জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয়নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মানুষ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ভয়াবহ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। নতুন আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। লকডাউন, আইসোলেশন, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে সম্পূর্ণরূপে থমকে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। প্রতিটি দেশ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হতে পরিত্রাণ পেতে অন্য দেশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ভয়ংকর এক পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছি আমরাসহ বিশ্ববাসী। এমন অবস্থা দেশের মানুষ কখনো দেখেনি।
অনেক জনপ্রতিনিধি ত্রাণের চাল আত্মসাৎ করছেন এটা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব পুরোপুরি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ত্রাণ পাবে। সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হবে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে রওশন এরশাদ এসব কথা বলেন।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, চিকিৎসকসহ করোনা নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, এখনো এর কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। তাই সংক্রমণ এড়ানোর অন্যতম উপায় হলো নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। সবাই সচেতন হলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। দেশবাসীকে বলবো সরকারের নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলুন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
তিনি বলেন, এই মহামারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারাদেশে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, স্থানীয় প্রশাসন নিরলসভাবে মানুষকে ঘরে রাখতে ও সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। গণমাধ্যম কর্মীরাও প্রতি মূহুর্তের খবর জানাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
রওশন বলেন, তবে আমরা শুরু থেকেই লক্ষ্য করেছি করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট, পিপিইসহ সুরক্ষা সরঞ্জাম পেতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হলেও এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে। ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসক মারা গেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। আরো অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় তাদের সুরক্ষা দিতে না পারলে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই অবিলম্বে চিকিৎসকদের পিপিইসহ সবধরণের সমস্যার সমাধানের দাবি জানাই। করোনার সময় যারা এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন দেশের স্বার্থে সরকার তাদের এবং পরিবারের পাশে থাকবে এই প্রত্যাশা করি।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ায় যত দ্রুত সম্ভব দেশের প্রতিটি উপজেলায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও প্রবীণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে সব থেকে বিপদে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি শ্রমিক, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিক। সরকার ইতিমধ্যে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। সারাদেশে ত্রাণ ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই।
তবে একইসময়ে অনেক জনপ্রতিনিধি এই ত্রাণের চাল আত্মসাৎ করছেন এমন ঘটনাও ঘটছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই এই বিষয়টি পুরোপুরি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ত্রাণ পাবে। সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হবে।
যারা করোনায় মারা গেছেন তাদের সবার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আসুন সবাই ভেদাভেদ ভুলে হাতেহাত রেখে করোনা মোকাবেলায় এগিয়ে আসি।
তার সাথে থাকা অপর বন্ধু মঈন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের কুতুবদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার দুপুরে ওই গানম্যান এএসআই কিশোর কুমার মণ্ডলকে ঢাকার আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, নিহতের নাম শহিদুল ইসলাম শহিদ (৩৫)। সে কালিয়াকৈর উপজেলার সীমান্তবর্তী টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার আইজগানা কারিগরপাড়া এলাকার আব্দুস সবুরের ছেলে। আহতের নাম মঈন উদ্দিন (৩২)। তিনি কালিয়াকৈরের কুতুবদিয়া এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার ও স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের গানম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের কুতুবদিয়া গ্রামের নারায়ণ কুমারের ছেলে পুলিশের এএসআই কিশোর কুমার মণ্ডল।
আহত মহিন উদ্দিন, নিহত শহিদ ও কিশোর কুমার পরস্পর বন্ধু ছিলেন। মাঝে মধ্যেই তারা একত্রে আড্ডা দিতেন। এসময় তারা মাদক সেবন করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে মহিন উদ্দিনের সাথে তার স্ত্রী পরকীয়া করছেন বলে সন্দেহ করতে শুরু করেন কিশোর। এ নিয়ে স্ত্রীর সাথে প্রায়ই কলহ বাধত তার। এই কলহের জেরে সম্প্রতি ঢাকার বাসা থেকে বাপের বাড়ি চলে যান কিশোরের স্ত্রী। এতে কিশোর কুমার ক্ষিপ্ত হয় বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।
এর জেরে মহিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে কিশোর কুমার। মহিনকে হত্যার উদ্দেশ্যেই বৃহষ্পতিবার রাতে গাঁজা সেবন ও আড্ডা দেয়ার কথা বলে মোবাইল ফোনে তাকে স্থানীয় কুতুবদিয়া এলাকার লায়ন হাবিবের একটি পতিত জমিতে আসতে বলেন। রাতে কিশোরের জন্য বন্ধু শহিদকে নিয়ে মহিন ওই স্থানে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।
রাত পৌণে ১০টার দিকে কিশোর কুমার একটি মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে আসেন। এসময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে নিজ পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করেন এএসআই কিশোর। এতে শহিদের বুকের ডান পাশে একটি গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। মহিন উদ্দিনের পেটে দুটি গুলি লাগে। এতে তিনি আহত হন।
গুলির শব্দ পেয়ে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে গানম্যান কিশোর পালিয়ে যান। পরে এলাকাবাসী আহত মহিনকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ তাকে সেখান থেকে সাভারস্থ এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে কিশোরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়ার জিরানী এলাকা থেকে ওই গ্রানম্যানকে আটক করা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর গানম্যান হিসেবে নিয়োজিত এএসআই কিশোর কুমার ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাকে জ্ঞিাসাবাদ করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে এ খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অভিযুক্ত এএসআই কিশোর কুমারকে বরখাস্ত করে নতুন গানম্যান দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।