ভিকারুননিসার সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় স্কুলের অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে স্কুলের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছে ছাত্রীরা।

বুধবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোড শাখার গেটের সামনে অবস্থান নেয় তারা। অরিত্রির আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ছাত্রীরা দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন শুরু করে।

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুলের মূল ফটকে অবস্থান করছে। এসময় নিজেদের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে স্লোগান দেয় তারা। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শামিল হয়েছেন অভিভাবকরাও।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুধবার কোন ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না বলে গতকাল মঙ্গলবারই ঘোষণা দেয়।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, স্কুলটির প্রিন্সিপাল নাজনীন ফেরদৌস ও প্রভাতী শাখার প্রধানশিক্ষক জিন্নাত আরার স্থায়ী বহিষ্কার, গভর্নিংবডি বাতিল করা ও আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারীদের উপযুক্ত বিচার করা। শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া আশ্বাস তিনদিনের মধ্যে বাস্তবায়িত না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও শিক্ষার্থীরা জানায়।

অন্যদিকে, আন্দোলনে সরাসরি শামিল না হয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তবে যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে তাদের পরীক্ষাও পরবর্তীতে বিকল্প ব্যবস্থায় নেয়া হবে বলে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানায় গভর্নিংবডির সদস্যরা।

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অধ্যক্ষ এবং গভর্নিংবডির সদস্যদের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। অরিত্রির মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভর্তি-বাণিজ্যের কারণে অধ্যক্ষের শাস্তিও দাবি করেন তারা।

এর আগে ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রির আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখা প্রধান জিনাত আরা ও শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনাকে আসামি করা হয়।

মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষত জিন্নাত আরাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া, আত্মহত্যার কারণ নির্ণয়ে অতিরিক্ত শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী অভিযোগ করেন, অরিত্রি ক্লাস পরীক্ষায় মোবাইলে উত্তরপত্র লিখে নিয়ে গিয়েছিল বলে জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে না দিয়ে স্কুল থেকে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। আমি স্কুলের প্রিন্সিপালের রুমে দুঃখ প্রকাশ করতে গেলে তারা অরিত্রিকে টিসি দিয়ে দেবে বলে জানায় এবং আমাকে অনেক কথা শোনান।

তিনি বলেন, এ সময় আমি মেয়ের সামনেই কেঁদে ফেলি। অরিত্রি হয়তো আমার ওই কান্না-অপমান মেনে নিতে পারেনি। বাসায় ফিরে সে তার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top