গাজীপুর সদর থানার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ন্যাশনাল পার্কের ৪ নম্বর গেইট থেকে গত ৪ মার্চ সকালে পুলিশ এক যুবক (৩৮) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত পরিচয়ে তার মৃতদেহ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কর্তৃক (বেওয়ারিশ হিসেবে) দাফনের ৭ দিন পর বুধবার রাতে পিবিআই গাজীপুর ওই যুবকের পরিচয় সনাক্ত করেন।
পরিচয় সূত্রে জানা যায়, ওই যুবক গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত (কনষ্টেবল নং-৬২৩) পুলিশ সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম। সে মুক্তাগাছা থানাধীন শহর ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিনের ছেলে। এঘটনার পর থেকে গাজীপুর পুলিশ বিভাগে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত কনষ্টেবল শরিফুলের পিতা পুলিশ কনষ্টেবল আলাউদ্দিন কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমার দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে শরিফুল মেজো। সে পুলিশ বিভাগে ট্রাফিকের কনষ্টেবল হিসেবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী ট্রাফিক জোনে কর্মরত ছিলো। কে বা কারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে জানি না।
তিনি আরো বলেন, গত ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ রোড়ে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় সড়ক দূর্ঘটনায় সে গুরতর আহত হয়। পরে সে ২১ দিন সরকারী ছুটি নিয়ে চিকিৎসা শেষে গত ২ মার্চ গাজীপুর রির্জাভ অফিসে গিয়ে যোগদান করার পর টঙ্গী পূর্ব থানা ভবনের ৪ তলায় ঘুমিয়েছিলো।
পরদিন ৩ মার্চ কাজে যোগদানের কথা থাকলেও যোগদান করেনি। ওইদিন থেকেই সে নিখোঁজ ছিলো।
এ ব্যাপারে আমি গত ৯ মার্চ টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করি। গত বুধাবর রাতে খবর পাই গত ৪ মার্চ ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ থেকে গলাকাটা অজ্ঞাত নামা যুবকের লাশটিই আমার ছেলে শরিফুলের। লাশটি বেওয়ারীশ হিসেবে আঞ্জুমানের কবর দেয়া হয়েছে। ওই কবর থেকে আমার ছেলের লাশ উঠিয়ে আমার ত্রিশালের জিলকী গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে দাফন করতে আদালতে আবেদন করেছি।
গাজীপুর সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞা জানান, লাশটি গত ৪ মার্চ ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ন্যাশনাল পার্কের ৪ নম্বর গেইটের সামনে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কর্তৃক (বেওয়ারিশ হিসেবে) দাফন করা হয়। নিহতের গলায় নাইলনের দড়ি পেঁচানো ও গলার অধিকাংশ কাটা ছিল।
নিহতের পরনে নীল রংয়ের জিন্সের প্যান্ট ও কালো রংয়ের উপর সাদা ডোরা কাটা টি-সার্ট ছিল।
এছাড়াও লাশের কপাল, বাম হাত, বাম পা ও বাম কানসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে, গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে ও কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। লাশটি উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলা নিহতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে তদন্তে মাঠে নামে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুরের তদন্তে গত বুধবার রাতে নিহত যুবকের পরিচয় বেরিয়ে আসে। এঘটনার পর থেকে গাজীপুর পুলিশ বিভাগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রজু হয়েছে।
হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে গাজীপুর মেট্রো পলিটন পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সদর থানা পুলিশ মাঠে কাজ করছে বলেও অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞা জানান।