বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলো পারমানবিক বোমা। আবিষ্কার করেই তা মজুদ করলো পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। বিজ্ঞান তো আবিষ্কার করেই খালাস৷ কিন্তু, এই পারমানবিক বোমা কোথায় ব্যবহার করা যাবে আর কোথায় যাবে না, এই বিষয়ে বিজ্ঞানের কোন বয়ান আছে? সোজা উত্তর- নাই।
কিন্তু, আপনার সামনে এই বয়ান হাজির করে ধর্ম। ধর্ম আপনাকে বলে, মানুষ এবং প্রকৃতির বিনাশ সাধিত হয়, এমন কোন কাজ আপনি করতে পারবেন না। আপনার ইচ্ছা হলেই আপনি কোন দেশের উপর পারমানবিক বোমা ছুঁড়ে মারতে পারেন না।
বিজ্ঞান আপনাকে যে উত্তর দেয় না, তা আপনাকে ধর্ম দিচ্ছে।
আবার ধরেন, যদি কোনোভাবে প্রমাণ হয় যে, এই করোনা ভাইরাস চীনের ল্যাবে তৈরি, তখন এইসব অনলাইন বিজ্ঞান-বাদীদের কি অবস্থা হবে? যদি জানা যায়, বিজ্ঞান দিয়েই এই ভাইরাস তৈরি, তাহলে এখানে বিজ্ঞান রক্ষাকর্তার ভূমিকায় থাকবে না হন্তারকের ভূমিকায়? কিন্তু দেখেন, ‘এমন মারণঘাতী ভাইরাস আপনি বানাতে পারবেন না’- এই মর্মে বিজ্ঞানের স্পষ্ট কোন ভাষ্য নেই। কিন্তু ধর্মের ভাষ্য আছে। ওই যে, প্রাণ এবং প্রকৃতির ক্ষতিসাধন হয় এমন কোনোকিছু আপনি করতে পারেন না। ধর্ম আপনাকে শেখায়, ‘কেউ যদি কোন একজন মানুষকে হত্যা করলো, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করলো’। তাই, স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে, এমন মারণঘাতী ভাইরাস ল্যাবে তৈরি করে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি ধর্ম আপনাকে দেয় না। আপনার এহেন কাজের জন্য যদি একজন মানুষেরও প্রাণ যায়, তাহলে ধর্ম আপনাকে পুরো মানবজাতিকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
এখানেও, বিজ্ঞান আপনাকে যে উত্তর দেয় না, ধর্ম আপনাকে সে উত্তর দেয়।
এখন আপনি ভং ধরে বলতে পারেন, এটা তো কমন সেন্সের ব্যাপার৷ এসবের জন্য ধর্মের দরকার কি?
তাই নাকি? আমেরিকার যে হর্তাকর্তারা জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা মেরে জাপানকে একপ্রকার বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলো, আপনি কি মনে করেন তাদের কোন কমনসেন্স নাই? দুনিয়ার সকল কমনসেন্স আপনি নিয়ে বসে আছেন?
এখন আপনি বলতে পারেন যে, ‘তারা ভুল করেছে’। তারা যে ভুল করেছে, এইটা আপনি বিজ্ঞানের কোন বই থেকে উদ্ধার করেছেন? উহু। কোথাও নাই। তারা যে ভুল করেছে, মস্ত বড় অপরাধ করেছে, এই অপরাধের জন্য তাদের যে সাজা হওয়া উচিত, এই পাঠ আপনাকে ধর্ম-ই দেয়।
মারণঘাতী ভাইরাস বানিয়ে মানুষ হত্যা করলে আপনি যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন, এই বোধ আপনাকে ধর্ম-ই শেখায়। বিজ্ঞানের কোন বইতে এই পাঠ নাই।
সুতরাং, বুঝতেই পারতেছেন ধর্ম আর বিজ্ঞানের বিষয়াদি আলাদা আলাদা৷ দুইটা সম্পূর্ণ দুই বিষয়ে আলাপ করে। সমাজে, মানব সভ্যতায় দুটোরই পাশাপাশি অবস্থান দরকার। তাই, অনলাইনে বসে, বাপের হোটেলে খেয়ে, বনের মোষ তাড়িয়ে ‘যদি বেঁচে যাও এবারের মতো, যদি কেটে যায় মৃত্যুর ভয়, জেনো বিজ্ঞান লড়েছিলো একা, মন্দির-মসজিদ নয়’ জাতীয় ফাত্রা কবিতা না লিখে, দুই চারটা বৃষ্টি-বাদলের কবিতা লিখেন। প্রতিভার বিকাশ ঘটবে।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, তাইলে মসজিদে গিয়ে আপনারা কেনো আল্লাহর কাছে শেফা চান? আল্লাহ কি বাঁচাইতে পারে আপনারে?
হ্যাঁ। আমি বিশ্বাস করি, আমাকে আল্লাহই বাঁচায়। ইসলাম আমাকে শিখিয়েছে অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে। ইসলাম ডাক্তারকে বলেছে তার খাবারের জন্য একজন কৃষকের কাছে যেতে। ইসলাম কৃষককে বলেছে তার জমির ফলনের জন্য, বৃষ্টির জন্য আল্লাহর ওপরে তাওয়াক্কুল করতে। এটা একটা চেইন। এখানে একজন-অন্যজনের ওপর নির্ভরশীল। সবকিছুর মূলে আছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা। বাকি, আমরা সবাই একে-অন্যের উসিলা। আমার এই বিশ্বাস আপনার বৈজ্ঞানিক ল্যাবে, অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে চোখ রেখে পরখ করার মতোন কোন বস্তু না। আমার বিশ্বাস পছন্দ না হলে ভদ্রভাবে সাইড নেন। আমার বিশ্বাস নিয়ে গবেষণা করতে আপনারে ঠিকাদারি দেওয়া হয় নাই।