জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে আজ মঙ্গলবার (১০ মার্চ) এ রায় দেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে রায় বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে অভিমত দেন হাইকোর্ট। এতে ১৬ ডিসেম্বর থেকে সব জাতীয় দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করা উচিত বলে অভিমত দেওয়া হয়। আদালত বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে হবে। আমরা এভাবেই রায় দেব। এটি আমাদের অভিমত।
আদালত বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’-এ ধরনের স্লোগান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের জন্মের সঙ্গে যে স্লোগান, তার কোনো পরিবর্তিত রূপ হতে পারে না। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই অভিমত ব্যক্ত করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদের করা এক রিট আবেদনে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ, আইন ও শিক্ষা সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরপর ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর এক আদেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিয়ে সরকারের বক্তব্য ও রাষ্ট্রীয় নীতি জানতে চান। এর ধারাবাহিকতায় দুই বছর আগে জারি করা রুলের ওপর শুনানি হয়।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘জয় বাংলা’ ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া হয়। এই স্লোগান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক হীনমন্যতা থেকেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। তিনি বলেন, এটি কোনো সাধারণ স্লোগান নয়। এটি একটি চেতনা। এই চেতনাকেই ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়েই বাঙালি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমাদের সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সন্নিবেশিত করা হয়। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী আদালতের আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা নয়। তিনি বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই স্লোগান সম্পর্কে জানাতে হবে। এটা আমাদের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের শক্তি।
আদালত বলেছিলেন, পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশে একমাত্র স্লোগান হওয়া উচিত ‘জয় বাংলা’। এর কোনো বিকল্প হতে পারে না।
আদালত আরো বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’-এটি কেন? দেশের জন্মের সঙ্গে যে স্লোগান তার কোনো পরিবর্তিত রূপ হতে পারে না। স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে এই স্লোগান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই স্লোগান ব্যবহারে আমাদের মধ্যে দ্বিধা কোথায়? এই স্লোগান অস্বীকার করার উপায় নেই।