ময়মনসিংহ জেলায় করোনাভাইরাস মোকাবেলা ও ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব পেলেন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (সচিব) সুবীর কিশোর চৌধুরী। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও আরো ৬৩ সচিবকে ৬৩ জেলা ভাগ করে দায়িত্ব বণ্টন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কভিড ১৯ প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের জন্য সরকার ওই কর্মকর্তাদের জেলাওয়ারি দায়িত্ব প্রদান করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, সুবীর কিশোর চৌধুরী ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরপাড়া গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাধনা চৌধুরী এবং স্বর্গীয় রমেন্দ্র কিশোর চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র। তার স্ত্রীর নাম মানসী চক্রবর্তী এবং তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা জনাব সুবীর কিশোর চৌধুরী ১৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব পদে যোগদান করেন। পদোন্নতির পূর্বে তিনি এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পূর্বে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মানবসম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও কৃতিত্বের জন্য তিনি সুপরিচিত।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের সদস্য জনাব সুবীর কিশোর চৌধুরী ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে সহকারী কমিশনার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি), নেজারত ডেপুটি কালেক্টর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন করেন।
অতঃপর সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যথাক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিপিটি এবং এপিডি অনুবিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি উচ্চতর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
সুবীর কিশোর চৌধুরী উদ্ভিদবিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি এবং সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স, আইন ও প্রশাসন কোর্স, সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্স, ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্স, বিএমএ প্রশিক্ষণ, এডভান্সড কোর্স অন এ্যাডমিনিষ্ট্রিশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ম্যানেজিং এট দি টপ কোর্স সহ চাকরির অত্যাবশ্যকীয় সকল প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন।
এছাড়াও তিনি দেশে এবং বিদেশে বিশেষ করে কম্বোডিয়া, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ও ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, জর্জিয়া, উগান্ডা, শ্রীলংকা এবং নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপে যোগদান করেন।
উদ্ভাবনমনস্ক সুবীর কিশোর চৌধুরী চাকুরী জীবনের প্রতিটি স্তরেই উদ্ভাবনী কর্মকান্ডের স্বাক্ষর রেখেছেন। স্থানীয় সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে উপজেলা পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, অতিদরিদ্রদের স্বাবলম্বী করার জন্য স্বকর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ, কর্মএলাকার মানুষের নান্দনিক চাহিদা পূরণের জন্য সংগীত বিদ্যালয় ও গণগ্রন্থাগার স্থাপন তার বহুবিধ কর্মকাণ্ডের কয়েকটি নমুনামাত্র।
বিদেশী নামকরা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার সফল উদ্যোগের ফলে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের নামকরা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের বতর্মান বৈদেশিক প্রশিক্ষণের চলমান ধারা তার নিরলস প্রচেষ্টার ফসল।
বেশ কয়েকটি বিদেশী নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাগণের জন্য কমখরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য তিনি নেপথ্যে কাজ করেন। ভারতের মুসৌরীতে অনুষ্ঠিত মিড ক্যারিয়ার ট্রেনিং প্রোগ্রামে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশননারগণের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তিনি সফলভাবে সমঝোতা করতে সক্ষম হন। দেশে প্রথমবারের মত জনপ্রশাসন পদক প্রবর্তনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি সীমিত পরিসরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিপিটি ও এপিডি অনুবিভাগে বিজনেস প্রসেস রি-এঞ্জিনিয়ারিংয়ের সূত্রপাত করেন।