করোনার ঝুঁকি নিয়েই ময়মনসিংহ থেকে ধান কাটতে হাওড়ে যাচ্ছে শতশত শ্রমিক

Mymensingh-Agri-workerকরোনার ঝুঁকি নিয়েই ময়মনসিংহ থেকে ধান কাটতে হাওড়ে যাচ্ছে শতশত শ্রমিক। অথচ এ থেকেই বড় ধরণের করোনাভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটতে পারে। সময় গেলে এভাবে চুপ থাকার বড় ধরণের মাসুল দিতে হবে ময়মনসিংহবাসীসহ হাওড় অঞ্চলের মানুষ তথা সারা দেশের মানুষকে। এনিয়ে সমগ্র ময়মনসিংহে আলোচনা সমালোচনা বইছে। অনেকেই মনে করছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের ঘরে থাকার যে নির্দেশনা তার বদলে এক জায়গার মানুষকে অন্য জায়গায় পাঠানো এক ধরণের বড় গাফিলতি। কারণ হিসেবে অনেক সমাজ সচেতন ব্যক্তি বলছেন, এ থেকে ময়মনসিংহ থেকে হাওড়ঞ্চলে যেমন করোনার বিস্তার ঘটতে পারে তেমনি হাওড়ঞ্চল থেকে ময়মনসিংহেও করোনার ব্যাপক হানা ঘটতে পারে। এমনিতেই ময়মনসিংহ জেলাকে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা মহামারীর মধ্যেই হাওরাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী ও ভৈরব উপজেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। বৈশাখ মাসজুড়েই চলবে ধান। এদিকে শ্রমিক জোগান দিতে এসব এলাকার গৃহস্তরা ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষি শ্রমিকদের সাথে জোগাজোগ করে তাদরে কাজের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক গৃহস্ত শ্রমিক সর্দারদের কাছে প্রথ্যেক শ্রমিক বাবদ অগ্রীম ৫ হাজার টাকা করে পাঠিয়ে দিয়ে লোভ দেখাচ্ছে। এই লোভের ফাঁদে পা দিয়ে ময়মনসিংহের  শ্রমিকরা জীবন বাজি রেখেই পাড়ি জমাচ্ছে হাওড়াঞ্চলে। এসব শ্রমিকের কাছে নিজের জীবন, পরিবারের জীবন ও দেশের মানুষের জীবনের চেয়ে টাকাই বেশি মুখ্য। অন্যান্য বছর শ্রমিকরা হাওড়াঞ্চলে গৃহস্থের বাড়িতেই থাকতেন। এবার করোনার ভয়ে গৃহস্তরা শ্রমিকদের নিজেদের বাড়িতে না রেখে অন্যত্র প্যান্ডেল করে রাখছেন বলে জানা গেছে। গৃহস্তরা নিজেদের জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে ভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্রমিকদের একসাথে রাখার এ বন্দোবস্ত মূলত আধুনিক যুগে মর্মান্তিক ঘটনা।

এব্যাপারে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক আব্দুল জব্বার জানান, গত কয়েকদিন আগে সরিষার খানপুর গ্রাম থেকে ৫০জন শ্রমিক হাওড়ে গিয়েছেন ধান কাটতে। তাদের প্রত্যেককে অগ্রীম টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি নিজেও একটা দল নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সফর উদ্দিন জানান, আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ২২০ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় ধানে ৮০ ভাগ চাল হলেই কাটতে হবে। এবারও বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনতে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্ব স্ব উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার কাছ থেকে সনদ নিয়ে ইতোমধ্যে তিন হাজার ২০০ শ্রমিক এসেছেন। আরও ১২ হাজার ২৯৪ শ্রমিক আসবেন।

এব্যাপারে ময়মনসিংহের জোলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, বাচাই করে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাদের জেলায় ঢোকানো হবে।

তবে এভাবে শ্রমিকদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পাঠানোর পালাবদল ঘটলে করোনভাইরাসের বিস্তার আরো ব্যপক আকারে বৃদ্ধি পাবে। কারণ, তাদের যেদিন পাঠানো হবে তার থেকে ১৫ দিন পরও এসব শ্রমিকের দেহে করোনার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার তারা যেদিন আসবে তার ১৫ দিন পরও করোনার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে বড় ধরণের শঙ্কা থেকেই যায়। এমতাবস্থায় আরো কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

Share this post

scroll to top