আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যাপক কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভোটে কারচুপির জন্য অঞ্চল ভাগ করে পুলিশের ১২ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জোনগুলোর বৈঠক সম্পন্ন করেছেন।
আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনার মো: রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাৎ হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে তাদের ভূমিকা ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থের পক্ষে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম নিয়মিত এদের সাথে ফোনে নির্বাচনের বিভিন্ন ধরনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে থাকেন বলেও জনান্তিকে নানা কথা ভেসে বেড়ায়। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব এদের মধ্যে সিনিয়র একজনকে দেয়া হয়েছে। এই কমিশনারের মাধ্যমে ইসিকে এইচ টি ইমাম সব ধরনের নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিদিন সিইসির কাছে বার্তা বাহকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা পাঠানো হয়। সিইসি’র দফতর থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, রিটার্নিং অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেল স্থাপন করা হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট সেলের কাছে থেকে পরামর্শ নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট কাউকে স্বতন্ত্র প্রার্থী না করার বিষয়ে কড়া নির্দেশনা ছিল। নির্বাচন কমিশনও আপিলে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা বহালের ক্ষেত্রে ওই নির্দেশনা অনুসরণ করেছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারককে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা সেলের আইন উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সারাদেশে দুই লাখ পোলিং এজেন্টকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। নিয়ন্ত্রিত ভোট করার বিষয়ে তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে অবস্থানের কৌশল শেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার বিষয়গুলো মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা হলো।
রিজভী জানান, মাদক নির্মূলের ব্যানারে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মাদরাসা শিক্ষকদের পুলিশ লাইনে ডেকে এনে সিরাজগঞ্জের ডিসি, এসপি তাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। সদরের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে নিজেদের নেতাকর্মীদেরকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশজুড়ে বিরোধী নেতাকর্মীরা এখনো গ্রেফতার ও হামলা মামলার শিকার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাবুল আলম তালুকদারকে গতরাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকালই বাবুল আলম তালুকদারসহ ২৪ জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট দায়ের করা হয়েছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়ন বিএনপির মুরাদ সিকদার এবং কৈজুরী ইউনিয়ন বিএনপির শাহজাহান মোল্লা (মেম্বার), মেহেরপুর জেলা বিএনপির মো: শামসুল আলম, মহাজনপুর ইউনিয়ন বিএনপির আশরাফুল হক কালু, পৌর বিএনপির হাসান আলী, আমরুপী ইউনিয়ন বিএনপির আব্দুল মালেক, চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর থানার মো: আব্দুর রব নুর নবীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়া পাবনা জেলা বিএনপির রইসুদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় দোকানে তালা লাগিয়ে দেয় এবং নির্বাচনের পূর্বে দোকান না খোলার হুমকি দেয়।
নোয়াখালীতে ২০১৬ সালের একটি ধর্মীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান, আবু সাঈদ, শাখাওয়াত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, শহীদুল্লাহ ও যুবদল নেতা আবুল কালামদের বিরুদ্ধে গতকাল মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ তাদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশীর নামে তান্ডব চালানো হচ্ছে।
বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন রিজভী।