ব্রাজিলের আমাজন নদী অববাহিকার রেইনফরেস্ট গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি হারে উজাড় হয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা গেছে।
আমাজন রেইন ফরেস্ট বা চিরহরিৎ বনের প্রায় ৭, ৯০০ বর্গ মাইল এলাকা যা কি-না লন্ডন শহরের চেয়েও অন্তত ৫ গুণ বড়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত।
অবৈধভাবে গাছ কাটাকেই এর অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রী এডসন ডুয়ার্ট।
দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারোর কিছু নীতির কারণেই বনাঞ্চল হ্রাসের হার উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় মি. বোলসোনারো বনাঞ্চলের ক্ষতির জন্যে জরিমানা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর সেই সাথে পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে করেছিলেন সীমিত।
রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সহকারী এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়কে একীভূত করা হবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন এই নিবিড় বনভূমি এসব কারণেই বিপন্ন।
সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য মতে, দেশটির মাতো গ্রসো এবং পারা রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বনভূমি ধ্বংসের মুখোমুখি। আর এই হ্রাসের হার গত বছরের তুলনায় ১৩.৭ শতাংশ বেশি।
এই মাতো গ্রসো হলো ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চল, আর সমালোচকদের মতে এ কারণেই এ অঞ্চলের রেইনফরেস্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে মি. ডুয়ার্ট দোষারোপ করেছেন অবৈধভাবে গাছ কাটার একটি ‘সংঘবদ্ধ চক্রের উত্থান’কে। আর সেই সাথে মনে করেন দেশটির উচিৎ ‘পরিবেশগত সীমা লঙ্ঘন পরিহার এবং জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার টেকসই সমাধানে’ যাবার।
বনভূমি উজাড় পর্যবেক্ষণ প্রকল্প ‘প্রোডাস’ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য থেকে তারা বার্ষিক জরিপ করেছে।
বনভূমি হ্রাসের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে, এই বনাঞ্চল হ্রাসের হার তার আগের ১২ মাসের তুলনায় ১৬শতাংশ কমেছিল। ২০০৪ সালে এই হার কমেছিল ৭২ শতাংশ, সেসময় ব্রাজিলের ফেডারেল সরকার বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
সেসময় হাইতির সমপরিমাণ বনাঞ্চল যার আয়তন ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি- ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।
আমাজনের এই অঞ্চলটিতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরহরিৎ বনাঞ্চল অবস্থিত। আর এই সুনিবিড় বনভূমিতে এখনো এমন সব উদ্ভিদ আর প্রাণীর প্রজাতি আছে যা রয়ে গেছে মানুষের জানাশোনার বাইরে। গবেষকরা প্রতিনিয়তই নতুন কোনো জীব খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
আর এই রেইনফরেস্টের বেশিরভাগই- লাখ লাখ বর্গ কিলোমিটার অংশ ব্রাজিলের অভ্যন্তরে। যেখানে এখনো ১৯৬৫ সালের আইন প্রচলিত। যার অধীনে ভূমির মালিকেরা তাদের জমির কিছু অংশে বনায়ন করতে বাধ্য।