বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় তৈরি করা করোনাভাইরাস থেকে দেশের অর্থনীতি ও দেশের জনসাধারণের রক্ষার জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, আমাদের প্রদত্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির ৩ শতাংশ অর্থ সমন্বয়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল ঘোষণা করতে হবে। লকডাউন অবস্থা প্রত্যাহার হলে নতুন করে একটি সংশোধিত আর্থিক প্যাকেজ প্রদান করতে হবে যেন সব সেক্টরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাধারণ-ছুটিপূর্ব স্তরে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার এক সাম্প্রতিক ভাষণে গার্মেন্টসসহ রফতানি শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদির খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। রফতানিমুখি শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতনের হিসাব নিলে এ প্রণোদনার পরিমাণ যথেষ্ট নয় বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, দৈনিক মজুরিভিত্তিক গ্রুপ, অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টর, আত্মকর্মসংস্থানকারী, গ্রামীণ ভূমিহীন কৃষক, কৃষি শ্রমিক, মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স, গণপরিবহন শ্রমিক, রোডড সাইড ভেন্ডর, সকাল-বিকেল ভিন্ন জায়গায় কাজ করে উপার্জনকারী গ্রুপসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দ্রুত সাহায্য পৌঁছাতে হবে। মহামারীর কারণে ঘোষিত লকডাউনে কর্মহীন হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনতিবিলম্বে এদের মুখে খাবার তুলে দেয়া অপরিহার্য। এদের কারো কারো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলেও অনেকেরই নেই। হানীয় প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে এদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে চাল-ডাল, লবণ-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি ও জটিলতা এড়াতে পণ্যসামগ্রীর পরিবর্তে নগদ অর্থ দিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনার আঘাত আসার আগেই বাংলাদেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর, নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিয়ে বিশেষজ্ঞমহল উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যাংকিং খাত। লাখো কোটি টাকার উপর খেলাপি ঋণ। পরিচালক ও ব্যাংকার মিলেমিশে ব্যাংক লুট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল অর্থ লোপাট, মেগা প্রকল্পের প্রকল্পব্যয় অযথা বৃদ্ধিসহ নানা উপায়ে বিরাট অংকের দুর্নীতি, প্রতি বছর লাখো কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বিদেশে পাচারসহ আকণ্ঠ দুর্নীতি উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। এখন তা আরো ঘনীভূত হবে। আমদানিও নিম্নমুখী। রেমিট্যান্স প্রবাহ জানুয়ারিতে নেমে গিয়েছিল ২.৬০ শতাংশে। অর্থনীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুঁজিবাজার ইতিহাসের সর্বনিম্ন সূচকে নেমে এসেছে। বেকারের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।
রাজস্ব সংগ্রহে ভাটা চলছে। সারা বছর যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংক খাত নেয়ার কথা, প্রথম ৪/৫ মাসেই তার চেয়ে অধিক অর্থ সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। বিনিয়োগের ধারা ঋণাত্মক পর্যায়ে নেমে এসেছে। এক কথায় গোটা অর্থব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বৈষম্যমূলক তথাকথিত উন্নয়ন, সুশাসনের অভাব এবং আইনের শাসনের অভাবের ঠিক এই সময়ে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের ছোবল। এই মহামারি থেকে বেরুতে হলে সকারের পক্ষ থেকে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।