স্বাধীনতার পথ ধরে

লিখেছেন:____তাশরীফাহ্ বিনতে মুঈন

আমি স্বাধীন,
অথচ,দেখা হয়নি স্বাধীনতা,
কিংবা স্বাধীন পতাকা,
শুনেছিলাম,
অবারিত সবুজের মাঝে,
শত সহস্র বুকের রূধির রঞ্জিত বৃত্ত দিয়ে সৃষ্টি,
স্বাধীন পতাকা,
আমি সেই থেকে,
উন্মুখ হয়ে থাকি,
স্বাধীনতা দর্শনের নিমিত্তে,
তারপর একদিন,
স্বাধীনতার অন্বেষণে
ছুটে চললাম পথে,প্রান্তরে,

একটিবার স্বাধীনতাকে জানতে,
একটিবার স্বাধীনতাকে দেখতে,
কি যে অস্থিরতা!
কি যে ব্যকুলতা!

অতঃপর যখন হতাশ হয়ে ঘরে ফিরবার সময়,
তখনি আমার সম্মুখপান দিয়ে,
ছুটে গেলো এক উচ্ছ্বাসিত কিশোরী,
এক গুচ্ছ শাপলা ফুল মুঠোয় ধরে,
যেনো ছুটছে সে,গন্তব্যহীন দিগন্তের পানে,
হঠাৎই মনে হলো আমার,
এইতো!
এইতো স্বাধীনতার প্রতীক!

বাতাসে তার শাড়ির আঁচল উড়ছে,
উদ্দাম উড়ছে,
চারিপাশে সবুজ,কেবল মাঝখানে লাল বৃত্ত,
মনে হলো আমার,
এইতো বিজয় কেতন!
এইতো স্বাধীনতার ধ্বজা!
স্বাধীন পতাকা!

কি নির্ভীক হাসিতে রাঙ্গানো তার মুখখানি!
কি অনাবিল মুগ্ধতা!
কি দুরন্ত চাঞ্চল্যতা!
মেখে আছে তার চাহনি,
একেইতো বলে স্বাধীনতা!
এইতো স্বাধীনতা!

আমি স্বাধীনতাকে চিনেছি,
স্বাধীনতাকে দেখেছি,
সুর বোনা পাখিদের ডেকে বলি তাই,
তোমরা স্বাধীন,
আজ তাই স্বাধীনতার গান ধরো,
তারা নির্বাক থাকে।
আমি আকাশকে ডেকে বলি,
তুমি স্বাধীন,
তাই নবীন আলোয় সাজো,
সূর্যকে বলি,
তুমি স্বাধীনতার রঙ্গে তোমার কিরণ রাঙ্গাও,
সে মেঘের আড়ালে লুকায়,
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন সাজে।

আমি মেঘমৌলি গগণ আর নির্বাক পাখিদের সনে,
একরাশ অভিমান নিয়ে যে পথে স্বাধীনতাকে দেখেছি,
সে পথে প্রত্যাবর্তন করি।
আমি আবারো স্বাধীনতাকে হন্য হয়ে খুঁজি,
কিছু দূর যেতেই আমি সেই কিশোরীকে দেখি,
কিন্তু স্বাধীনতাকে দেখি না,
নাহ্ ছুটছেনা আর সে দূর দিগন্তে,
দাঁড়িয়ে আছে স্থির।
ছিন্ন বিভক্ত আঁচল তার,
উড়ছে না উদ্দাম, বাতাসে,
নুইয়ে আছে যেনো,
পরাধীনতার বিষম ভারে।
শূণ্যতায় হাহাকার করছে তার দুহাতের মুঠো,
নেই সেই শাপলা গুচ্ছ,
হয়তো! এই পরাধীন বিথীকার কোন এক অংশে,
শত পদাঘাতে পিষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
ত্রস্ত,শঙ্কিত তার চাহনি,
যেনো বারবার, প্রশ্ন তুলছে,
এতো বিনিময়ে লব্ধ যে স্বাধীনতা!
কি করে সাজে সে মরিচীকা?

তার এলোকেশ,পাগলিনী বেশ,
বলে দিলো আমায়,আজ ও স্বাধীনতা নিরুদ্দেশ।
আজ ও স্বাধীনতার সুর বাজেনি বেহালায়,
আজও স্বাধীনতারা রাঙ্গেনি কিরণমেলায়।

হে স্বাধীনতা!
আমি তাই কবিতায়,
তোমাকে, খুঁজে নেই,
প্রতিটি কবিতার জন্মসূত্রে,
আমি বারবার, অনিবার,স্বাধীন হই।
আমি কবিতায়,
কভু সাজতে দেই না তোমায়,
“মরিচীকা ”

আমি কবিতায়,
কভু ছিন্ন হতে দেই না,
সেই কিশোরীর আঁচল,
আমি অখিলের সবুজ এনে জড়ো করি,
সেই আঁচলে,
রক্তিম আভা আছে যতো,সব দিয়ে আঁকি বৃত্ত,
সবুজের মাঝখানে।
আমি অক্ষুণ্ণ রাখি তাকে,
বিজয় কেতন রূপে।

আমি কবিতায়,
কভু বিলীন হতে দেই না
কিশোরীর সেই হাসি,
আমি তার হাস্যোজ্জল মুখশ্রী,
প্রত্যহ প্রত্যুষে,
স্বাধীনতার আকাশে নবীন সূর্য রূপে উদিত করি,
ঘাসের ডগায় ডগায়,
জমে থাকা অজস্র শিশির কণায়,
আমি সেই নবীন ভাস্করের অগণিত প্রতিবিম্ব সাজাই।

অতঃপর,
আমি কবিতায়,
দিগন্তে ছুটে চলি,
বিজয় কেতন উড়িয়ে,
সরিষা ক্ষেতের সরু আল ধরে চলতে চলতে,
হলদে রাঙ্গা সরিষা ফুলের কানে কানে,
সেই সুর বোনা,
গান গাওয়া,
পাখিদের ডেকে ডেকে,
বলি,দেখো!
ওই দেখো!
সূর্য উঠেছে,
স্বাধীনতার নবীন সূর্য।

এভাবেই কবিতায়,
দিনের শেষে রাত্রির কূল জুড়ে,
অজস্র আধারের ভীড়ে,
আলো ছড়ানো কিছু জোনাকিদের মৃত স্বপ্নের শহরে,
লাশের স্তুপাকারে রঁজিত রাজপথ পেরিয়ে,
আমি নির্বাক হেটে চলি ভোরের দুয়ারে,
একটি স্বাধীন সূর্যের উষশী আলোক প্রভায়,
জীবনের কত স্বাদ মিশে রয়!!
আমায়, হাতছানি দিয়ে ডেকে যায়,
অকুণ্ঠিত চিত্তে, অজস্র প্রাণোচ্ছল স্বপ্নে নেত্রদ্বয় সাজে,
এভাবেই স্বপ্নের ক্যানভাসে,
কিংবা কবিতায় কবিতায়
ছুটে চলি প্রত্যহ আমি স্বাধীনতার পথ ধরে।

 


                        

Share this post

scroll to top