএমইএ, ৩১টি বিকেএমইএ, ২৪টি বিটিএমইএ এবং অন্যান্য ১৪৫টি। একহাজার ৬৩৪টি কারখানা রোববার পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করেছে এক হাজার ৭৮৬টি কারখানায়।

এসবের মধ্যে বিজিএমইএ-এর ৮৩০টি কারখানার মধ্যে ৭৮৫টি কারখানায়, বিকেএমইএ-এর ১৩৮টি কারখানার মধ্যে ১১০টি, বিটিএমইএ-এর ১২২টির মধ্যে ১১১টিতে এবং অন্যান্য ৯৮২টির মধ্যে ৭৮০টি কারখানায় বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। তবে তিনি আরো বলেন, রোববার ১৫/২০টি কারখানায় বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে সমস্যা চলছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, বিজিএমই’র নির্দেশনা অনুযায়ী কারখানাগুলো আগামী ২ মে খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারিভাবে রপ্তানীমূখী কারখানার সিদ্ধান্ত নিলে গাজীপুরে কিছু কারখানা রোববার খুলেছে। তবে করোনা সংক্রমনরোধে কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কি-না তারজন্য মোবাইল কোর্ট চলছে। কিছুদিন পূর্বেও লকডাউন ও সরকারি আদেশ পালন না করে কারখানা চালানোর জন্য কয়েকটি কারখানাকে জরিমানা করা হয়েছে।

Share this post

scroll to top