জীবন শব্দটি সাধারনতঃ প্রাণ আছে এমন অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত ইহজাগতিক বিষয় বলেই ধারণা করা হয় । জীবন মূলতঃ প্রাণ আছে এমন একক সত্ত্বার জন্ম বা উদ্ভব থেকে তার মৃত্যু বা তিরোধানের সময় কালকেই বুঝানো যেতে পারে। জীবন আবার একক সত্ত্বা ও সমস্টিক হয় । মানুষ সহ সকল অস্তিত্বের একক ও সমস্টিক জীবন কাল আছে বলেই ধারণা করি। আর প্রাণ আছে কার এ বিষয়ে অনেক ধারণা বা বৈজ্ঞানিক মত আছে । প্রাণের সাথে সম্পর্কিত করে সকল অস্তিত্বকে জীব ও জড় তে বিভক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে উনিশ শতকের ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ই.বি টেইলর তার Primitive Culture নামের যুগান্তসৃষ্টিকারী গ্রন্থে বিশ্লেষণ করে ধারণাটি অনেকে না মানলেও সকল বস্তুরই উদ্ভব ও টিকে থাকার সময়কাল আছে। এই সময়কালকে সেই বস্তু বা সরল অর্থে প্রাণীর জীবন কাল হিসেবে চিন্তা করা যায় ।
এ ক্ষেত্রে আমরা যারা দেখিয়েছেন যে পৃথিবীর সকল বস্তুরই প্রাণ আছে । আক্ষরিক অর্থে সকল বস্তুরই প্রাণ আছে এমন মানব প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সকলেরই একক জীবনকাল আছে । সেটা ১০ সেকেন্ড বা তারও কম সময় থেকে ১৮০ বছর বা আরও কিছু বেশি দিন পর্যন্ত হতে পারে । বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসীদের মতে মানুষের দুটি জীবন ইহকাল ও পরকাল । তাই মানুষের জীবন অবিনাশী ,শুধু রূপান্তর হয় নিঃশেষ হয় না । জীবন নিঃশেষ হোক বা না হোক ইহকালে জীবনাবসান ঘটে । এমন যেহেতু একক জীবনের অবসান হয় বা হবে । ঠিক একইভাবে সমস্টিক সত্ত্বা হিসেবে যে কোন প্রজাতির নিজস্ব জীবন কাল আছে । যেমন এই পৃথিবীতে বিচরণকারী ডায়নাসর প্রজাতি হিসেবে একটি সময় বা কালব্যপী দাপটের সাথে বিচরণ করে অস্তিত্বহীন হয়েছে । এমন বহু প্রজাতি একেবারেই বিলুপ্ত হয়েছে এবং অনেক প্রাণীকূল বিলুপ্তির পথে যাদের আমরা বিরল প্রজাতি হিসেবে তালিকা ভুক্ত করেছি । উদাহরণ হিসেবে কিছু প্রজাতি’র নাম বলা যেতে পারে । যেমনঃ সাবের-দাঁতযুক্ত বিড়াল বা বাঘ । প্রাণীটি ৫৫ মিলিয়ন হতে ১১৭০০ বছর পুর্ব পর্যন্ত পৃথিবীতে বাস করেছে । পশমযুক্ত মামথঃ কিছুটা বর্তমানের হাতীর মতো । এই প্রাণীটিও ৩.৫ মিলিয়ন বছর পুর্ব থেকে আফ্রিকা , উত্তর ইউরেশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় বিরাজ করত এবং খ্রীঃ পুর্ব ১৭০০ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল । এমন করে ডুডূ , গ্রেট আর্ক ,তাস্মিনিয়ান বাঘ , পেসেঙ্গার পিঙ্গুইন ইত্যাদি প্রাণীকুল একদম বিলুপ্ত হয়ে গেছে । বিলুপ্তির পথে আছে লাইবেরিয়ান লায়ন ,শুমাট্রান টাইগার , পর্বত গেরিলা,ব্ল্যাক গন্ডার ইত্যাদি । মানব প্রজাতির আধুনিক যুগ শুরুর আগে এ সকল প্রজাতির বিলুপ্তির পেছনে মূলত প্রাকৃতিক কারণ বিদ্যমান ছিল বলেই বিশেষজ্ঞগন মনে করেন,বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং এই পরিবর্তনজনিত অন্যান্য কারণ সমূহ ।বর্তমানে মানব সৃষ্ট কারনেও ক্লাইমেট চেঞ্জ ঘটছে এবং সে কারণে অনেক প্রজাতির আজ অস্তিত্ব হুমকির মুখে এবং এদের মধ্যে মানব প্রজাতিও রয়েছে ।
কারণ যাই হোক না কেন পৃথিবী, কোন এক প্রজাতি কে চিরসময়ের জন্য টিকিয়ে রাখে না । এই জন্য পৃথিবীর নিজের মৃত্যুমুখী পরিবর্তনও মহাকরণ হতে পারে । বিলীন বা বিলুপ্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত সকল প্রজাতি যুদ্ধ করে টিকে থাকার কিন্তু শেষাবধি পারেনি । পৃথিবীর মৃত্যুমুখী কষ্ট বা জ্বালা জুড়ানো বা পরিবর্তন করতে গিয়ে কখনো ভূমিকম্প , কখনো বন্যা , কখনো বরফ গলা ,কখনো অগ্নুৎপাত ,অগ্নিপ্রবাহ , কখনো ঝড় টাইফুন কখনো জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি ঘটিয়েছে বা ঘটেছে । করেছে নিজের পরিবর্তন আর এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না পারায় বিলুপ্ত হয়েছে বহু প্রজাতি । এর সাথে বরাবরই ছিল পৃথিবীর প্রথম জীবন হিসেবে উদ্ভব হওয়া ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ । নিজের শারীরিক পরিবর্তন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে না পেরেও শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়াও বিলুপ্তির কারণ হিসেবে বিবেচনা হতে পারে।
পৃথিবীর এই প্রাণীকুলের জীবন কাল পেরুনোর মতো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা নিয়ত ঘটছে । সেই মহা নিনাদ বা বিগব্যান তত্ত্ব বা যে মহাকারনেই এই জগত সৃষ্টি হোক না কেন সত্য যে এই বিশ্ব নিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে । এই মহা বিশ্বে রয়েছে লক্ষ কোটি গ্রহ ,নক্ষত্র ,গ্রহপুঞ্জ ,নক্ষত্রপুঞ্জ,গ্যালাক্সি ইত্যাদি ইত্যাদি, ইত্যাদি । শুধু বলা যায় মহাকালে সৃষ্ট অগণ্য নক্ষত্রের আলো প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল বেগে পৃথিবীর দিকে ছুটে ৪.৫ বিলিয়ন বছরে এখনোও পৌঁছতে পারেনি । এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডে নতুন নক্ষত্রের সৃষ্টি হচ্ছে আবার মহা কালের গহ্বরে অনেক নক্ষত্র তার পরিবার সহ মৃত্যু বরণ করেছে । তাই বিশ্বের এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সদস্য পৃথিবীর ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য ।
জ্যোতির্বিদদের মতে পৃথিবীর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বৎসর এবং আরও ৫০০ কোটি বৎসর পৃথিবী বেঁচে থাকবে তারপর মৃত্যুবরণ করবে।
পৃথিবী নামক এই গ্রহের অন্যতম প্রাণী আমরা মানব প্রজাতি । তাই পৃথিবীর বিভিন্ন সময়ের বা যুগের পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে আমাদের জীবন যুদ্ধের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান । যদিও পৃথিবীর জন্ম কাল থেকে এর পরিবর্তনের স্বরূপ বিশ্লেষণ আমার মূল লক্ষ নয় । তবুও শুধু এই টুকু বলা ভালো যে জন্মের সময়ের এক গ্যাসীয় কুণ্ডলী থেকে বর্তমান সবুজ রূপে রূপান্তরে পৃথিবীকেও অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে । গ্যাস হতে উত্তপ্ত ধাতু তারপর ঠাণ্ডা বরফ এবং খুব ধীরলয়ে সবুজ রূপ ধারণ । ৪.৫বিলিয়ন হতে বর্তমান রূপের পৃথিবীতে আসতে ৫৪ মিলিয়ন বছর সময় লেগেছে । সব চেয়ে আশচর্যের বিষয় এই যে এই পরিবর্তনের পদ্ধতি হিসেবে পৃথিবী বেছে নিয়েছিলো ভল্কানাইজেশন । প্রান ধরনের জন্য এই পরিবর্তন ছিল আবশ্যিক ।
পৃথিবীর জন্ম ৪.৫ বিলিয়ন বৎসর আর ১৯১৫ সালে ৩.৭ বিলিয়ন আগে পুর্ব গ্রীনল্যান্ডে প্রাচীন শিলায় প্রথম জৈব জীবনের আবিষ্কার হয় ।এরপর ১৯১৭ সালে কানাডার কুইবেক এ Fossilized microorganism ফর্মে সবচেয়ে পুরাতন জীবনের সন্ধান পাওয়া যায় । ব্যক্টোরিয়া ও আর্কিয়ার যৌথ ফর্মেই প্রাথমিক জীবনের প্রাধান্য ছিল । এই থেকে শুরু হয়ে অগণিত জীবনের উদ্ভব হয়েছে । ধারণা করা হয় ১ ট্রিলিয়ন প্রজাতি বর্তমান পৃথিবীতে বসবাস করে । এর মধ্যে ১.৭৫ -১.৮ মিলিয়নের নামকরণ করা হয়েছে এবং ১.৬ মিলিয়ন প্রজাতির নাম কেন্দ্রীয় ডাটা তে সংরক্ষণ করা হয়েছে । এতো যে জীবন ,এতো যে প্রজাতি এর মধ্যে মানব প্রজাতি একটি ।
পৃথিবীতে জীবনের উদ্ভবকাল বিবেচনায় নিলে মানব প্রজাতির উদ্ভব সাম্প্রতিক মাত্র ২ থেকে ৩ মিলিয়ন বৎসর পুর্বে । মানব প্রজাতির উদ্ভব ও বিকাশ বা বিবর্তন (Evolution) বা জীবন যুদ্ধ বুঝার জন্য বিজ্ঞানের অনেকগুলো শাখার সাহায্য গ্রহণ জরুরী । শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এবং নিজেদের সভ্যতা গড়ে তোলার যুদ্ধও তার জীবন যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত । আমরা কৃতজ্ঞ Physical Anthropology , Primatology, Archaeology , Paleontology , Neurobiology , Etology , linguistics, evolutionary psychology, Embryology , Genetics এর প্রতি । এ সকল শাখার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষন আমাদের মানব প্রজাতির জীবন যুদ্ধ ও আমাদের বিকাশ সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং ভবিষ্যতের জীবন যুদ্ধ টা কেমন হলে এই প্রজাতি আর কত দিন টিকে থাকবে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে । এছাড়া আমরা প্রজাতি হিসেবে কোন আত্মঘাতি মূলক আচরণ করছি কি না সে সম্পর্কেও ধারণা বা সাবধান হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বা যুদ্ধ কৌশল ঠিক করতে পারে । .
আমাদের উপলব্ধির জন্য উদ্ভবকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মানব প্রজাতির জীবনযুদ্ধের স্বরূপটি দেখে আসা যায় । ধারণা করা হয় বিভিন্ন শ্রেণীর প্রাণীর উদ্ভবের প্রক্রিয়াতেই দ্বিপদী প্রাণীর একটি শাখা থেকে হেমোসেপিয়ান্স নামক এই প্রজাতির উদ্ভব ও বিকাশ । যাই হোক মানব প্রজাতির উদ্ভবের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য নয় বরং মুল বিষয় হচ্ছে মানব প্রজাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার সামষ্টিক জীবনযুদ্ধ ও সংগ্রাম এর বিষয়টা উপলব্ধি করা এবং বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের মানুষিক ,শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ ও ভবিষ্যৎ আচরণ কর্মপন্থা নির্ধারনে চিন্তা করা ।
হোমো বা হোমোনিড গ্রুপ থেকে মানব প্রজাতি উদ্ভবকালেই নিজের শারীরিক ও মস্তিষ্ক উন্নতকরণের সংগ্রাম করেছে ।আধুনিক মানুষে রূপান্তরে সময় নিয়েছে বহু বছর । অন্যান্য প্রাণীদের মতোই ইতিহাস পুর্ব সময়ে বা প্রাচীন প্রস্তরযুগে শিকার করে ফল মুল সংগ্রহ করে জীবন বাঁচাতে হয়েছে । পাহাড় ও বনে বসবাস করেছে । ডক্যুমেন্টেড রেকর্ড পূর্ব মানব জাতির জীবন যুদ্ধের সরূপ সম্পর্কে ধারনা করা কঠিন । তখনও ঝড় ছিলো , ভূমিকম্প ছিলো , জলোচ্ছ্বাস ছিলো ,প্লাবন ছিলো ,অতিবৃষ্টি ছিলো ,অনাবৃষ্টি ছিলো ,অনাবিষ্কৃত ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের আক্রমন ছিলো ,মহামারি ছিলো ,ছিলো হিংস্র প্রাণী ,ছিলো পঙ্গপাল , বিষাক্ত মাছি, ইত্যাদির আক্রমন ।আর ছিলো না আশ্রয় ,কোন ইমারত,শক্ত ভবন,প্রয়োজনীয় জ্ঞান,প্রযুক্তি বা হাতিয়ার ।
মানব প্রজাতির তিনটি যুগের কথা আমরা সবাই কম বেশি জানি এবং সে সময়কালে মানুষের জীবন যুদ্ধ সম্পর্কে একটা ধারণাও মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত । এ যুগ তিনটি ১। প্রস্তর যুগ ২। ব্রোঞ্জ যুগ, ৩। লৌহ যুগ ।
প্রস্তর যুগ সময় ও মানুষের জীবন সংগ্রাম পদ্ধতি বিবেচনায় তিন ভাগে চিন্তা করা হয় । ১ পেলেওলিথিক ( প্রাচীন প্রস্তর যুগ ,২.৫ মিলিয়ন হতে খৃষ্টপুর্ব ১০০০০ পুর্ব পর্যন্ত ) ২। মেসলেথিক (মধ্য প্রস্তর যুগ -খৃষ্ট পুর্ব ১০০০০ হতে খৃষ্ট পুর্ব ৮০০০ পর্যন্ত ) । এবং ৩। নিওলেথিক (নূতন প্রস্তর যুগ -খৃষ্টপুর্ব ৮০০০ হতে ৩০০০ পর্যন্ত ।
প্রাচীন প্রস্তর যুগে প্রায় আড়াই লক্ষ বৎসর মানব প্রজাতিকে পাহাড়ের গুহা , গাছের শাখা বা বনেই বাস করতে হয়েছে শিকারি ও সংগ্রাহক হিসাবে । মধ্য প্রস্তরযুগে হাতিয়ার হিসেবে ছোট পাথর , হরিণের শিং , বল্লম ও ধনুকের ব্যবহার শিখে । এই সময়ে পাহাড় বা বন থেকে নদীর উপকূল বা কোন জলরাশির ধারে বসবাস শুরু করে ।
শিকারি ও সংগাহক থেকে কৃষিজীবি ও উৎপাদনকারী হিসেবে নিজেদের উন্নীতকরনে মানব প্রাজাতির প্রায় ৩ লক্ষ বৎসর লেগে যায় ।
ব্রোঞ্জ যুগে (খৃষ্টপূর্ব ৩০০০ হতে খৃষ্টপূর্ব ১৩০০ ) মানুষ গ্রাম পত্তন করে , কাপড় প্রস্তুত করে , গোল ঘর তৈরি করে , গৃহপালিত পশুর জন্য আলাদা ঘর তৈরি করে ।সেই সময়ে প্রকৃতির সাথে সখ্যতা করেই জীবনযুদ্ধটি চালায় মানুষ ।
লৌহ যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০০ হতে খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০ বৎসর )কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন করে ষ্টীলের বিভিন্ন টুলস এবং অস্ত্র তৈরি করে , স্থাপত্য ভবন নির্মান করে , রাজার প্যালেস ও ধর্মীয় স্থাপনা নির্মান করে ।এই সময়কালে কৃষি ও ধর্ম তুলনামূলকভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে এবং প্রাথমিক ঐতিহাসিক কালের সূচনা হয় ।এই সময় পর্যন্ত মানুষের জীবন যুদ্ধ মোটামুটি একই রকম ছিল । প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ । বিভিন্ন রোগ মহামারী সত্ত্বেও টিকে থাকার যুদ্ধ । এই সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতা বুঝতে একটি কথা বলাই যথেষ্ট যে , নূতন বাসস্থানের সন্ধানে মানুষ তার গোষ্ঠী নিয়ে কোন পরিবহন ছাড়াই শুধু টিকে থাকার জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে , এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে মাইগ্রেট করেছে । এ জন্য সারা বিশ্বের জনগোষ্ঠী বা সমগ্র মানব প্রজাতিই মূলতঃ মাইগ্রেন্ট । অঞ্চল ভিত্তিক ছড়িয়ে পড়ার কারণে গোষ্ঠী চেতনার উদ্ভব হয় এবং সবাই মাইগ্রেন্ট এই চেতনা ভুলে কোন কোন অঞ্চল বর্তমানে কোন কোন দেশের মানুষ ভাবে যে, এই ভূমি , এই দেশ তার নিজস্ব । এর উপর তাদের একক ও আদি সহজাত অধিকার আছে । তাই অন্য কারো অধিকার নেই । এই চেতনা মূলতঃ মানব প্রজাতির জন্য ক্ষতিকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে। এটি অন্য প্রসঙ্গ অন্য কোথাও বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে রইল ।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে প্রত্যেক পর্যায়েই সমগ্র মানব প্রজাতির জন্য একক মানুষের অবদান ছিল উদ্ভাবন , নতুন আবিষ্কার , নতুন চেতনা বিকাশের জন্য । একক সেই ব্যক্তির আবিষ্কার বা উদ্ভাবন কে অভিজ্ঞতার আবরণে কাজে লাগিয়ে পুরো মানব জাতি এগিয়ে গেছে ।
মানব জাতির নিরন্তর জীবন যুদ্ধের বিষয়টা বুঝার জন্য সাম্প্রতিক কালে কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ , রোগের প্রকোপ এবং নিজেদের সৃষ্ট যুদ্ধের বিপরীতে মানব প্রজাতির টিকে থাকার চিত্রের দিকে তাকালেই হয় ।
এই যে ভাইরাস ! যাকে কোভিড ১৯ নামে নামকরণ করা হয়েছে । এটি নূতন এসেছে । গত ডিসেম্বরে চীনের ওহান প্রদেশে মানুষ কে আক্রমন করে এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে । এর ভয়াবহ আক্রমণে সারা বিশ্ব থেমে গেছে । লক ডাউন চলছে । ঘরে আটকে পড়েছে মানুষ । করোনা’র ভয়ে মানুষ সারাদিন রাত ঈশ্বর , ভগবান , জিহোভা , আল্লাহ , স্রষ্ঠা , আহুরামাজাদা , গড কে ডাকছে । যার যার বিশ্বাস মতে একান্তে বা কখনো দল বেঁধে ডাকছে । এমন ডাক বুঝি আল্লাহ আগে কখনো শুনেন নি।
যাই হোক এমন ভাইরাসের আক্রমণ নতুন নয়। মানব জাতিকে এমন বহু ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। বহু মানুষ কে জীবন দিতে হয়েছে। একেক অঞ্চলের মানুষ মরে পড়ে থেকেছে কেউ ধরার লোক ছিল না। প্রত্যেকটি ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে ।এগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে মানুষ এবং ভাইরাস কে পরাভুত করেছে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় প্রতিবছর বিশ্বে শুধুমাত্র ইনফ্লুয়েঞ্জাতেই ২৯০০০০ থেকে ৬,৫০০০০ মানুষ মারা যায়। S.A.R.S. নামক ভাইরাস যা করোনা ভাইরাসের পূর্বপুরুষ । এই ভাইরাস গত নভেম্বর ২০০২ থেকে জুলাই ২০০৩ সময়ে চীনের বেইজিং এ আক্রমণ করে ৮০৯৬ জন কে হত্যা করে। ২০১২ সালেও এটি ২৪৯৬ জনকে আক্রমণ করে ৮৫৪ জন কে হত্যা করে। এমন অঞ্চল ভিত্তিক ভাইরাসের আক্রমন বরাবরই ছিল কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছিল না বলে আলোড়ন হয়নি।
১৮ শত শতাব্দীতে ” ব্ল্যাক ডেথ “এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় পূর্ব এশিয়া হতে পশ্চিম এশিয়া জুড়ে। এর ব্যাপ্তি বা সময়কাল ছিল এক দশকেরও বেশি সময় । এটি ৭৫ মিলিয়ন থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ কে হত্যা করে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১/৪ ভাগ মানুষ মৃত্যুবরণ করে । শুধু মাত্র ইংল্যান্ডের ১০ জনের মধ্যে ৪ জনই মৃত্যুবরণ করে । ফ্লরেন্স শহর তার বসবাসকারী ১০০০০০ মানুষের মধ্যে ৫০০০০ জন কে হারায় ।
১৫২০ সনের মার্চ মাসে একজন স্মল বক্সের জীবাণু বহনকারী ফ্রান্সিস কে ডি ইগুইয়া মেক্সিকো আসে । তখন কেন্দ্রীয় আমেরিকায় কোন ট্রেন , বাস এমন কি গাধাও ছিল না কিন্তু ডিসেম্বর আসতে না আসতেই কেন্দ্রীয় আমেরিকার এক তৃতীয়াংশ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় ।
১৯১৮ সালে এক জঘন্য ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ( a Virulent strain of flu) কয়েক মাসের মধ্যে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় অর্ধ বিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করে এবং বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ মারা যায় ।
ধারণা করা হয় যে, ভারতের প্রায় ৫% মানুষ মারা যায় । তাহিতি দ্বীপের ১৪% এবং সামাও দ্বীপের ২০% মানুষ মারা যায় । সবমিলিয়ে ১০ মিলিয়নের বেশি মানুষ মারা যায় । সাম্প্রতিক কালে সংঘটিত বলে এ গুলোর কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি কিন্তু এই রকম বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমন বা রোগ / মহামারীর মোকাবেলা মানব প্রজাতিকে করতে হয়েছে এবং এ রকম রোগ দেখা দিলে তারা নিজস্ব এলাকা ছেড়ে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে নুতুন করে আবাস গড়েছে । শুরু করেছে নতুন জীবন । সুপেয় পানি , ফল মুলের প্রাপ্তির সুবিধা , ফসল ফলানো বা মাছ ধরার সুবিধা সম্পন্ন জায়গা ছেড়ে নুতুন করে জীবন শুরু করার সংগ্রাম যে কতটা কঠিন এবং কতটা প্রানশক্তি থাকলে এটা সম্ভব । তাও আবার পুরো জনগোষ্ঠী নিয়ে তা ভাগ্য অন্বেষণ কারী মাইগ্রেন্ট দের দিকে তাকালে সহজেই অনুমান করা যায়। নতুন নেতৃত্বের কারণে হোক বা নুতুন জায়গার সন্ধানে কোন দিকে যাবে এ নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে অনেকে ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নতুন সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছে । এটাও মানব প্রজাতির এক জীবন যুদ্ধ । এ সকল যুদ্ধে জিতেই মানুষ আজকের পর্যায়ে এসেছে।
এতো গেলো ভাইরাস বা রোগএর বিরুদ্ধে জীবন যুদ্ধের সামান্য ধারনা প্রদানের চেষ্টা । যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপরীতে মানুষ কে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়েছে তার হিসেব পাওয়া যায় মূলত ঃ সাম্প্রতিক কালের। সাপ্রতিক কালে সংঘটিত প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাকে বিবেচনায় আনলে আমাদের অনুভব করা সহজ হতে পারে যে উদ্ভব কাল থেকে মানুষ কত সংগ্রাম , কৌশল ও ত্যাগ স্বীকার করে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে ।
যেমন , চীনের বন্যা ,১৯৩১, ভোলার সাইক্লোন ১৯৭০ , হাইতির ভূমিকম্প ২০১০, তানসান( চীন )এর ভূমিকম্প ১৯৭৬, টাইফুন (nina)চীন ১৯৭৫ , ভারতীয় সমুদ্রের ভূমিকম্প ২০০৪, ইয়াংসী নদীর বন্যা (চীন) ১৯৩৫ , জাপানের মহা ভূমিকম্প ১৯২৩, এবং ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের সাইক্লোন । উল্লিখিত মাত্র ১০টি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ৬৬ লক্ষ ২৮ হাজার ১৬৪ জন । এই মৃত্যুর সাথে সম্পদএর ক্ষতি এবং মানুষিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে নুতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো এবং আরও নুতুন উদোমে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার গতি দেখে মানব প্রজাতির প্রাণশক্তি সম্পর্কে একটা ধারনা করা যেতে পারে যা অবশ্যই অনুপ্রেরণা দিতে পারে এবং প্রশংসনীয়।
বর্তমানে আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতির হাল চাল সম্পর্কে অগ্রিম তথ্য প্রদান এবং নিজেদের বাসস্থান প্রকৃতি বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে জীবন দানের পরিমাণ কমেছে এবং এই সব প্রযুক্তির উদ্ভাবনও মানুষের প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের নিরন্তর সংগ্রামের উদাহরণ ।
ধারনা করা হয় লৌহ যুগে অর্থাৎ খ্রিষ্ট পুর্ব ৩০০০ হতে খ্রিষ্ট পুর্ব ৯০০ সময় কালেই মানব জাতি নিজেদের রাজা বা নেতার অধীনে পরিচালিত হতে শুরু করে এবং শুরু হয় নিজেদের সম্পদ সংরক্ষণ, অধিকারে রাখার প্রচেষ্টা । পরবর্তিতে নেতৃত্বের মধ্যে ক্রমে গড়ে উঠে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা ও রাজত্ব প্রসারের চিন্তা । কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে সারা বিশ্ব শাসন বা জয় করার আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠে আর মানব প্রজাতির জীবন সংগ্রামের রূপ পরিবর্তিত হয়ে যায় । এই সকল আকাঙ্ক্ষার জন্য জীবন দিতে হয় লক্ষ লক্ষ মানুষকে ।
মানুষ সামাজিক জীব । এয়রিষ্টেততলের আবিষ্কার । কোয়ারাইন্টাইনে থাকার জন্য মানুষের এই প্রবণতা যে কত সত্য তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি । মানুষ মানুষের কাছে থাকতে চায় , মানুষের সাথে কথা বলতে চায় । সে ভাব বিনিময় করতে চায় সে কারণে আজ থেকে প্রায় ৫০০০০ হাজার বছর আগে কথা আবিষ্কার করেছে । লক্ষ বছর আগে ছবি এঁকেছে । মানুষের সংগ ছাড়া মানুষ বেশী দিন বাঁচে না।
সেই সাথে মানুষের অন্য এক প্রবনতা হলো সে একক। একক ভাবে বড় হতে চায় , সবাইকে ছাড়িয়ে উঠতে চায়। নিজেকে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন করতে চায় , নিজের কওম একত্র করে অন্যদের উপর শাসন চাপাতে চায় । এই প্রবণতা মূলতঃ ইতিহাস সৃষ্টি যুগের। মানুষ যুদ্ধবাজ হয়ে হয়ে উঠে । মানুষ খুনি হয়ে উঠে । নিজের , নিজের গোষ্ঠীর বা সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য , নিজের কওমের ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বা নিজেদের সাংস্কৃতির প্রসার ও অন্যের উপর চাপানোর জন্য , যে কোন কারণেই মানুষ অন্যকে খুন করতে পারে । যুদ্ধ করতে পারে । যুদ্ধ করে যে কোন স্লোগান তুলে ।” আমার জায়গা আমার অধিকার ” , “আমি স্রষ্টার প্রতিনিধি , আমার শাসন করার অধিকার আছে “, “আমি রাজা হিসেবে জন্ম নিয়েছি । ” আমি ঈশ্বরের বাণী নিয়ে এসেছি এটি সত্য , অন্যরা তা মানে নিতে বাধ্য “, অথবা আমি রাজতান্ত্রিক , আমি গণতান্ত্রিক , আমি সমাজতান্ত্রিক, আমি ধর্মতান্ত্রিক ,আমিই শ্রেষ্ঠ শাসক , আমার অধীনেই তুমি ও তোমরা ভালো থাকবে । আমার ব্যবস্থাপনাই শ্রেষ্ঠ এই এলাকায় আমার শাসনই চলবে ইত্যকার হাজারো ধারনা এবং ধারনাজাত ব্যবস্থাপনা চাপিয়ে দেয়ার জন্য মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে । লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ কে হত্যা করেছে । তাই মানব প্রজাতি বিলুপ্ত হবার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে ।
প্রাক আধুনিক যুগ , মধ্য যুগ আর চলমান আধুনিক যুগের ভিন্ন যুদ্ধে মানুষের হত্যার পরিসংখ্যান দেখলে গা শিউরে উঠবে। প্রাক আধুনিক যুগ ;প্রাচীন পারস্য রাজা বনাম অন্যান্য রাষ্ট্রের যুদ্ধ , গ্রিক -পারস্য যুদ্ধ , সামীট যুদ্ধ , মহতী আলেকজান্ডারের যুদ্ধ , পিউলিকের ১ম ,২য় ৩য় যুদ্ধ, কলিঙ্গের যুদ্ধ , কিনসের একত্রীকরণের যুদ্ধ , কিম্ব্রিয়ান যুদ্ধ , গালিফ যুদ্ধ , ইহুদি -রোমান যুদ্ধ , কিটোস যুদ্ধ এমন খৃষ্ট পুর্ব ৫৪৯ থেকে ৬০ -৬১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ২৪ টি যুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি ৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৭শত মানুষকে হত্যা করা হয় ।
মধ্য যুগ : ৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৪৮৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময় কালে সংঘটিত হয় ১৪ টিরও অধিক যুদ্ধ । মরিস যুদ্ধ , আরব- আজারবাইন যদ্ধ , স্পেন ও পুর্তগালের সাথে মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের যুদ্ধ ,লোসহান বিদ্রোহ , মাহমুদের যুদ্ধ জয় , অটোমান সম্রাজ্য বনাম বিভিন্ন দক্ষিণ ইউরোপীয়দের যুদ্ধ , তইমুরের যুদ্ধ জয় , ক্রুসেড , জর্জিয়া -খিতান যুদ্ধ, হাউস অব ভেলুইম বনাম হাউজ অব প্লান্টাজেনেট এর মধ্যকার একশত বছর ব্যাপী যুদ্ধ , মোগল বিজয় , পুনর্জাগরন বা পুনর্দখল ( স্পেন এবং পুর্তগিজ বিভিন্ন রাষ্ট্র বনাম মুসলিম রাষ্ট্র ) , স্কটিশদের স্বাধীনতা সংগ্রাম , গোলামের যুদ্ধ ইত্যাদি । রাজা , সম্রাট বা ধর্মীয় কর্তৃত্বের সাথে পারস্পারিক এ সকল যুদ্ধে প্রান হারিয়েছে ১৬ কোটি ২৪ লক্ষ ৯০০০০ হাজার মানুষ ।
আধুনিক কাল : ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দ হতে আজকের সময় পর্যন্ত দুইটি বিশ্বযুদ্ধ সহ পৃথিবী বা মানব প্রজাতি ১২২ টি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়েছে। এই সকল যুদ্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম বলা যেতে পারে । ইতালির যুদ্ধ( ১৪৯৪-১৫৫৯ খ্রিষ্টাব্দ ) , স্পেনের বিজয় , ১৫১৯-১৬৩২ খ্রী ; (কলেদ্রীয় রাজা বনাম মেক্সিকোর আজকের সম্রাটের যুদ্ধ) , মহতী সোলায়মানের বিজয় (১৫২১-১৫৬৬ খ্রি ঃ), এমন অটোমান সম্রাজ্যের সাথে বলকান, আফ্রিকান, এরাবিয়ান রাষ্ট্র সমূহের যুদ্ধ , জার্মান যুদ্ধ , ফ্রান্সের ধর্ম যুদ্ধ , আশি বছর ব্যাপী যুদ্ধ , এঙ্গোলা স্প্যানিশ যুদ্ধ , জাপান কর্তৃক কোরিয়া দখল, ফ্রান্স স্প্যানিশ যুদ্ধ , ইংলিশ সিভিল ওয়ার , মোগল মারাঠা যুদ্ধ সহ ১৯১৪-১৯১৮ এবং ১৯৩৯ -১৯৪৫ খ্রি; এর ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ । এর মধ্যে কাশ্মীর , প্যলেষ্টাইন , সিরিয়াসহ বহু যুদ্ধ চলমান রয়েছে । এমন ১২২ টি যুদ্ধে মানব প্রজাতি হারিয়েছে তার ৬৫ কোটি একুশ লক্ষ চব্বিশ হাজারেরও অধিক মানুষকে । আলাদা করে বলতে হলে শুধু ১ম বিশ্ব যুদ্ধে জীবন দিয়েছে ১৬ কোটি থেকে ৩০কোটি মানুষ আর ২য় বিশ্বযুদ্ধে জীবন দিয়েছে ৫কোটি ৬১লক্ষ ২৫ হাজার থেকে ৮ কোটি ৫০ লক্ষের অধিক মানুষ । নিজেরা নিজেদের সমূলে ধ্বংস করার এতো সব আয়োজন মনে হয় কেবলমাত্র মানব প্রজাতির পক্ষেই সম্ভব।
এ সকল যুদ্ধের পিছনে কত কারণ ছিল , কেন যুদ্ধ হলো , কেন যুদ্ধ করতে হলো , কেন যুদ্ধটা প্রয়োজন ছিল , কেন যুদ্ধ যৌক্তিক ছিল , এমন হাজারো যুক্তি যুদ্ধবাজরা গবেষণা করে বের করেন । যুদ্ধ বিষয়ক জ্ঞানী বা পারদর্শীরা রাষ্ট্রের খুবই উঁচুদরের মানুষ । যুদ্ধের পিছনে যত কারণ বের করা হোক না কেন মুলুতঃ এক বা কতিপয় ব্যক্তির ইতিহাসে ঠাঁই করে নেয়া , তার নাম উচ্চারন যেন হয় প্রতিমুহুর্তে , তার রাজত্বে যেন সে সবচেয়ে উঁচু আসনে থাকেন আর সবাই তার কথা, বাণী মেনে চলে , তার বা তার কওমের শ্রেষ্টত্ব যেন প্রতিষ্ঠা পায় , এমন কি সারা বিশ্ব যেন তার বিশ্বাস , ধারনা অনুসারে চলে এমন চিন্তাই যুদ্ধের কারণ । যুদ্ধের অনুকূলে তৈরি করা হয়েছে নীতি ,আদর্শ ,আনা হয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন। এই যে যুদ্ধ প্র্ত্যক্ষ ফল মানুষের মৃত্যু আর পরোক্ষ অনেক ফলের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা , এসেছে দূর্ভিক্ষ হয়েছে আরো মানুষের মৃত্যু । ঘরহারা , বাস্তুহারা ,পরিবার বা সঙ্গীহারা , জীবনের বিশ্বাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন থেকে শুরু করে হেন কোন নেতিবাচক প্রভাব নেই যা পড়ে নাই ।
যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ও মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট ব্যবস্থাপনার কারণে মানবজাতি কে মোকাবিলা করতে হয়েছে দুর্ভিক্ষের । এগুলো সবই গায়েবী গজব হিসেবে বিবেচনায় নিজেদের বিবেক বর্জিত কাজকে ঢাকার চেষটা করা হয়েছে । যে কারণেই দুর্ভিক্ষ হোক সাম্প্রতিক বিশ্বে সংঘটিত কিছু দুর্ভিক্ষে মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখলে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় মানব জাতির সংগ্রাম অনুভব করা যেতে পারে । ১৯০৭ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত সময়ে শুধু চীন মোকাবেলা করেছে ৬টি ফেমিন বা দুর্ভিক্ষ । এ সকল দুর্ভিক্ষের কারণে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে । প্রত্যেকটি মহাদেশ অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতিই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করেছে । ১৩১৫-১৩১৭ সালে ইউরোপের মহামন্দা , ভারতের বেঙ্গল দুর্ভীক্ষ , ৪৩এর মন্বন্তর , ১৬৩০-৩২ এ মোঘল আমলের ডানকান দূর্ভীক্ষ , ১৯৩২-৩৩ এ সোভিয়েত ইউনিয়নের দুর্ভীক্ষ , ১৯৭৬-৭৮ ভারতের মহা দূর্ভীক্ষ , ১৯১৭ -১৯১৯ সালে ভারত, জাপানিজ , পারস্য রাশিয়ান ইত্যাদি মোট ১৯ টি দূর্ভীক্ষে মোট ১৫ কোটি ৪৩ লক্ষ মানুষ প্রান দিয়েছে ।
মানব প্রজাতি তার ইতিহাস পুর্ব কাল থেকে চলমান জীবনে যে সব প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ঠ দুর্যোগ মোকাবেলা করেছে তার হিসেব থাকলে শধু মানুষের মৃত্যুর কথাই লিখতে হতো ।
সত্য যে মানব জাতি টিকে আছে । আর ভালোভাবেই টিকে আছে । টিকে থেকেছে নিজস্ব প্রান শক্তি দিয়ে , নিজের মস্তিষ্কের জোরেই । প্রায় দুইলক্ষ বছর পুর্বে তার মস্তিকে ব্যপক পরিবর্তন হয় এবং এই পরিবর্তনে মানুষ হয়ে উঠে প্রবল কল্পনাপ্রবণ, বিবেকবান , অন্তরদর্শী , যুক্তিনুসারী , বিজ্ঞানমুখী , উদ্ভাবক , অনুসন্ধিৎসু এক বুদ্ধিমান প্রাণী । যত আঘাত আসুক সে মোকাবেলার কৌশল আবিষ্কার করে বা করার চেষ্ঠা করেছে । মানুষের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বয়কর সাফল্য লাভ করেছে ।মানুষ নদী কে শাসন করেছে ,বন্যা মোকাবেলা করেছে , ঘুর্নিঝড়ের গতিপথ পরিবর্তন করেছে , প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা দিয়ে নিজেদের রক্ষা করছে , ভূমিকম্পের আগাম বার্তা প্রদানের প্রযুক্তিও উদ্ভাবনের পথে ,ভূমিকম্প বান্ধব স্থাপত্য নির্মান করেছে ।অনাবৃষ্টি মোকাবেলায় কৃত্তিম বৃষ্টি বা পানির ব্যবস্থা করেছে । পৃথিবীর খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়ে আজ ৭০০ কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে । আকাশ, মহাকাশ , হিমালয়ের চূড়া থেকে আটলান্টিকের তলদেশ সর্বত্র বিচরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে । জীবনুতত্ত্ব আবিষ্কার করে কলেরা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড , নিউমোনিয়া যক্ষ্মা ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিষেধক তৈরি করেছে । এক সময়ের মানুষের আতংক প্ল্যাগ ও গুটি বসন্তকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে । এখন ক্যান্সার নির্মুলের কাছাকাছি । মানুষের যে কোন অঙ্গ সং স্থাপন করে । যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সময়কেও জয় করে ফেলেছে । সেকেন্ডের কম সময়ে বিশ্বের যে কোন জায়গায় তথ্য আদান প্রদানের ক্ষমতা এখন মানুষের হাতের মুঠোয় । এখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবন ও জিনবিদ্যার প্রসার মানুষ অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে অপেক্ষা করছে । এ সবই মানব প্রজাতির জীবন যুদ্ধের এক একটি উদাহরণ ।
মানুষ পৃথিবীর ক্ষমতাধর প্রাণী হিসেবে আক্ত প্রকাশ করে সকল কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে ।
এই ক্ষমতার আংশিদার সকল মানুষ হবার কথা হলেও প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ শুরু করে গুটিকয়েক মানুষ ।প্রকৃতি থেকে সম্পদ আহরণ ও ভোগ নিশ্চিত করতে নিজেস্ব ব্যবস্থাপনা তৈরি করে । নিজের ক্ষমতার দম্ভ ও প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখার জন্য এবং অন্যের সম্পদ দখলে নেবার জন্য বরাবরের মতোই উগ্র হইয়ে উঠে । তার ছাপ রাখে ১ম ও ২য় বিশ্ব যুদ্ধে > এই উগ্রতার পরিণতি দেখে যুদ্ধুত্তোর মানুষ বেশ মানবিক হয়ে উঠে । মানবিক বিশ্ব সংস্থা গড়ে তোলে , সারা বিশ্বের মানুষের সকল সমস্যা এই বিশ্ব সংস্থা “র মাধ্যমে সমাধানের এক চুক্তিতে আসে । কিন্তু আবারো গত কয়েক দশকে মানুষ বিশেষ করে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা রাষ্ট্র আবারো ভিন্ন দিকে পরিচালিত হতে শুরু করে । মানব প্রজাতির জন্য কল্যাণ কর ও প্রয়োজনীয় গবেষণা কার্যক্রমের দিকে তেমন নজর না দিয়ে ভোগ বিলাস , চাকচিক্য , সৌন্দর্যের নামে শ্রেষ্ঠত্ব সৃষ্টি , অপ্রয়াজনীয় উৎসব ,অনৈতিক অর্থনীতির চর্চা ও প্রতিযোগিতা শুরু করেছে । এ কারণে আন্ত রাষ্ট্র সম্পর্কে ব্যবসায়িক মনোভাব বলে গড়ে উঠে , কৌশলী হয়ে উঠে । সোজা বাংলায় বলতে গেলে কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে সত্য বলে না , রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী , শিল্পপতি , সবাই সবার সাথে কৌশল করে । ট্যাকনিকাল আচরণ করে । এটা এখন সমাজের সবার জীবন যাপনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে । যে মানবিকতাবোধ মমত্তবোধ মানবজাতিকে একত্রে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করতো তা যেন বিলুপ্তির পথে । মানুষ তার শ্রেষ্ঠতর বা ক্ষমতার জৌলুষ যখন বল্গাহীনভাবে ভোগ করছে তখনই নতুন ভাইরাস কোভিড ১৯ এর আক্রমণ । মানুষের অহংকারে বিরাটবড় আঘাত করেছে । সারা পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছে । মানুষের বিশ্বায়ন থেমে গেছে এই অতিক্ষুদ্র ভাইরাসের কারণে । মানুষের জীবনাচরণে আনতে হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন । মানুষ মানুষের কাছে যাচ্ছে না , বুকে টেনে নেয় না কেউ ভালবেসে । হাতে হাত রাখে না মানুষ । শত বছর যাবত একত্রে প্রার্থনা করার প্রশান্তি মানুষ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে । শুধু বন্ধু নয় বাবা মা ভাই বোন পস্পরের কাছে যেতে পাচ্ছে না । সকল মানুষ ঘরে ঢুকে গেছে । অন্যন্য প্রাণীকে অহেতুক বন্দী করে রাখার কষ্ট বা জ্বালা কিছুটা হলেও মানুষ ভোগ করছে । মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তনের সুর লক্ষ করা যাচ্ছে । ভাবছে এই পৃথিবীর অন্যান্য অংশীদারের সাথে ভাগ করে চলতে হবে মানুষকে । প্রকৃতির সাথে যৌক্তিক আচরণ করতে হবে । মানুষ কে হতে হবে শুধু মানুষ মুখি নয় সমস্ত সৃষ্টিমুখী । মানুষকে হতে হবে বিজ্ঞান মনষ্ক ও যুক্তিবাদী।
আমার আস্থা মানুষের শক্তিতে । মানুষ আলোর পথের যাত্রী । অন্ধকার ভেদ করাই মানুষের ইতিহাস । আগুন আবিষ্কার থেকে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে মানুষ এগিয়ে চলেছে । শুভ বুদ্ধি, চিন্তা ও চেতনার জন্ম যুগে যুগে মানুষই দিয়েছে ।বিচ্যুতি সত্ত্বেও পৃথিবীর যত ইতিবাচক নীতি আদর্শ ও ব্যবস্থাপনা মানুষ ই করেছে । এই ভাইরাস নূতন কিছু নয় । আগে সে গুলো সম্পর্কে বলেছি । মানুষ ইতোমধ্যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে । ডাক্তার নার্স সাস্থকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন । সাপোর্ট সার্ভিসের মানুষও মানুষকে সামাজিক দুরুত্ব রক্ষা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য যারপর নাই কাজ করছে । প্রত্যেকটি রাষ্ট্র স্ব স্ব নাগরিকদের রক্ষায় কাজ করছে । মেডিসিন কম্পানী , বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানী,গবেষকগন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন । ইতোমধ্যে কভিড১৯ বৈশিষ্ঠ সম্পর্কে ধারনা পেয়েছেন । প্রতিষেধকের প্রাথমিক পরীক্ষা খুব শিগ্রই শুরু হবে আশা করি । আমাদের প্রয়োজন ধৈর্য ধারণ করা । আর কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া ।
১। করোনা ভাইরাস জনিত রোগ একটি চিকিৎসা বিষয়ক সমস্যা । এই সমস্যা বিজ্ঞান ভিত্তিক ,গবেষণার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে । অন্য কিছু বা পারলৌকিক কোন ক্ষমতা এর সমাধান দিবে না ।
২। এটি সারা বিশ্বের সমস্যা । প্রতিষেধক আবিষ্কারে সবার গবেষণার তথ্য উন্মুক্ত করা বা পারস্পারিক সহযোগিতা বাড়ানো । প্রতিযোগিতা বা পেটেন্ট এর চিন্তা প্কোনক্রমেই করা যাবে না । রাষ্ট্র সমূহের মধ্য বিদ্যমান বৈরী ভাব ত্যাগ করে সহযোগিতা করতে হবে।
৩ । রাষ্ট্রের কোন নির্দিষট সেক্টর নয় বরং আগামী তিন মাস শুধু সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অর্থ ও খাদ্য বণ্টন করতে হবে । এই বণ্টন ব্যবস্থায় কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে । সকল উচ্চবিত্তের অলস অর্থ সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিতে হবে ।
৪। ভোগ্য সকল পণ্যের উৎপাদন আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করতে হবে ।
৫ । পতিত সকল জমি সরকারী জিম্মায় এনে কৃষি পণ্য উৎপাদন কারীদের কাছে বণ্টন করে খুব শীঘ্রই উৎপাদনে যেতে হবে । সকল খাদ্যে সয়ংসম্পন্ন হতে হবে ।
৬ । মানব জীবনের জন্য আবশ্যকীয় খাত চিকিৎসা ও শিক্ষা খাত কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে ।
৭। আমি বিশ্বাস করি বরাবরের মতো মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধি , বিবেচনা , সহযোগিতা ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে করোনাকে ভরাভুত করবে । প্রজাতি হিসেবে মানুষ আরও বেশ কিছু কাল পৃথিবী তে দাপটের সাথেই থাকবে ।তবে নিজেদের অহংকার আর অহেতুক দম্ভ যদি বিবেচনা বোধ কে ছাড়িয়ে যায় তবে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে ।নিজের বা নিজেদের সার্থে সকল সম্পর্ক নির্ধারন ও পরিচালনা ত্যাগ করতে হবে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র কে । নিজেদের কোন সংস্কৃতি বা ধর্ম বিশ্বাস কে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের মানুষিক প্রতিযোগিতা বাদ দিতে হবে । সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।মানুষের বা সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর বৈজ্ঞানিক সকল কার্যক্রমকে বাধাহীন করতে হবে । মানুষকে বিজ্ঞানের ফসল ভোগকারী হিসেবে নয় বরং আক্ষরিক অর্থে বিজ্ঞান মনষ্ক করার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন করতে হবে । পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের মানুষের মনোজগতে ভোগ বিলাস ও আনন্দ বিষয়ে যে বিকৃতি লক্ষ করা যায় তা দুর করতে করতে হবে এবং এ গুলোর সাথে সম্পর্কিত সকল উপাদান উৎপাদন ও আয়োজন বন্ধ করতে হবে । প্রকৃতির সাথে বৈরিতা নয় বরং সখ্যতা পুর্ন সম্পর্ক স্থাপন এবং সে অনুযায়ী আচরণ করতে হবে বিশ্বকে । বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় মানব জাতির টিকে থাকার এই জীবন যুদ্ধকে নিজেদের যুদ্ধ বলে গ্রহণ করতে হবে । জাগতিক নিয়মে পৃথিবীর মৃত্যুমুখী যাত্রায় মানুষ কে টিকে থাকতে হলে মানুষকে আরও বৈরী আবহাওয়া , আরও উত্তপ্ত আবহাওয়ায় টিকে থাকার মতো ধীরে ধীরে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে জিনতত্ত্ব বা জিন বিদ্যা আমাদের নতুন কিন্তু শক্তিশালী সহনশীল মানুষ হয়ে উঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে । আমি আশা করি করোনা উত্তর পৃথিবী এক নুতন যুগে প্রবেশ করবে । এ যুগের নতুন নামাকরন হবে । মানুষের মনোভূমি ও চিন্তায় ব্যাপক পরিবর্তন হবে ।পৃথিবীতে মানুষের অবস্থান ও ক্ষমতা সম্পর্কে নুতুন উপলব্ধি জন্ম নিবে । পৃথিবীর মানুষের মধ্যে নতুন সম্পর্ক স্থাপন হবে । শুধু ব্যক্তি নয় রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের অহেতুক প্রতিযোগিতা নয় বরং সহযোগিতা ও সহমর্মিতা হবে সম্পর্কের ভিত্তি। আমরা একই প্রজাতির সদস্য। একই পৃথিবীর সন্তান। সকলের মৌল চাহিদা এক। এই পৃথিবীর কোন ক্ষতি মানব জাতির ক্ষতি । অন্যান্য সকল অংশীদারদের সাথে একত্রে বসবাস করতে হবে অহেতুক ক্ষতি না করে।
লেখকঃ মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী (কাজল ফারুকী), যুগ্ন সচিব(প্রশাসন), বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সাবেক জেলা প্রশাসক(ময়মনসিংহ)।
প্রকাশ- ১১ এপ্রিল ২০২০ ।