ময়মনসিংহে এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে পুলিশে নির্যাতনের পর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় এক ভাঙ্গাড়ী ব্যবসায়কে বিনা পড়োয়ানায় আটকের পর নির্যাতন চালিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। জামিনে বের হওয়ার ৬ দিন পর মারাত্বক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান আলতাফ আলী। নিহত আলতাফ আলী মুক্তাগাছা উপজেলার জামগড়া ইউনিয়নের আহাদ আলীর ছেলে।
অভিযোগে জানাযায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী আহাদ আলী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক কিলোমিটার দূরে এক আত্বীয়ের বাড়িতে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। আধা কিলোমিটার যেতেই মুক্তাগাছা থানার এসআই হামিদ ও খায়ের আলতাফ আলীকে আটক করে। কি জন্যে আটক করা হয়েছে তা জানতে চাইলে সাথে সাথেই লাঠি দিয়ে মারাত্বকভাবে পরিবারের সদস্যদের সামনেই গুরুতর আহত করে। তারপর নিয়ে যায় থানায়। সেখানে নিয়ে তিনদিন পর্যন্ত তার উপর অমানিুষিক নির্যাতন চালায় বলে পরিবারের সদস্যরা জানায়। আটকের তিনদিন পর কোর্টে গাছ কাটা মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করে। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে জামিন চাওয়া হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট সার্বিক দিক বিবেচনা করে গত ৫ মার্চ তাকে জামিন দেন। জামিন পাওয়ার পর মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নেয়ার পরও সুস্থ না হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ছেলে আরিফ ময়মনসিংহ লাইভকে জানান, আমাদের চোখের সামনেই বাবাকে আটকের পর যেভাবে পিঠানো হয়েছে তা চোখে ভাসলে মরে যেতে ইচ্ছে করে। ছোটছোট গাছের ঢাল দিয়ে যেভাবে নির্যাতন করেছে , আমাদের মনে হলো আমাদের বাবা তখনই শেষ। স্থানীয় বখাটে, জুয়ারি ও কঙ্কাল ব্যবসায়ী আজহার, সিরাজ ও সাইদুলের কথায় গত ২৮ ফেব্রয়ারী মুক্তাগাছা থানার এসআই খায়ের ও হামিদ তার পিতা আলতাব হোসেনকে ধরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে স্থানীয় একটি জঙ্গলে গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে ফোলা জখম করে। এরপর চাচা ও তার স্ত্রীর কাছে ৮৫ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করে পুলিশ। হতদরিদ্র পরিবারটি টাকা দিকে অপারগতা প্রকাশ করায় মুক্তাগাছা থানায় ৩ দিন আটকে রেখে বেধড়ক পিটিয়ে ও অমানসিক নির্যাতন করে সমস্ত শরীর থেতলে দেয়। এরপর আলতাবকে গাছ কাটা মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করলে গত ৫ মার্চ জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ী ফিরে। এরপর থেকে সে অসুস্থ্য জীবনযাপন করে।
এদিকে কবিরাজিসহ স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করায় পরিবার। কিন্তু বুধবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার স্থানীয় একজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা সুদে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু পথিমধ্যেই সে মারা যায়। পরে তাকে মুক্তাগাছা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দেয়। পরে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে পুলিশি বিচারের দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়।
একটি কল রেকর্ডে শুনা যায়, অভিযুক্ত এসআই খায়ের মুক্তাগাছার ওসি তার খুব কাছের লোক বলে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে ৮৫ হাজার টাকা চায়। পরিবার এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারের অন্য সদস্যদের আরো ৭-৮টি মামলায় ফাঁসানোরও হুমকি দেন এসআই খায়ের। তার ক্ষমতার বাহাদুরিও প্রকাশ করেন রেকর্ডে।
এব্যাপারে মুক্তগাছা থানার ওসির সাথে বারবার ফোনে যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি।