করোনা প্রভাবে উর্ধ্বমুখী ময়মনসিংহের নিত্যবাজার

করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে। তার ধারাবাহিকতায় থেমে নেই ময়মনসিংহের বাজারগুলোতেও। হঠাৎ করে শহর এবং গ্রাম্য বাজারগুলোতে কেনা-কাটায় ভীড় চোখে পড়ার মতো। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে মজুদ করে রাখছে মানুষ। যদিও গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অতিরিক্ত কেনাকাটা না করতে নিষেধ করেছেন সবাইকে। কিন্তু মানুষ সেটিকে আমলে নিচ্ছেনা, এই সুযোগে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আজ শুক্রবার (২০ মার্চ) ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। পাইকারী বাজারে একপাল্লা পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকা। যা দুদিন আগেও ছিল ২০০-২২০ টাকা পাল্লা।  আর খুচরা বজারে প্রতি কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা।  তার মানে দু’দিনের ব্যবধানে পাল্লা প্রতি দাম বেড়েছে ১৫০-৩০০ টাকা আর কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৩০-৬০ টাকা করে।

মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৫-৮ টাকা করে। আর বস্তা প্রতি এর দাম বেড়েছে ২৫০-৪০০ টাকা। আলুর দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ টাকা। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১০০-১৬০ টাকা। যা দুদিন আগেও ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি। হঠাৎ করে এই দাম বেড়ে যাওয়া কেন জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জের একজন পাইকারী চাল বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে ক্রেতার বেশি বেশি চাল কিনে মজুদ রাখছে। এ সুযোগে পাইকারী বিক্রেতার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ দেশের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে রয়েছে। সামনে কী হয় না-হয় এ নিয়ে তারা শঙ্কা এবং হতাশার মধ্যে আছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই দিনের ব্যবধানে দাম সবচেয়ে বেড়েছে চাল এবং পেঁয়াজের। আলু, ডিম, ডাল, খোলা সয়াবিন, পামতেলের দামও বড়েছে। তাছাড়া বিদেশি শিশুখাদ্য ও ডায়াপারের দামও বাড়তি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।  করোনার প্রভাব বাড়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন স্যানিটাইজেশন, জীবাণুনাশকের দাম তো আগে থেকেই বেড়ে গেছে।

হঠাৎ এমূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে দ্বিগুবাবুর বাজারের একজন পাইকারী বিক্রেতা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে বাইরের থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ। তাছাড়া চট্টগ্রামের পাইকারী বাজারেও এর দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হয় তাই এর দাম বেড়েছে

বাজারে চালের সরবরাহ কেমন রয়েছে এমনটা জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, এখন চালের মৌসুমের শেষ সময়। কিছুদিন পরে নতুন চাল উঠবে। হঠাৎ বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই সুযাগে দেশের বড় বড় পাইকার যারা, তারা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে। তখন আমাদের কাছে যা মজুদ আছে সেগুলো বিক্রি হয়ে গেলে বেশি দামে কিনতে হবে এবং বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। এটা আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে।’

তারা জানান, মিল-মালিকদের অনেকেই নতুন সরবরাহের আদেশ নিচ্ছেন না। ফলে বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পাড়ে। তাই আগমী এক সপ্তাহে যে চালের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে-এ নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চাল ব্যবসায়ীরা।

অন্য একজন বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন ভিন্ন কথা। হেসে হেসে তিনি বলছিলেন ‘এই যে আপনাদের কারণে দাম বেড়ে গেল। গত দুই দিন ধরে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেশি, বিক্রিও বেশি। তাই এর দাম কিছুটা বেড়ে গেলেন।

নিত্যপণ্যের বাজারের এমন উর্ধ্বমুখী গতি করুণ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ময়মনসিংহের নিম্ন মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারগুলোতে।

এদিকে ঈশ্বরগঞ্জে নিত্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের ভোগান্তি দেয়ায় শুক্রবার বিকেলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে অসাধু ৫ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে।

 তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ৪৫ টাকা কেজি দরে তিন দিন আগেও পেঁয়াজ বিক্রি হলেও শুক্রবার ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। কৃত্রিমসংকট দেখিয়ে চালের বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বাড়ানো হয়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীন অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি করায় ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারে মো. হাসান মিয়াকে ১০ হাজার টাকা, অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় আড়ৎ মালিক মাসুদ মিয়াকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারে অভিযান শেষে আঠারবাড়ি রায়ের বাজারে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় ব্যবসায়ী লিটন দাসকে ১০ হাজার টাকা, আল আমিনকে ৩ হাজার টাকা, আবদুস ছাত্তারকে ১০ হাজার জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দ্রব্য মূল্যে দাম বাড়িয়ে দেয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ভবিষ্যতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

Share this post

scroll to top