আজ বৃহস্পতিবার ১৪ শাবান, ১৪৪১ হিজরি, ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত, যা লাইলাতুল বরাত বা মুক্তির রজনী হিসেবেও পরিচিত। তবে হাদিস শরিফে এ রাতের পরিচয় হিসেবে বলা হয়েছে, লাইলাতুম মিন নিছফে শাবান অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা রাত জেগে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত, জিকির-আজকার, বিশেষ দোয়াসহ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এই রাতটি অতিবাহিত করে থাকেন। অনেকে গরিবদের মধ্যে হালুয়া-রুটি, মিষ্টি ইত্যাদি বিতরণ ও দান-সদকাহ করেন। নফল রোজা রাখেন। শবেবরাত উপলক্ষে পরদিন সরকারি ছুটি থাকে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছর ঘরে বসেই ইবাদত বন্দেগি ও দোয়া করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। শবেবরাত একটি ফারসি বাক্য। একে আরবিতে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। যার শাব্দিক অর্থ মাগফিরাত বা মুক্তির রাত। উপমহাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে শবেবরাত পালন করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করেন, মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, মানুষের ভাগ্য বরাদ্দ দেন।
হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, রাসূল (সা:) মধ্য শাবানের রাতে নফল নামাজ আদায় এবং দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের একটি সূরায় ‘লাইলাতুন মোবারাকাহ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে- ‘এটা সে রাত, যাতে প্রতিটি বিষয়ের বিজ্ঞতাপূর্ণ ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ করা হয়।’ (সূরা দুখান, আয়াত ৩ ও ৪ )। কোনো কোনো তাফসিরকারক এ আয়াতকে উদ্ধৃত করে মধ্য শাবানের রাতকে ‘লাইলাতুন মোবারাকাহ’ আখ্যায়িত করে সেটিকেই শবেবরাত বলে অভিমত দিয়েছেন।
হজরত ইকরামাহসহ কিছু তাফসিরকারকের মতে, পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ‘লাইলাতুন মোবারাকাহ’ দ্বারা শাবান মাসের মধ্যভাগের রাতকে (১৪ শাবান) বোঝানো হয়েছে।
অন্য দিকে হজরত ইবনে আব্বাস (রা:), ইবনুল উমার (রা:), মুজাহিদ (রা:), কাতাদা (রা:), হাসান বসরিসহ (রা:) বেশির ভাগ প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ ‘লাইলাতুন মুবারাকাহ’ বলতে লাইলাতুল কদরকে আখ্যায়িত করেছেন, যা রমজান মাসে আসে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা:) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন; কিন্তু উম্মতকে এ মাসে বেশি রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করেছেন, যাতে রমজানের জন্য তারা সতেজ থাকে। অবশ্য তিনি মধ্য শাবানের রাতে নামাজ আদায় করা ও দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। (ইবনে মাজা : কিতাবুল ইকামা)।
শবেবরাত উপলক্ষে প্রতি বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররমে আলোচনা, মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে এলেও এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘরে বসে শবেবরাতের ইবাদত বন্দেগি করা এবং করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কবরস্থান ও মাজার জিয়ারাতে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। শবেবরাতের রাতে আলোকসজ্জা, ফটকা ফোটানোর মতো আয়োজন আলেমদের মতে বিদায়াত।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র শবেবরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে গতকাল দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মানবজাতির জন্য সৌভাগ্যের এই রজনি বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এ রাতে আল্লাহপাক ক্ষমা প্রদর্শন এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’ তিনি বলেন, ‘রহমতের এই রাত আমাদের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের বার্তা বয়ে আনুক- এ প্রার্থনা করি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমিন।’