সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হলো পাঁচ সৌদি কর্মকর্তার। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের সরকারি আইনজীবীর দপ্তর সূত্রে এমনটাই জানানো হয়েছে। তবে, এই হত্যাকাণ্ডে সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছে সরকারি আইনজীবীর দপ্তর।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে দপ্তরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসের ভিতর খাশোগির দেহ অ্যাসিড দিয়ে গলানোর ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না যুবরাজ। কিন্তু, তার লাশ যে দূতাবাসের ভিতরেই অ্যাসিড দিয়ে গলানো হয়েছিল, তা এদিন কার্যত মেনে নিয়েছে রিয়াদ এদিন আরো একটি নতুন তথ্য দিয়েছেন সরকারি আইনজীবীর মুখপাত্র। তিনি জানিয়েছেন, অ্যাসিড দিয়ে গলানোর পর খাশোগির লাশ দূতাবাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক এজেন্টের হাতে দিয়ে দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, খাশোগিকে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন সৌদির গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি চিফ জেনারেল আহমেদ আল-আসিরি। এবং ইস্তাম্বুলে উড়ে যাওয়া ‘মধ্যস্থতাকারী দলের প্রধান’ই খাশোগিকে হত্যার চূড়ান্ত নির্দেশটি দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর শেষবারের মতো দেখা মিলেছিল সাংবাদিক জামাল খাশোগির। সামনেই ছিল তার বিয়ে। সেজন্য কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি খাশোগির। এমনকী, মেলেনি তার লাশও।
এই ঘটনায় প্রথম থেকেই সৌদি আরবের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। প্রাথমিকভাবে বারংবার সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয় রিয়াদ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান এই হত্যাকাণ্ডের জন্য রিয়াদ সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে দায়ী করেন। অপরদিকে, এই ঘটনায় পিছনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তুরস্কের কয়েকজন কর্মকর্তা।
ঘটনার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও খাশোগির লাশ না মেলায় মুখ খোলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের পরামর্শদাতা ইয়াসিন আকতা। তিনি জানান, খাসোগির লাশ অ্যাসিডে গলিয়ে ফেলা হতে পারে। ঘটনার তদন্তে নেমে ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের নর্দমা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। সেই নমুনায় অ্যাসিডের অস্তিত্ব মিলেছিল। এরপরেই গত সোমবার তুরস্কের কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ লোপাট করতে দু’জন বিশেষজ্ঞকে ইস্তাম্বুলে পাঠায় সৌদি আরব।
চলতি সপ্তাহেই তুরস্কের কর্মকর্তা সাবাহ্ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি রিপোর্টকে স্বীকৃতি দিয়ে জানান, হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য সৌদি আরব যে দল পাঠিয়েছে, তাতে রয়েছেন রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ আহমেদ আবদুলাজিজ আল-জানোবি এবং বিষ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ খালেদ ইয়াহা আল-জাহরানি। সংবাদপত্র সূত্রে আরো জানা গেছে, গত মাসের ১১ তারিখ ইস্তানবুলে পৌঁছনোর পর থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত তদন্তকারী দলের সদস্যরা প্রতিদিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র এক দিন (১৫ অক্টোবর) সাংবাদিক খাশোগিকে দূতাবাসে খোঁজার জন্য তুরস্কের পুলিসকে অনুমতি দিয়েছিল রিয়াদ।