রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিচেলি ব্যাচিলেট। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন করা হলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হবে এবং রোহিঙ্গাদের জীবন ও স্বাধীনতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
গত রাতে জেনেভা থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে ব্যাচিলেট এ অভিমত ব্যক্ত করেন। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রত্যাবাসনের জন্য দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, উদ্বাস্তুরা বারবার জানিয়েছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মিয়ানমার ফিরতে চান না। প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত অনেক রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধান হচ্ছেন নারী বা শিশু। উত্তর রাখাইনে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অব্যাহত ঘটনার খবর হাইকমিশন পাচ্ছে। এর মধ্যে হত্যা, গুম, নির্বিচার আটকের পাশাপাশি চলাফেরার স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে। মধ্য রাখাইনে এক লাখ ৩০ হাজার অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ (আইডিপি) ক্যাম্পে বন্দী অবস্থায় রয়েছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই রোহিঙ্গা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে পাঁচ হাজার এবং সিটওয়ের অং মিনগালার ওয়ার্ডে চার হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। এসব রোহিঙ্গার ওপর ব্যাপকভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রত্যাবাসনে বাধ্য করা হলে রোহিঙ্গারা আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে। কক্সবাজারে দু’জন বৃদ্ধ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
হাইকমিশনার বলেন, আশু প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ও অস্থিরতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। রোহিঙ্গাদের জোর করে বহিষ্কার বা ফেরত পাঠানো শরণার্থী বিষয়ক মৌলিক নীতির পরিষ্কার লঙ্ঘন। এ নীতি অনুযায়ী দমন-পীড়ন বা জীবনের ওপর গুরুতর হুমকি রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন করা যায় না।
হাইকমিশনার বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন মানবতার প্রতি অপরাধ এবং সম্ভবত গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে। এসব অপরাধীর জবাবদিহিতায় আনার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানো তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চক্রের মধ্যে আবারো নিক্ষেপ করা হবে, যার দুর্ভোগ তারা দশকের পর দশক ধরে সয়ে আসছেন।